আমরা যারা পুজোয় কলকাতার অনেক দুরে, ভিনদেশের কোন উঁচু ফ্ল্যাটবাড়ির একটা খোপ দিয়ে শরৎকালের আকাশ দেখি আর রাতে ঝুল বারান্দায় সিগারেট খেতে খেতে দেখি তারা। তারা ও পুজো পুজো গন্ধ পাই। ধুলো মাখা গোবলয়ের হাওয়াতে ও পাড়ার ছাতিমফুলের গন্ধ আসে।
এ সব সময় মনে হয় নীল রঙে ডুবিয়ে আকাশটাকে শুকোতে দিয়েছে কেউ। আর সেই আকাশের বুকে ভেসে বেড়ানো টুকরো টুকরো ধবধবে সাদা মেঘ কলকাতা থেকে এনে লাগানো। ওসব মেঘের পাশ দিয়েই মা তাঁর ছেলেপুলেকে নিয়ে ফেরে আমাদের প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে। আমরা যারা প্রবাসে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত, তারাও ঘরে ফিরি ওরকমই কোন মেঘ দেখতে দেখতে উড়োজাহাজ চেপে।
আজ সকালটা বড্ড বেশি দুর্গাপুজোর মতো। হাওয়াও দিচ্ছে মিঠে। যেমনটা ষষ্ঠীর সকালে দেয়৷ সদ্য ঢাকে কাঠি পরেছে আর ধুনুচির ওম মাখানো একটা সকাল নিয়ে এসেছে রোদ৷ এসব সকালে পুজোর সোনালি স্মৃতির গান শুনতে হয় পাড়ার মাইকে। ওদিকে ছাদে বইগুলো আর হারমোনিয়ামটা রোদে দিতে হবে। রান্নাঘরে চাল গুঁড়িয়ে চালের নাড়ু চিনির পাকে সুজির নাড়ু আর কুচো নিমকি তৈরির আয়োজন হবে।
খবরের কাগজওয়ালা অন্যদিনের মতো কাগজ গ্রিলে গুঁজে দিয়ে পালায় না এসব দিনে। যত্ন করে পুজোসংখ্যা নিয়ে আসে। ওগুলো ধরে নাকের কাছে নিলে টাইমমেশিনের টিকিট কাটা যায়। এক একটা পুজোসংখ্যায় এক একটা প্রচ্ছদ। কোনটা সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, কোনওটায় সুধীর মৈত্র, কৃষ্ণেন্দু চাকী বা অনুপ রায়ের। এদের প্রত্যেককে বুকে আগলে কলিং বেল বাজায় কাগজওয়ালা দাদা । একবার দুবার বেশ কয়েকবার। ঘুম ভেঙে মোবাইল ফোনে কলিং বেলের রিংটোন শুনি।
– হ্যালো?
– নমস্কার আমি ভোডাফোন থেকে উমা কথা বলছি৷ আপনি এই নম্বরে নেটওয়ার্ক পোর্ট করিয়েছেন স্যার?
– না আমি সার্কেল চেঞ্জ করিয়েছি।
– ওঃ! আপনি এখন কোথায় আছেন?
– দিল্লি।
– স্যার, আপনি ফিরবেন না?
কিছু কিছু নিস্তব্ধতা কখনোই সম্মতির কারণ হয়না। ওর শরীর জুড়ে লেগে থাকে ‘ফিরবো বললে ফেরা যায় নাকি”র মুখরা। ও গান বোধহয় ভোডাফোন কলারটিউনে ব্যবহার করতে দেয় না। দিল্লির এই ফ্ল্যাটের বাইরে যেমন কোন খবরের কাগজওয়ালা শারদ সংখ্যা হাতে বেল বাজায় না।