আডিয়োস ডিয়েগো। হাজার হাজার দেশবাসীর চোখের জলেই অগণিত বিশ্ববাসীকে আলভিদা জানালেন বাঁ পায়ের জাদুকর। ৩৬ ঘণ্টা কেটে গেলেও, ডিয়েগো মারাদোনার মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি আর্জেন্তিনা। বৃহস্পতিবার গোটা দিন শ্রাবণের ধারার মতো কেঁদেছে দেশবাসী। স্থানীয় সময় সন্ধ্যে ৬টা নাগাদ বুয়েনস আইরেস শহরের প্রান্তে বেল্লা ভিস্তা সমাধিস্থলে সমাহিত করা হল তাঁর দেহ। শেষযাত্রায় মারাদোনার সঙ্গী ছিল ১৯৮৬ বিশ্বকাপ ট্রফি, প্রিয় ১০ নম্বর জার্সি এবং আর্জেন্তিনা পতাকায় মোড়ানো ছিল তাঁর কফিন। উল্লেখ্য, বেল্লা ভিস্তা সমাধিস্থলে ডিয়েগোর বাবা-মা’কেও সমাহিত করা হয়েছিল। পারিবারিক রীতি মেনেই ফুটবল ঈশ্বরকে শেষ বিদায় জানানো হয়। মারাদোনার পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ কয়েকজন উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয় শেষকৃত্য অনুষ্ঠান।
হাজার হাজার সমর্থকদের মতোই ছেলের হাত ধরেই প্রিয় ফুটবলারকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন লুসিয়ানো পেরেজ। তবে রাষ্ট্রপতি ভবনের কাছাকাছি এসেও কফিনবন্দি মারাদোনাকে শেষবারের জন্য দেখার শক্তি জোগাতে পারেননি বছর ৩৬-এর পেরেজ। যাঁর খেলা দেখে ফুটবলের প্রেমে পড়েছিলেন, সেই প্রিয় ডিয়েগোকে কফিনবন্দি দেখতে মন চায়নি তাঁর। জানালেন, ‘আমি ওঁকে এভাবে দেখতে পারব না। কখনও ভাবিনি এই দিনটাও দেখতে হবে। এটা আমার কাছে এক দুঃস্বপ্ন।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার ৬০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ডিয়েগো। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়কের মৃত্যুর খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে। স্বপ্নের নায়ক যে আর নেই, তা বিশ্বাস করতে পারেননি অনেকেই। শোকের আঁধারে তলিয়ে গিয়েছে বুয়েনস আইরেস থেকে নাপেলস। দেশের সর্বকালের সেরা ফুটবলারকে শ্রদ্ধা জানাতে তিনদিনের রাষ্ট্রীয়শোক ঘোষণা করেন আর্জেন্তিনা রাষ্ট্রপতি আলবার্তো ফার্নান্ডেজ। পাশাপাশি করোনার সকল বিধি মেনেই বৃহস্পতিবার সারা দিন রাষ্ট্রপতি ভবনেই রাখা হয় ডিয়েগোর মরদেহ। ফুটবল ঈশ্বরকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকেই কাসা রোসাদার বাইরে লম্বা লাইন পড়ে যায়। বাঁধ মানছে না চোখের জল। কারও মৃত্যুতে এমন শোক ও হাহুতাশ দৃশ্য কখনও দেখেনি আর্জেন্তিনা। কখনও শোনেনি দেশজুড়ে এমন কান্নার রোল। প্রায় এক লক্ষের বেশি মানুষ গোটা দিনে মারাদোনাকে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।