রস, রসিক আর রসগোল্লা। সাদা তুলতুলে রসগোল্লার রসের সঙ্গে বাঙালির নাড়ির টান বেশ মাখোমাখো। বহু টালবাহানার পর, অবশেষে গত বছর ১৪ নভেম্বর রসগোল্লার ‘মালিকানা’ পেয়েছে বাংলা। ওইদিনই রসগোল্লার জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই তকমা জুটেছিল বাংলার কপালে। এ বছর সেই দিনটিকে বিশেষ ভাবে উদযাপন করতে চলেছে রাজ্য।
নিউটাউনের ইকো পার্কের মিষ্টি হাবে আগামী ১৪ নভেম্বর রসগোল্লা উৎসব করবে হিডকো। সেখানে হরেক রকমের রসগোল্লা যেমন থাকছে, তেমনই রয়েছে রসগোল্লাকে ঘিরে নানা প্রতিযোগিতা, ক্যুইজ ও মনোজ্ঞ আলোচনা। অর্থাৎ শুধু রসগোল্লা নিয়েই দিনভর এক জমজমাট উৎসব। ওই উৎসবে যেমন হাজির থাকছে শহরের নামজাদা মিষ্টান্ন সংস্থাগুলি, তেমনই পসরা সাজিয়ে সেখানে থাকার কথা জেলার মিষ্টি বিক্রেতাদেরও।
হিডেকো চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন জানিয়েছেন, ইকো পার্কের মিষ্টি হাবে হওয়া ওই উৎসবে রসগোল্লা নিয়ে নানা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করবেন তাঁরা। বেকড রসগোল্লা যেমন থাকছে, তেমনই থাকছে রংবেরঙের রসগোল্লা। মিষ্টি হাবের বাইরে স্টল করে যাতে জেলার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদেরও জায়গা করে দেওয়া যায়, তার জন্য পরিকাঠামো গড়ে দেবে হিডকো।
রসগোল্লা, তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? গতবছর এ নিয়েই বিস্তর দড়ি টানাটানি চলে বাংলা ও উড়িষ্যার মধ্যে। কারণ, ২০১৪ সাল থেকে রসগোল্লাকে নিজেদের মুঠোয় আনার চেষ্টা চালাতে শুরু করে উড়িষ্যা সরকার। ২০১৫ সালে উল্টোরথের দিন সেখানে রসগোল্লা দিবসও পালিত হয়।
কিন্তু রসগোল্লা যে বহুযুগ ধরেই বাঙালির মজ্জায় মিশে রয়েছে। তাই রসগোল্লা নিয়ে উড়িষ্যার এই ‘দাদাগিরি’কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য। গবেষক হরিপদ ভৌমিকের তথ্যের উপর ভিত্তি করে রাজ্য সরকার জানিয়ে দেয়, রসগোল্লা বাংলার, আর কারও নয়। হরিপদবাবুর কথায়, রসগোল্লার প্রধান উপকরণ ছানা। এই শব্দটি বাংলার নিজস্ব শব্দ। বিক্রমাদিত্যের রাজসভায় তৈরি হওয়া অমরকোষে উল্লেখ আছে আমিক্ষা বা দধিকুর্চিকার। যা আদতে ছানা হলেও, ‘ছানা’ শব্দটি তখন ছিল না। দই দিয়ে যে দুধ কাটানো হয়, তা তো নষ্ট দুধ। নষ্ট হয়ে যাওয়া দুধ কোনও দেবতার পুজোয় সমর্পণ করা যেত না সেই সময়। ফলে জগন্নাথদেবকে দেওয়া হত রসগোল্লা, উড়িষ্যার এই দাবি সম্পূর্ণ ভুল।
এমন জোরদার যুক্তি ও প্রমাণের কাছে শেষমেশ মাথা নত করতেই হয় উড়িষ্যাকে। জগন্নাথদেবের ভাবাবেগকে সামনে রেখেও রসগোল্লা নিয়ে লড়াইয়ে তারা হেরে যায়। কঠিন লড়াই শেষে গত বছর জানিয়ে দেওয়া হয়, নবীনচন্দ্র দাশ যে রসগোল্লা তৈরি করেছিলেন, তা বাংলার। ওড়িশার নয়। জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই তকমা পায় বাংলার রসগোল্লা। আগামী ১৪ নভেম্বর সেই স্বীকৃতিরই উদযাপন করবে হিডকো।