প্রার্থী নিয়ে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব ভোট-আবহে বারবার সমস্যায় ফেলেছে বিজেপিকে। এবার গেরুয়াশিবিরের সেই গোষ্ঠীকোন্দলই কান্দিতে তৃণমূলকে ফ্রন্টফুটে এনে দিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে শাসকদল এই কেন্দ্রে ধাক্কা খেয়েছিল। এগিয়েছিল কংগ্রেস। সেইসময় থেকে বিজেপিও শক্তিবৃদ্ধি করতে থাকে। কান্দি শহর সহ বিভিন্ন এলাকায় তারা শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করেই দলবদলকারী নেতাকে এই কেন্দ্রে গেরুয়া শিবির প্রার্থী করায় ফের উল্টোদিকে হাওয়া বইতে শুরু করেছে। দলের অনেকেই বলছেন, বিজেপি কর্মীরা যাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করে ভিত তৈরি করেছিলেন তাঁকেই দল প্রার্থী করেছে। তাই কর্মী সমর্থকদের একটা বড় অংশ তাঁকে মেনে নিতে পারছে না। প্রাক্তন তৃণমূল নেতা প্রার্থী হওয়ায় প্রচারে আক্রমণের ঝাঁঝও বাড়ানো যাচ্ছে না।
এ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী গৌতম রায় ২০১৯ সালে তৃণমূলের প্রতীকে দাঁড়িয়ে প্রায় ২১ হাজার ভোটে হেরেছিলেন। তিনি একসময় কান্দি পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। হঠাৎ করেই কয়েকদিন আগে তৃণমূল ছেড়ে পদ্ম-পতাকা ধরেন। তারপর তিনি টিকিটও পেয়ে যান। বিজেপির পুরনো দিনের নেতা-কর্মীদের দাবি, নেতৃত্ব প্রার্থী নিয়ে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্য কেউ এখানে প্রার্থী হলে সাফল্য নিয়ে ভাবতে হতো না। কিন্তু দলবদলু ওই নেতাকে অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। তাই দলের অনেকে এখনও প্রচারে গা ঘামাচ্ছেন না। এদিকে, তৃণমূল কান্দি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিটি বুথে তারা কমিটি তৈরি করেছে। রিপোর্ট কার্ড নিয়ে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরছে। এছাড়া বাসিন্দাদের সমস্যাও লিপিবদ্ধ করছে। তাতে মানুষের সঙ্গে সংযোগ বাড়ছে।
উল্লেখ্য, কান্দি বরবারই কংগ্রেসের দখলে ছিল। কিন্তু এখন তাদের সেই সাংগঠনিক জোর নেই। কান্দি শহরে তাদের ক্ষমতা অনেক কমে গিয়েছে। পঞ্চায়েত এলাকার ভোটই তাদের ভরসা। তার উপর কুমারষণ্ড, গোকর্ণ, মহালন্দি এবং আন্দুলিয়ার মতো বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় কংগ্রেসের ঘর ভেঙে তৃণমূল শক্তি বৃদ্ধি করছে। তারফলে হাতশিবিরের ক্ষমতা অনেকটাই ক্ষয় হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে কান্দি শহরের ৮, ১১, ১২, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড বাদে বাকি এলাকাগুলিতে বিজেপির প্রভাব রয়েছে। এলাকার রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিরা বলেন, ভোট ঘোষণা হওয়ার কিছুদিন আগেও বিধানসভা কেন্দ্রজুড়ে গেরুয়া হাওয়ার দাপট ছিল। কিন্তু এখন তা অনেকটাই কমে এসেছে। বিজেপি নেতা ধনঞ্জয় মণ্ডল বলেন, প্রার্থী নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি রয়েছে। কিন্তু, দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। তবে এবারের ভোট প্রতীক দেখে হবে। প্রার্থী কোনও ফ্যাক্টর হবে না। বিজেপি প্রার্থী গৌতম রায় বলেন, আমি তৃণমূলে থাকার সময়েও কোনওদিন অনিয়ম করিনি। আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। তৃণমূল নেতা পার্থপ্রতিম সরকার বলেন, আমরা উন্নয়নমূলক কাজ দেখিয়ে ভোট চাইছি। আর বিজেপি বিভাজন করতে চাইছে। ওদের প্রার্থী আমাদের ছেড়ে যাওয়ায় তৃণমূলের শুদ্ধিকরণ হয়েছে। মানুষ তৃণমূলকেই সমর্থন করবে। কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, এখানকার এক নেতা কংগ্রেসের প্রতীকে জিতে তৃণমূলে গিয়েছিলেন। ওদের সবসময় টিকিট চাই। তাই ওরা যাতে আর কোনওদিন টিকিট চাওয়ার দুঃস্বপ্ন না দেখে তার ব্যবস্থা করতে হবে। লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খেয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অনেকেরই মনোবল ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁরা হাল ছাড়েনি। এই পরিস্থিতিতে এবার বিজেপি দলবদলুকে প্রার্থী করায় শাসক দলের জয়লাভের প্রত্যাশা বেড়েছে। বিজেপির অন্তর্কলহ তৃণমূলকে অক্সিজেন যোগাচ্ছে, মত রাজনৈতিক মহলের।