মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। তবে তাতে রাজ্যের কিছু শত্রুও বেড়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের কয়েকটি জেলায় গোলমাল পাকাতে বাইরে থেকে টাকা ঢুকছে। সেই টাকার জোরেই বিভিন্ন জায়গায় উস্কানিমূলক ঘটনা ঘটছে। এমনই গোয়েন্দা রিপোর্ট জমা পড়েছে নবান্নে। বিশেষ করে, যে জেলাগুলিতে এই গোলমাল পাকানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলি হল কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া প্রভৃতি। মূলত, কলকাতার দূরবর্তী জেলাতেই এই ধরনের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। নবান্ন থেকে ওই সব জেলার পুলিশ প্রশাসনকে এর জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
সম্প্রতি রাজ্যে কয়েকটি গোলমালের ঘটনা ঘটেছে। সেই সব ঘটনার পিছনে কোনও রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে বলে রাজ্য গোয়েন্দাদের ধারণা। সেই শক্তি বলতে গোয়েন্দা রিপোর্টে বিজেপি ও আরএসএসের দিকেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি ঘটনার পিছনে বিজেপি-আরএসএসের উস্কানি আছে, এমনটাই গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে উত্তর দিনাজপুরের দাড়িভিট স্কুলের গোলমালের কথা বলা হয়েছে। একইভাবে সোমবার আদিবাসীদের ডাকা রাস্তা ও রেল অবরোধেও এই ধরনের শক্তি সক্রিয় ছিল বলে অনুমান গোয়েন্দাদের। এ কারণে কয়েকজন স্থানীয় বিজেপি নেতার উপরে নজর রাখছেন গোয়েন্দারা। বিভিন্ন জায়গায় সংগঠন বাড়ানোর নামে টাকা ওড়ানো চলছে বলে গোয়েন্দারা উল্লেখ করেছেন। এর পিছনে ঝাড়খণ্ড সহ অন্য রাজ্যের মদত রয়েছে বলে তাঁদের ধারণা। উল্লেখ্য, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ঝাড়খণ্ড থেকে লোক নিয়ে এসেছিল বিজেপি, এমনই অভিযোগ উঠেছিল। তাই লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, প্রশাসনের তরফ থেকে পুলিশকে আরও সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ভিনরাজ্য থেকে আসা মানুষের উপর নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। গোলযোগের সুযোগে মাওবাদীরা যাতে সক্রিয় না হয়, সেদিকেও বিশেষ নজর রাখতে বলা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় জোর তল্লাশি ও নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা রিপোর্ট নিয়ে ইতিমধ্যেই নবান্নে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্তারা আলোচনা করেছেন। সব মিলিয়ে কয়েকটি জেলার অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে বহিরাগত প্রশ্রয় ও টাকার জোগান নিয়ে চিন্তিত রাজ্য প্রশাসন। তা নিয়ন্ত্রণে আরও সতর্ক ও কড়া ব্যবস্থা নিতে জেলা পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য ও জেলার গোয়েন্দাদের নজরদারি বাড়াতেও বলা হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের বিজেপি নেতার মতো কোনও ব্যক্তি যদি উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখেন, তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পুলিশ যেন পিছপা না হয়, সেই বার্তাও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে আদিবাসীদের দিয়ে যেভাবে রাজ্যের পশ্চিমঞ্চলকে স্তব্ধ করে দেওয়া হল, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন। ওই অবরোধের ফলে মানুষকে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়েছে।