“যাও উড়ে নীলকণ্ঠ পাখি, যাও সেই কৈলাসে, দাও গো সংবাদ তুমি, উমা বুঝি ওই আসে।” সময় তো চলে এলো। এবার মা ফিরে যাবেন। মাস্ক, স্যানিটাইজার নিয়েছে কিনা দেখতে হবে। কৈলাসে লকডাউন ফকডাউন আবার নেই তো? গনশার জন্য ছোটপিসি স্পেশাল মাস্ক বানিয়ে দিয়েছিল অনেকটা বেশী কাপড় কেটে। সেজমামা লক্ষ্মীর কানে কানে অনেককিছু চেয়ে নিয়েছে। এপ্রিল থেকেই ব্যাবসাটা ভালো যাচ্ছে না মামার। কার্ত্তিকের মনখারাপ, প্রতিবার কত্তোজন মামনি ওর সাথে ছবি তোলে, এবার একজনও এলো না। মায়েরও কী মনটা ভালো? সিঁদুরখেলা নেই, পান ঠুসে দেওয়া নেই। মহিষাসুরের মহিষের নাকেও কেউ সন্দেশ ঢুকিয়ে দেয়নি এবার।
জিবেগজা, রসবড়া, মনোহরা, মিহিদানা, সীতাভোগ একটা কাঁচের প্লেটে আর পাশে মাংসের ঘুগনি উপরে পেঁয়াজ, ধনেপাতা, লেবু ছেটানো। এবার আর হবে? ডালডার টিনে নিমকি রাখা থাকতো মনে পরে? আর কোন আত্মীয় গেলে খেতে দেওয়া হবে? হরলিক্সের কাঁচের শিশিতে নারকেলের নারু রাখা হয় আর? তিলের নারু দিদার একটা পুরনো আচারের বয়াম থেকে নিতে হতো। ভিয়েনে তৈরি হোতো বিজয়ার মিষ্টি। আর ফিরে আসবে?
ডাকঘর থেকে পোস্টকার্ড আর ইনল্যান্ড এলো কিছু স্নেহাশীর্বাদ লাগা? কে ক’টা বিজয়ার চিঠি পেলো হলদে খামে? কেউ মনে করিয়ে দিয়েছে তো? “আজকের দিনেই শেষবারের মতো ইলিশ খাওয়া। তারপর আবার একটা বছরের অপেক্ষা। আরেক পিস নাও।”
বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিজয়া করা, ধুপ করে প্রণাম ঠুকলেই নারু পাওয়া, জনে জনে কোলাকুলিটা তো কবেই মিটে গেছিল। এবার গোটাটাই ডিজিটাল যেন। আছে সব্বাই কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই। দেবীও আছেন কিন্তু আসলে নেই। আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া মানুষগুলো যেমন ছবির ফ্রেমে, পুরনো ভিডিও বা অডিওতে আছেন, স্মৃতিতে আছেন, রেখে যাওয়া জিনিসপত্রের গন্ধে আছেন কিন্তু আদপে আর নেই, সেরকম।
দশমী এলো মানে অশুভের দমন হলো। আমরা বিশ্বাস করতে ভালোবাসি অশুভ পরাজিত হয়। ঠিক যেভাবে কোভিড পরাজিত হবে। ভ্যাক্সিনরূপেন সংস্থিতা রূপে আরাধ্যা হবেন উনি পরের বছর। এই বিশ্বাসের সাথেই আমরা আগামী পথ চলি। কারণ বিশ্বাস আর আশাবাদেই মিলায় বস্তু। করোনামুক্ত এক পৃথিবীর বাস্তবতা যে বহুদূর। শক্তি দাও মা! জীবাণুর বিনাশ হোক।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত