২৫ নভেম্বর, ২০১৬ – প্রয়াত হলেন কিউবার রাজনৈতিক নেতা ও সমাজতন্ত্রী বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রো।
২৫ নভেম্বর, ২০২০ – ঠিক চার বছরের মাথায় একইদিনে মারা গেলেন তাঁর অন্যতম প্রিয় কমরেড তথা ফুটবল রাজপুত্র দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা।
অত্যাশ্চর্য সমাপটন ছাড়া আর কী-ই বা বলা যেতে পারে একে?
১৯৮৬ সালে প্রথমবার কিউবা গিয়েছিলেন মারাদোনা। তখনই কাস্ত্রোর সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই শুরু। তার পর অনেক বারই কিউবা গিয়েছেন তিনি। বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে ১০ নম্বর জার্সি উপহারও দিয়েছেন। একাধিকবার কাস্ত্রোকে নিজের ‘দুঃসময়ের বন্ধু’ বলে অভিহিত করেছেন দিয়েগো।
খেলোয়াড় জীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর এক সময় মাদক সেবনের জন্য মারাত্মক সমস্যায় পড়েন মারাদোনা। তখন রীতিমতো বিপর্যস্ত অবস্থা তাঁর। ফুটবল রাজপুত্রের পাশে তখন কেউ নেই- ব্যতিক্রম ফিদেল কাস্ত্রো। সেই সময় দিয়েগোকে আশ্রয় দিয়েছিলেন ফিদেল। ‘লা পেড্রেরা’ ক্লিনিকে ব্যবস্থা করে দেন মারাদোনার রিহ্যাবের। কিউবার স্বাস্থ্য পরিষেবার সুনাম ছিলই। সেখানে ক্রমশ সুস্থও হতে থাকেন কিংবদন্তি ফুটবলার। মারাদোনার ঘনিষ্ঠদের মতে, কাস্ত্রো এগিয়ে না এলে প্রাণ বাঁচানোই মুশকিল হয়ে যেত আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের। শরীর এতটাই খারাপ ছিল তাঁর।
তখন ৪ বছর কিউবায় কাটিয়েছিলেন মারাদোনা। সেইসময় মাঝেমধ্যেই সকালে মারাদোনার কাছে আসত কাস্ত্রোর ফোন। খেলা থেকে রাজনীতি, কিছুই বাদ পড়ত না আলোচনায়। নেশায় আসক্তি কাটিয়ে ফেলতে মারাদোনাকে উৎসাহ জোগাতেন কাস্ত্রো। মারাদোনা এক বার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “এমনকী রাত দুটোর সময়ও ফোন করতেন কাস্ত্রো। আমিও সব সময় কথা বলতে প্রস্তুত থাকতাম। কোনও ইভেন্ট থাকলে জানতে চাইতেন, আমি যেতে চাই কি না। এগুলো আমি ভুলব না।”
কাস্ত্রোর কাছে মারাদোনা ঠিক কেমন ছিলেন? কিউবার এই বামপন্থী নেতা একবার বলেছিলেন, “দিয়েগো আমার গ্রেট ফ্রেন্ড। কোনও সন্দেহ নেই যে ও অসাধারণ এক অ্যাথলিট। আর কিউবার সঙ্গে মারাদোনা বন্ধুত্ব রেখে গিয়েছে কোনও পার্থিব লাভ ছাড়াই।”
চার বছর আগে ২০১৬ সালে প্রয়াত হন কাস্ত্রো। মারাদোনা তখন কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, “আমার কাছে ফিদেল ছিলেন দ্বিতীয় বাবার মতো। আর্জেন্টিনায় যখন আমার সামনে দরজাগুলো এক এক করে বন্ধ হচ্ছিল, তখন উনি কিউবার দরজা খুলে দিয়েছিলেন।” কাস্ত্রোর মৃত্যুর পর জাতীয় শোকে যোগ দিতে মারাদোনা কিউবা গিয়েছিলেন। সেখানে সর্বসমক্ষে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “আমি এই সময় কিউবার মানুষের পাশে থাকতে চাই। আর বিদায় জানাতে চাই আমার বন্ধু ফিদেলকে।”
আসলে মারাদোনা যে শুধুমাত্র ফুটবল মাঠের জাদুকর ছিলেন, তা নয়। তিনি ফুটবল মাঠের পাশাপাশি সমাজব্যবস্থাতেও প্রতিবাদী এক চরিত্র। তিনি ফিফাকেও ভয় পান নি, তিনি নিজের দেশের ফেডারেশনকেও ভয় পান নি। যা ন্যায্য মনে করেছেন, তাই করেছেন। সমাজের ক্ষেত্রেও তিনি আসলে তৃতীয় দুনিয়ার প্রতিনিধি। বারবার গর্জে উঠেছেন আমেরিকার উদ্দেশ্যে। তাঁর ডান হাতের বাহুতে এতদিন সযত্নে লালিত ছিল বিপ্লবী চে-গুয়েভরার উল্কি। আর বাঁ পায়ে এঁকে রেখেছিলেন তাঁর ‘কমাদান্তে’ ফিদেল কাস্ত্রোকে।