সমাজসেবা এবং দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ানোই রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রধান কাজ। স্বামীজির হাতে তৈরি এই সংগঠন শুরুর দিন থেকেই রাজনীতি থেকে শত হস্ত দুরে। এবার মিশনের এই ভাবমূর্তিকে ভাঙিয়েই বাংলায় নিজেদের প্রচার চালানোর চেষ্টা করল আরএসএস। জানা গেছে, সাংবাদিক এবং সঙ্ঘ প্রচারক রন্তিদেব সেনগুপ্ত সম্প্রতি রামকৃষ্ণ মিশনকে ভুল তথ্য দিয়ে আরএসএসের অনুষ্ঠান আয়োজনের চেষ্টা করেছিল গোলপার্কে। সেই অনুষ্ঠানে স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের কয়েকজন নামী নেতারও উপস্থিত থাকার কথা ছিল। খোঁজ নিয়ে গোটা ব্যাপারটা জানতে পারে রামকৃষ্ণ মিশন। তারপরেই মিশনের পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হয়।
এই রন্তিদেবই তাঁর ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর মিথ্যাভাষণের প্রতিবাদ করেন না স্বামী সুবীরানন্দ। যদি না করেন তাহলে কি ধরে নেব তাঁদেরও এই রাজনীতিতে সায় আছে? মুখ্যমন্ত্ৰী অভিযোগ করেছেন রামকৃষ্ণ মিশনকে নাকি ভয় দেখানো হয়েছে। রামকৃষ্ণ মিশন পরিষ্কার বলুক কারা তাদের ভয় দেখিয়েছে’।
রন্তিদেবের অভিযোগ, “রাজনীতিতে জড়াচ্ছে রামকৃষ্ণ মিশন”। পাশাপাশি সেই পোস্টে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও মধ্যমেধার রাজনীতিক বলে আক্রমণ করেন তিনি। লিখেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নত্বষত্ব জ্ঞান নেই। স্বামীজির চিকাগো ভাষণের স্মরণ অনুষ্ঠানে যা হল তারপর এই ক্ষোভটা প্রকাশ করা উচিত বলেই আমি মনে করি। মমতার মতো মধ্যমেধার রাজনীতিকের নত্বষত্ব জ্ঞান না থাকারই কথা”। রন্তিদেবের বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে সমালোচনা। যদিও এসবে অবিচল তিনি।
কে এই রন্তিদেব সেনগুপ্ত? তিনি প্রথম সারির সঙ্ঘ প্রচারক। একই সঙ্গে হিন্দুত্বের প্রচার চালানো একটি দৈনিক সংবাদপত্রের এডিটোরিয়ারল মেম্বার। কেন রন্তিদেব সেনগুপ্ত মরিয়া হয়ে মিথ্যা বলে মিশনকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন? জানা গেছে, আগামী লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে বিজেপি-র প্রার্থী হতে চান তিনি। বাংলায় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রতি মানুষের মনে আলাদা জায়গা আছে। সেটাকেই কাজে লাগিয়ে নিজের মাইলেজ বাড়িয়ে নিতে চেয়েছিলেন রন্তিদেব।
গোটা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে আছে রামকৃষ্ণ মিশনের শাখা। যে কোনও সরকারের সঙ্গেই তাঁদের ভালো সম্পর্ক। স্বাধীনতা সংগ্রামেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে মিশনের। ডান-বাম নির্বিশেষে যে কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্যরাই বেলুড় মঠে আসতে পারেন, আসেনও। তাঁদের অভ্যর্থনার কোনও ত্রুটি রাখে না মিশন। কিন্তু নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এভাবে মিশনকে কাজে লাগানোর ঘটনা প্রথম।
জানা গেছে, এই রামকৃষ্ণ মিশন থেকেই দীক্ষা নিয়েছেন রন্তিদেব। আর এটাকেই কাজে লাগাতে চাইছিলেন ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে। এটাও এক ধরনের সস্তায় জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা।রন্তিদেবের মতো মানুষ, যিনি মিশনের ভাবমূর্তি কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে চান, বা আরএসএস-এর মাধ্যমে হিন্দুত্বের প্রচার করতে চান, তেমন মানুষের সার্টিফিকেটের প্রয়োজন রামকৃষ্ণ মিশনের নেই।