কেন্দ্রের কৃষি আইন নিয়ে আপত্তি উঠতে শুরু করেছে নানা স্তরে। বিল ঘিরে আশঙ্কার সিঁদুরে মেঘ দেখা দিয়েছে কৃষক মহলেও। শুধু আলু চাষের ক্ষেত্রেই প্রায় এক লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সিঙ্গুরের কৃষক মহলের ধারণা, সম্পূর্ণ কর্পোরেট সংস্থার আওতায় চলে আসায় স্বাভাবিক ভাবেই বেআইনি মজুতদারি ও কালোবাজারি বাড়বে। বিপদে পড়বেন সাধারণ মানুষ।
নতুন কৃষি-বিল অনুযায়ী সব কৃষককে চুক্তিভিত্তিক চাষের আওতায় আনা হবে। ধনেখালি ভাণ্ডারহাটির কৃষক শ্যামসুন্দর ভট্টাচার্য, চাঁদপুরের কৃষক শ্রীকান্ত ঘোষেরা মনে করেন, চুক্তিভিত্তিক চাষ নিয়ে আগে থেকেই তাঁদের তিক্ত অভিজ্ঞতা। চুক্তিতে চাষে লোকসান হয়। আলুবীজ থেকে শুরু করে সার, কীটনাশক, রাসায়নিক-সহ চাষের যাবতীয় সরঞ্জাম ব্যবসায়িক সংস্থা দেয়। আলুর দামও তারাই ঠিক করে। ফলে বাজারে আলুর দাম বাড়লে বা কমলে কৃষকদের লাভ-ক্ষতি নেই। দামে না পোষালেও, জমি থেকে আলু বিক্রি করে দিতে হয়। বেছে বেছে বড় এবং ভাল আলু তারা কিনে নেয়। বাকিটা কৃষকের কাছেই পড়ে থাকে। পরে সেই আলুর দাম জোটে না, লোকসান মেনে নিতে হয়। একই ভাবে চুক্তি-চাষে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফসল নষ্ট হলে তার দায় কৃষকের। অথচ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর কোনও কারণে বাজারে দাম বাড়লে, সেই মুনাফা পাবেন না কৃষকেরা। বীজ কেনার ক্ষেত্রেও কৃষকেরা বাজার-চলতি একাধিক বীজ দেখে দাম বিচার করতে পারেন না। একই সমস্যা চাষের অন্য ক্ষেত্রগুলিতেও। ফলে চুক্তিভিত্তিক চাষ করে কৃষকদের ব্যবসা প্রসারের পরিধি ক্রমশ কমতে থাকে।
এই আইনের সঙ্গে সহমত নন রাজ্য প্রগতিশীল আলু ব্যাবসায়ী সমিতির সম্পাদক লালু মুখার্জি। তিনি বলছেন, এই আইন প্রয়োগ করার আগে অনেক ভাবার প্রয়োজন রয়েছে। কৃষকদের পাশাপাশি চরম বিপদে পড়বেন সাধারণ মানুষ। জীবিকা হারাবেন আলু কেনা-বেচার সঙ্গে যুক্ত রাজ্যের প্রায় এক লক্ষ মানুষ। কৃষকেরা উদ্বিগ্ন। তাঁরা বুঝতে পারছেন না ঠিক কী হতে চলেছে। তিনি মনে করেন, আইন প্রয়োগের ফলে কৃষকেরা কর্পোরেট সংস্থার আওতায় চলে আসবেন। পুরোপুরি কর্পোরেট ধাঁচে ব্যবসা চলবে। কৃষকদের দাম না দিলেও কিছুই করার থাকবে না। মজুত করার সীমারেখা থাকছে না। ফলে কালোবাজারি বাড়বে। বহুজাতিক সংস্থা বিপুল পরিমাণ আলু মজুত করে পরে তাঁদের নির্ধারিত দামে বিক্রি করবে। ফলে বাজারে আলুর দাম দ্রুত বাড়বে। বীজ, সার থেকে রাসায়নিক বা কৃষিজ পণ্য ওরা যে-দামে দেবে, কৃষকদের তা কিনতে হবে। ফলে চাষের খরচ বাড়লেও, চুক্তির বেশি দাম পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে কৃষকদের থেকে দরদাম করে ভাল বীজ বা রাসায়নিক কেনার স্বাধীনতাও কেড়ে নেওয়া হবে।