রবীন্দ্রসঙ্গীতপ্রিয় বাঙালির মনে কণিকার সঙ্গে সঙ্গেই থাকেন সুচিত্রা মিত্র। আর কী আশ্চর্য, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়-সলিল চৌধুরীর গান সংক্রান্ত ঘটনার সঙ্গেও জড়িয়ে আছেন তিনিও! কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় সলিল চৌধুরীর আধুনিক গান গেয়েছিলেন বলে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছিল। দুটি গানের রেকর্ডিং হয়ে যাবার পরে খবর যায় শান্তিনিকেতনে। কণিকা লিখছেন, ‘‘সলিলের গান করেছি, এ খবর শান্তিনিকেতনে পৌঁছল যথারীতি। অনেকে আপত্তি করলেন, কেন আমি রবীন্দ্রনাথের গান ছেড়ে আবার আধুনিক গান গাইব? রবীন্দ্রনাথের গান ছাড়লাম কোথায়! সে গান তো আমার সারাজীবনের আশ্রয়। কিন্তু তর্কে আমি কুঁকড়ে যাই। লড়াই চালাতে ইচ্ছে করে না। ফলে আপত্তি মেনে নিলাম। সলিলকে জানালাম, বের করা যাবে না ওই রেকর্ড। দুঃখ পেয়েছিল সলিল। আমিও কম দুঃখ পাইনি।’’ শেষে উৎপলা সেনকে দিয়ে রেকর্ডে গাইয়েছিলেন সলিল চৌধুরী। ১৯৫৩ সালের পুজোয় প্রকাশিত সেই গানদুটি হল ‘প্রান্তরের গান আমার’ এবং ‘আমার কিছু মনের আশা’। কণিকার গলায় গানদুটির আর কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি পরে। এই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছিল সুচিত্রা মিত্রের ক্ষেত্রেও। সুচিত্রা প্রথমে শান্তিনিকেতনের ছাত্রী ছিলেন। কিন্তু শুধুমাত্র সেখানেই সীমাবদ্ধ না থেকে, নিজেকে মেলে ধরেছিলেন নানান ক্ষেত্রে। যার মধ্যে ছিল ‘ভারতীয় গণনাট্য সংঘ’-র সঙ্গে যুক্ত হওয়াও। সেখানেই তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল সলিল চৌধুরীর সঙ্গে। ১৯৫০-এ সলিলের কথায়-সুরে সুচিত্রা রেকর্ডে গাইলেন ‘সেই মেয়ে’। রবীন্দ্রনাথের ময়নাপাড়ার কৃষ্ণকলি পরবর্তী কালে দেশভাগের বলি হয়ে কোন অবস্থায় পৌঁছেছে, তার আন্তরিক চিত্র এঁকেছিলেন সলিল চৌধুরী ‘সেই মেয়ে’ গানে, সুচিত্রা মিত্রের অসামান্য পরিবেশন যাকে পূর্ণতা দিয়েছিল। এ গান নিয়েও কী বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, তার উল্লেখ আছে সলিল চৌধুরীকে নিয়ে লেখা সুচিত্রা মিত্রের ‘পুরনো আখরগুলি’ নামে লেখায়। তিনি লিখেছেন, এ গান বেরোনোর পর ‘রবীন্দ্রভক্ত’রা তাঁকে ‘আক্রমণ করলেন’, ‘অপমান করলেন’, তাঁর সামনে গানের ডিস্কটি ভাঙাও হল। কারণ হিসেবে লিখেছেন, ‘‘আমি কেন এক দাগি কমিউনিস্টের পাল্লায় পড়ে রবীন্দ্রনাথের কৃষ্ণকলির parody গাইলাম।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি সেদিনও বলেছি, আজও বলছি – ‘সেই মেয়ে’ কৃষ্ণকলির parody নয়। সলিলের প্রতিভাকে আমি ঠিকই চিনেছিলাম। ওঁরাই চেনেননি। … রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে সলিলের সঙ্গীতপ্রতিভাকে সম্মান জানাতেন, স্বীকৃতি দিতেন, এতে আমার সন্দেহ নেই।’’ একই লেখায় সুচিত্রা মিত্র উল্লেখ করেছিলেন কণিকা-সলিল সংযোগের ঘটনার কথাও – কী ভাবে গানদুটির টেস্ট-প্রিন্ট পেয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তা বাজারে বেরোতে পারেনি।
তবে শুধুমাত্র রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হয়ে আধুনিক গান গাওয়া নিয়ে বিতর্ক নয়, একেবারে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়েই আরেক কিংবদন্তীর সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন সুচিত্রা মিত্র। কিংবদন্তী সেই রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হলেন ‘জর্জ বিশ্বাস’ বা ‘দেবব্রত বিশ্বাস’। বিশ্বভারতীর সঙ্গে জর্জের বা দেবব্রত বিশ্বাসের বিরোধ বেড়েছিল ’৬২-তে মিউজিক বোর্ড থেকে অনাদি দস্তিদার সরে যাওয়ার পর। ’৬৪-তে জর্জের ফের দুটি গান আটকে দিয়েছিল বোর্ড। অনেকের সঙ্গে দায়িত্বে ছিলেন ‘দিদিমণি’। একদিন, জর্জের ‘দিদিমণি’ এসেছিলেন তাঁর বাড়িতে। দেখেছিলেন, লুঙ্গি আর ফতুয়া পরে মোড়ায় বসে ডিম-ফুলকপি রান্না করছেন জর্জ। ‘দিদিমণি’ বলেছিলেন, ‘‘এসেছিলে তবু আস নাই’ গানে ‘চঞ্চল চরণ গেল ঘাসে ঘাসে’র জায়গায় ‘চন্’ কথাটি স্বরলিপি মতো হয়নি।’’ জর্জ হেসেছিলেন। হারমোনিয়ম টেনে শোনাতে বলেছিলেন। ‘দিদিমণি’ গেয়েছিলেন। শুনে জর্জ বলেছিলেন, ‘‘… ‘চন্’ শব্দডা যে স্বরলিপি অনুসারে হইল না দিদিমণি।’’ চলে গিয়েছিলেন ‘দিদিমণি’। সে দিনের মতো বিরোধ মিটলেও দিদিমণির সঙ্গে সম্পর্কে কোথায় যেন দূরত্ব বাড়ার সেই শুরু হয়েছিল। কিছু দিন পর ‘শান্তিদেব ঘোষ’ অবশ্য জানিয়েছিলেন, জর্জই ঠিক। ১৯৬৯-এ ফের জর্জের দুটি গান আটকেছিল বোর্ড। আঘাত পেয়ে রেকর্ড বন্ধ করে দিয়েছিলেন জর্জ! অভিমানে কাতর হয়ে যখন তিনি থেমেছিলেন, তখন তিনি টপ ফর্মে। তাঁর রেকর্ড বিক্রি বেড়েই চলছিল। জর্জের ‘দিদিমণি’ হলেন কিংবদন্তী রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী শ্রীমতী ‘সুচিত্রা মিত্র’। সুচিত্রা মিত্র তাঁর অনুলিখিত আত্মকথায় লিখছেন, ‘‘জর্জের গান বিশ্বভারতীর মিউজিক বোর্ড বাতিল করেছিল বলে যা এক সময় বহু জায়গায় প্রচারিত হয়েছে, তা ঠিক নয়। জর্জের কোনও গান বিশ্বভারতী মিউজিক বোর্ড খারিজ করেনি।’’ ওদিকে জর্জ-ঘনিষ্ঠ, তাঁর ‘ওস্তাদ’ শিল্পী খালেদ চৌধুরী সাক্ষাৎকারে ব্যক্তিগত ভাবে এক বার বলেছিলেন, জর্জের সঙ্গে অন্যদের রেকর্ড বিক্রির বিরাট অঙ্কের ফারাকটাই বিশ্বভারতীর মিউজিক বোর্ডের লোকেরা মেনে নিতে পারেনি। তাঁদের ঈর্ষা ছিল। এও বলেছিলেন জর্জের পিছনে ‘‘সুবিনয় রায়, সুচিত্রা লেগেছিল, আবার লাগেনি।’’
আবার এই ঘটনার বিপরীতেও একটি দৃশ্য পাওয়া যায়। জর্জ বিশ্বাসের ঘরে কেবল একজনেরই ছবি ছিল। তিনি হলেন জর্জের ‘দিদিমণি’। ছিপছিপে গড়নের মেয়েটি কালোপাড়-সাদা শাড়িতে কলকাতার মঞ্চে গাইতেন, ‘কোন খ্যাপা শ্রাবণ ছুটে এলো’। জর্জ তাঁকে ‘দিদিমণি’ বলে ডাকতেন। বিশ্বভারতীর ছাত্রী হয়েও, তাঁর গানের মধ্যে ছিল ভিন্নতর আহ্বান। জর্জের সঙ্গে আলাপ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। তাঁরা একসঙ্গে গণসঙ্গীতের কত অনুষ্ঠানে যে গেয়েছেন! কোথাও কোথাও সকলে দেখেছিলেন, নৃত্যনাট্য শেষ হবার পরে ‘দিদিমণি’ কাঁদছেন জর্জের কাঁধে মাথা রেখে। কত বার!
কেমন ছিল জর্জের সঙ্গে তাঁর ‘দিদিমণি’র সম্পর্ক? বয়সে চোদ্দো বছরের বড়, তবু সুচিত্রার কাছে তিনি ছিলেন শুধুই ‘জর্জ’! প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে জর্জ যে বার ভর্তি হয়েছিলেন রামকৃষ্ণ শিশুমঙ্গল হাসপাতালে – অবচেতন জর্জের মুখে কখনও শোনা যেত, ‘সুচিত্রা’, কখনও ‘দিদিমণি, দিদিমণি’! জ্ঞান ফিরে দেখতে চেয়েছিলেন দিদিমণিকেই। ছুটে এসেছিলেন সুচিত্রা। কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। সুচিত্রা যখন শান্তিনিকেতনের ছাত্রী ছিলেন, জর্জ জ্বর নিয়ে একবার চিঠির প্রত্যুত্তরে সুচিত্রাকে লিখেছিলেন – ‘‘আজ আপনাকে একটা ভীষণ সত্যি কথা বলছি – কথা হল এই – অসুখের মধ্যে আপনার চিঠিটা ভীষণ ভালো লেগেছে। এবং এত ভীষণ ভালো লেগেছে যে অনেকবার পড়ে ফেলেছি।’’ একটু পরেই আবার লিখেছিলেন, ‘‘মোহরের খবর কি? তাঁকে আমার কথা বলবেন।’’
ওদিকে কণিকা-সুচিত্রা সম্পর্ক? কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছিল ভীষণ স্পর্শকাতর মন। সমালোচকরাও অনেক সময় সুযোগ বুঝে আক্রমণ করতেন তাঁকে। যেমন সুচিত্রা-কণিকার লড়াই। ১৯৪১ সালে শান্তিনিকেতন শূন্য। রবীন্দ্রনাথ চলে গেছেন। সেই সময় সুচিত্রা মিত্র শান্তিনিকেতনে গান শিখতে আসেন। তখন ইন্দিরা দেবী পিয়ানো বাজিয়ে সঙ্গীত ভবনে গান শেখাতেন। বর্ষামঙ্গল হত, শারদোৎসব হত। প্রফুল্লকুমার দাস ছিলেন। ছিলেন নীলিমা সেন, অরুন্ধতী দেবী। চিনা ভবনের সান্ধ্য আসরে প্রথম দেখা হয়েছিল সুচিত্রা ও কণিকার! সুচিত্রা সে দিন গেয়েছিলেন ‘ওই যে ঝড়ের মেঘে’। সুচিত্রার স্মার্টনেস্, ফর্সা রং, স্কিনের চাকচিক্য নিয়ে সে সময় শান্তিনিকেতনের মাঠেঘাটে জল্পনা শোনা যেত – ‘শহরে থাকলে রং ফর্সা হয়’, ‘নিশ্চই দামি ক্রিম মাখে’, ‘হাঁটা চলায় কী তেজ’। সুচিত্রা ও কণিকা, দু’জনের মধ্যে কোন বাক্যালাপ ছিল না। কেবল দু’জনে দু’জনকে আড়চোখে দেখতেন। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় পরে জানিয়েছিলেন, ‘‘আমি সুচিত্রার সাজ-পোশাক দেখতাম আর নিজের দিকে তাকাতাম। আমার লাল মাটির খালি পা। শাড়ির নীচের দিকটায় লাল ধুলো। রোদে পোড়া তামাটে রং।’’ কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই সুচিত্রা মিত্র সকলের মন জয় নিয়েছিলেন। সুচিত্রা মিত্রের গান গাওয়া, ছবি আঁকা, পুতুল গড়া, রান্না, সব দেখে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় একেবারে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন! পরে খুব জমে উঠেছিল দু’জনের। এক জন ‘চিত্রাঙ্গদা’-য় কুরূপা তো আর এক জন সুরূপা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও যেমন ‘শ্যামা’ রেকর্ডিং হয়েছিল। শ্যামা আর বজ্রসেন মানেই তখন কণিকা-হেমন্ত জুটি। ’৬২ সালে এইচ এম ভি জনগণকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য শিল্পীদের লরিতে গান গাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। সুচিত্রা মিত্র শাড়ি পরে এক লাফে লরিতে উঠে গিয়েছিলেন। অন্য দিকে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় উঠতেই পারছিলেন না। তাঁকে কোনওমতে টুল পেতে ওঠাতে হয়েছিল। তাঁদের দুজনের চরিত্রের মতো গানেও দু’জন দুটো ঘরানার ছিল। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় শৈলজারঞ্জন মজুমদারের আর সুচিত্রা মিত্র শান্তিদেব ঘোষের। আর এই ঘরানা নিয়েও সমালোচকরা দু’জনের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। শেষে তাঁদের মনোমালিন্য এমন হয়েছিল যে, কবিপক্ষে রবীন্দ্রসদনে একই দিনে দু’জনের গানের অনুষ্ঠানে দু’জন বসেছিলেন দু’প্রান্তে। পরে একই অনুষ্ঠানে দু’জনের গান গাওয়ার প্রস্তাব আসলেই কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় রেগে বলতেন, ‘‘সুচিত্রা অনুষ্ঠানে ১২ হাজার নিলে, আমায় ১ টাকা হলেও বেশি দিতে হবে।’’ দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণ থেকেও আর একটা ঘটনার কথা জানা যায়। কলকাতায় ‘মায়ার খেলা’ হবে। ঠিক হয়েছিল কণিকা হবেন প্রমোদা আর সুচিত্রা হবেন শান্তা। দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় সুচিত্রা মিত্রকে প্রস্তাবটা দিতেই সুচিত্রা বলেছিলেন, ‘‘আমি শান্তা করলে মোহর প্রমোদা করবে না।’’ অগত্যা দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় কণিকাকে রাজি করাতে শান্তিনিকেতন পৌঁছালেন। কণিকা জানতে চাইলেন, ‘‘শান্তা কে?’’ দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় বললেন ‘‘খুব ভাল গায় একটি সুন্দর মেয়ে।’’ তাঁর কথামতো অনুষ্ঠানের আগে কলকাতায় রিহার্সাল করতে গিয়ে কণিকা দেখলেন শান্তা আর কেউ নয়, স্বয়ং সুচিত্রা! কণিকা বেঁকে বসলেন। তিনি কিছুতেই সুচিত্রা মিত্রের সাথে গাইবেন না। তাঁর সব রাগ গিয়ে পড়েছিল দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের ওপর! কণিকা বন্দোপাধ্যায়কে অনেক করে বোঝানো হল, লোকে টিকিট কেটে বসে আছে সুচিত্রা-কণিকা শুনবে বলেই! শেষে তিনি রাজি হয়েছিলেন ও সুচিত্রা মিত্রের সাথে গেয়েছিলেন। কিন্তু অনুষ্ঠানের পরে দেখা গিয়েছিল একটা অবাক করা দৃশ্য। অনুষ্ঠানের পর তাঁরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেন! কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়াত হবার পরে সুচিত্রা মিত্র বলেছিলেন, ‘‘মোহর চলে গেছে, আর শান্তিনিকেতনে যাব না।’’
ইন্দিরা গান্ধীর বিখ্যাত একটা কথা আছে সুচিত্রা মিত্রকে নিয়ে। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলতেন, ‘‘সুচিত্রার কন্ঠে ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলরে’ শুনে আমি একলা চলার প্রেরণা পাই।’’ ইন্দিরা গান্ধী রবীন্দ্র সঙ্গীত বুঝতেন না-কেউ আবার এ কথা ভেবে বসবেন না যেন! জওহরলার নেহরুর কন্যা যে শান্তিনিকেতনেও শিক্ষা গ্রহণ করেছেন তা ভুলে গেলে চলবে কী করে! ইন্দিরা গান্ধীর ‘প্রিয়দর্শিনী’ নামটা রবীন্দ্রনাথেরই দেওয়া। দেখতে ভীষণ সুন্দর ছিলেন বলে ইন্দিরাকে এ নামে ডাকতেন রবীন্দ্রনাথ। ইন্দিরা গান্ধীর মতো সুচিত্রা মিত্রও ছিলেন অপরূপ সুন্দরী। তবে রূপে তিনি জগৎ ভোলাননি, ভুলিয়েছেন সুরের জাদুতে। তাঁর গান প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল জওহরলাল নেহরুর ক্ষেত্রে। নেহরু তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সংক্ষিপ্ত সফরে কোলকাতায় গেলেন। দলীয় সমর্থকরা আনন্দ মিছিল করে বরণ করলেন তাঁকে। কিন্তু বিরোধীরা রাস্তায় নামলেন কালো পতাকা হাতে; আনন্দ নয়, বিক্ষোভ জানাতে। সেদিনই আকাশবাণীতে সুচিত্রা মিত্রের প্রোগ্রাম। সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাল্মিকী প্রতিভা থেকে গাইলেন, ‘কাজের বেলায় উনি কোথা যে ভাগেন, ভাগের বেলায় আসেন আগে।’ কারো বুঝতে বাকি রইলনা, আইপিটিএ-র সক্রিয় সদস্য সুচিত্রা মিত্র ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেই এ গান গেয়েছেন। পরিণতি যা হবার তা-ই হয়েছিল। টানা ছয় বছর ‘আকাশবাণী’তে নিষিদ্ধ ছিলেন সুচিত্রা মিত্র। কিন্তু মজার ব্যাপার, তাঁবেদাররা এভাবে এক হাত নিলেও স্বয়ং নেহরু কিন্তু প্রায় মেয়ের বয়সী শিল্পী সুচিত্রার ওপর ক্ষেপে যাননি, বরং গান শুনে একনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন তাঁর! গান দিয়ে মন জয় করার এর চেয়ে ভালো উদাহরণ খুঁজলেও বোধহয় খুব বেশি পাওয়া যাবে না, তাই না?
গানের সঙ্গে সুচিত্রা মিত্রের সখ্য একেবারে ছোটবেলা থেকে। প্রতি সন্ধ্যায় মা যখন ‘সন্ধ্যা হলো গো ও মা’ গাইতেন, ভালো তো লাগতই, কেন যেন খুব কান্নাও পেতো! বাবা সৌরিন্দ্র মোহন মুখার্জি ছিলেন উকিল। তবে ওকালতিটা পেশা, তাঁর আসল টান ছিল সাহিত্যচর্চায়। শিশুসাহিত্যিক হিসেবে সে আমলে বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। তাঁর লেখা ‘চালিয়াত চন্দর’, ‘মা কালীর খাঁড়া’, ‘পাঠান মুল্লুকে’ পড়েনি এমন পড়ুয়া কিশোর নাকি কমই ছিল তখন। আদালত থেকে বাড়ি ফিরলে হয় প্রমথেশ বড়ুয়া, দেবকি কুমার বসু, শিশির কুমার ভাদুড়িদের সঙ্গে আড্ডা, নয়তো লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন সৌরিন্দ্র মোহন। লেখায় ডুবে গেলে জগৎ ভুলে যেতেন। লিখতে সবসময় চেয়ার-টেবিলেরও দরকার পড়ত না, কাগজ-কলম পেলেই হলো, সৌরিন্দ্র বাবু এক ঘরের চৌকাঠে বুক পেতে শুয়ে পড়তেন, অন্য ঘরের মেঝেতে থাকত খাতা, ওভাবেই লেখালেখি চলত ঘণ্টার পর ঘণ্টা! এমন মানুষ কতটাই আর সংসারী হবেন? সংসারের কাজ-কর্মে এতটাই উদাসীন ছিলেন যে মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানোর কথাও নাকি ভুলে গিয়েছিলেন! অবশেষে স্ত্রীর মৃদু ভর্ৎসনায় তড়িঘড়ি সুচিত্রাকে নিয়ে ছুটলেন বেথুন কলেজিয়েট স্কুলে। ততদিনে বয়স ১০ পেরিয়েছে সুচিত্রার। ঘরে বসে যতটুকু লেখা-পড়া করেছে তাতে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি করানো যেতেই পারে। সৌরিন্দ্র বাবু তা-ই চেয়েছিলেন। কিন্তু পরীক্ষায় তাঁর মেয়ে ভগ্নাংশের অঙ্ক পারল না। অগত্যা কী আর করা, চতুর্থ শ্রেণীতেই ভর্তি করিয়ে দিলেন সুচিত্রাকে।
স্কুলে গান শেখাতেন অনাদি কুমার দস্তিদার আর অমিতা সেন। তাঁদের কাছেই সঙ্গীত শিক্ষার শুরু। তার আগে অবশ্য রেডিওতে প্রতি রোববার পঙ্কজ কুমার মল্লিকের সঙ্গীত শিক্ষার আসরও শুনতেন মন দিয়ে। সুতরাং মায়ের মতো পঙ্কজ মল্লিককেও সুচিত্রা মিত্রের পরোক্ষ শিক্ষক বলা যেতেই পারে। সঙ্গীত শিক্ষার আসর শুনে শুনে অসংখ্য গান শেখা হয়ে গিয়েছিল। নাচটাও জানা ছিল ভালো। ফলে দেরিতে স্কুলজীবন শুরু করলেও সেখানে সবার প্রিয় হয়ে উঠতে সময় লাগেনি। শান্তিনিকেতনেও তাই। ম্যাট্রিক পরীক্ষার কিছুদিন আগে হঠাৎই একটা সুখবর আসে – শান্তিনিকেতনে সঙ্গীতে ডিপ্লোমা করার স্কলারশিপ পেয়েছেন সুচিত্রা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংস্পর্শে সঙ্গীত শিক্ষার সুযোগ! সামনে জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন পূরণের দ্বার এভাবে খুলে যেতে দেখে যেমন আনন্দে আত্মহারা হলেন, ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগেই লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাটাও তেমনি পেয়ে বসল তাঁকে। বয়স মাত্র ১৭ তখন। এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেবেন কী করে? দ্বিধা-দ্বন্দ্বে একটু বেশি সময় কেটে গেল। তাতে জীবনে প্রথমবারের মতো জানা হলো, আনন্দ-বেদনা, দুঃখ-হতাশা প্রায় হাত ধরাধরি করেই চলে। নইলে স্কলারশিপ পাবার কয়েক দিনের মধ্যেই রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু-সংবাদ শোনার আঘাত সইতে হয়! ভেবেছিলেন যাবেনই না শান্তিনিকেতনে। রবি ঠাকুরই নেই, গিয়ে কী হবে সেখানে! আগে থেকেই মন বলছিল, পড়ালেখা বন্ধ করলে লোকে একসময় হয়তো বলবে, ‘আর কিছু পারে না তাই শিল্পী হয়েছে।’ শান্তিনিকেতনে না গিয়ে বেথুন কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষাটা দিলে আর সে অবস্থায় পড়তে হবে না। শুরুতে এমন ভাবলেও শেষ পর্যন্ত বিশ্বকবির মৃত্যুর ২০ দিন পর ঠিকই পা রাখলেন শান্তিনিকেতনে। রবি ঠাকুরকে নাইবা পেলেন, তাঁর গান শেখার সুযোগও পেয়ে হারাবেন, তা কি হয়!
শান্তিনিকেতনে গিয়ে প্রথম প্রথম কিন্তু পরিস্থিতি পুরোপুরি অনুকূলে পাননি। সুন্দরী এবং স্মার্ট বলে সহপাঠীরা একটু এড়িয়েই চলত তাঁকে। সবার মন জয় করতে সেখানেও বেশি দিন লাগেনি। সঙ্গীত শিক্ষার পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়েছেন। ম্যাট্রিক পাশ করেছেন প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে। গানের জন্য লেখাপড়া বন্ধ হতে দেবেন না – এ প্রতিজ্ঞায় অবিচল থেকে বিশ্বভারতীর সঙ্গীত বিভাগে শিক্ষকতা শুরুর অনেক পরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও নিয়েছিলেন।
শান্তিনিকেতনে ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী, শান্তিদেব ঘোষ এবং শৈলজানন্দ মজুমদার, ভিভি ভাঝালভাড়ে খুব যত্ন করেই গড়ে তুলেছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুচিত্রা মিত্রকে। তবে সুচিত্রা ছিলেন শান্তিদেব ঘোষের মানসকন্যা। খুব শুদ্ধতাবাদী। সে কারণে আইপিটিএ-র প্রিয় সহশিল্পী দেবব্রত বিশ্বাসের সঙ্গেও রবীন্দ্রসঙ্গীতে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহারের প্রশ্নে বিরোধ দেখা দেয়। এমনিতে দেবব্রত বিশ্বাসকে শিল্পী হিসেবে খুবই পছন্দ করতেন। একমাত্র ছেলে কুনাল সঙ্গীত শিল্পী হতে চাইলে সুচিত্রা তাঁকে বলেছিলেন, ‘হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বা দেবব্রত বিশ্বাসের মতো শিল্পী হতে পারবে মনে করলে চেষ্টা করে দেখ, নইলে পড়ালেখায় মন দাও।’ কুনাল আর শিল্পী হওয়ার চেষ্টা করেননি, লেখাপড়া করে প্রকৌশলী হয়েছেন।
তো শিল্পী হিসেবে যাঁকে এত সম্মান করতেন রবীন্দ্র সঙ্গীতের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে সেই দেবব্রত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেও পিছপা হননি সুচিত্রা মিত্র।
উল্টো দৃষ্টান্তও আছে। উৎসব ছবিতে ‘অমল ধবল …’ রবীন্দ্রসঙ্গীতটি গেয়েছিলেন শ্রাবণী সেন। বিশ্বভারতী সাফ জানিয়ে দিল, পরিবেশনা ঠিক হয়নি, সুতরাং এ গান ছবিতে ব্যবহার করা যাবে না। অর্ঘ্য সেন বিষয়টি সুচিত্রা মিত্রকে জানালেন। গানটা খুব ভালো করে শুনলেন সবার প্রিয় ‘দিদিমনি’। শুনে লিখে দিলেন, ‘এই গান এর চেয়ে ভালোভাবে কেউ গাইতে পারবে না।’ ব্যস, ওই একটি বাক্য পড়েই গানটি ছবিতে ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে দিল বিশ্বভারতী।
দেবব্রত বিশ্বাসের সঙ্গে মনোমালিন্য বা শ্রাবণী সেনের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানো – সুচিত্রা মিত্র যখন যা করেছেন সঙ্গীতকে ভালোবাসতেন বলে, উচিত মনে করতেন বলেই করেছেন। এ নিয়ে তাঁর সমালোচনা হতেই পারে, কিন্তু তাঁর জায়গায় যুক্তির দিক থেকে একশভাগ স্বচ্ছ ছিলেন তিনি। মনে তাই জোরও ছিল প্রবল। সমর্থন বা বিরোধিতায় তাই ছিলেন অকুতোভয়। এমনকি যে পরিস্থিতিতে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শিল্পী কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন সেখানেও নিঃসংকোচে এগিয়ে হাসি মুখেই ফিরেছেন সুচিত্রা মিত্র।
একবার কলকাতার রবীন্দ্র সদনে বিশ্বভারতীর শিল্পীদের অনুষ্ঠান ছিল। সহশিল্পীদের নিয়ে একটু দেরিতে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নিলীমা সেন সেখানে গিয়ে বিপদজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। শিল্পীদের দেরি দেখে দর্শকরা ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। কেউ কেউ মঞ্চের দিকে এটা-ওটা ছুঁড়ে মারতে শুরু করেছিলেন। এ অবস্থায় গাইতে যাওয়া মানেই মানসম্মান খোয়ানোর আশঙ্কা ছিল। সবার পরে গাইতে হবে বলে সুচিত্রা মিত্র এসেছিলেন আরো পরে। এসেই দুই বান্ধবী ‘মোহর’ (কণিকা), আর ‘বাচ্চু’কে (নিলীমা) ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতে দেখে উইংস থেকে সোজা মঞ্চে ঢুকতে ঢুকতে বললেন, ‘কিছু ভাবিস না। আমি দেখছি।’ মঞ্চে গিয়ে একটা চেয়ারের ওপর হারমোনিয়াম তুলে শুরু করেছিলেন গান। গান তো নয় যেন ম্যাজিক! মুহূর্তেই থেমে গিয়েছিল সব চিৎকার। একটানা বেশ কিছু গান গেয়ে সুচিত্রা বিদায় নিয়েছিলেন শ্রোতাদের কাছ থেকে, তারপরে নিরাপদ পরিস্থিতিতে কণিকা, নিলীমাও শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
মুড ভালো থাকলে কেউ বললেই গান শুনিয়ে দিতেন সুচিত্রা মিত্র। কিন্তু মেজাজ বিগড়ে গেলে শত অনুরোধেও গাইতেন না। যখন-তখন, যে কোনো পরিবেশে গাওয়ার লোক একেবারেই ছিলেন না। তাঁর এই রূপটা কাছ থেকে দেখেছিলেন ‘উস্তাদ আমজাদ আলি খান’। তাঁর সরোদ আর সুচিত্রা মিত্রের রবীন্দ্রসঙ্গীতের যুগলবন্দির একটা ক্যাসেট প্রকাশ করেছিল এইচএমভি (এখন সারেগামা)। কলকাতার দমদম বিমানবন্দরের কাছে এইচএমভির একটা স্টুডিও ছিল। সেখানেই হয়েছিল অসাধারণ সেই সাঙ্গীতিক যুগলবন্দি। রাতের পর রাত রিহার্সাল হয়েছিল। রেকর্ডিং তো হয়েছিলই। আমজাদ আলি খান তখন দেখেছিলেন গানের সঙ্গে সুচিত্রার সম্পর্ক কতটা আবেগের। এমনও হয়েছিল, গানের সময় একটা বিমান উড়ে গিয়েছিল শব্দ করে, সেই শব্দেই মুড খারাপ হয়ে গিয়েছিল সুচিত্রা মিত্রের। সঙ্গে সঙ্গে গান বন্ধ। আর গাইতেনই না! সে অবস্থায় সারাদিনের জন্য রেকর্ডিং বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় থাকত না। আবার এমনও হত, তাঁর মুড যখন ভালো থাকত তখন চারদিকে কী ঘটছে, কে কী ভাবছে তার তোয়াক্কা না করে গলা ছেড়ে গেয়ে চলতেন সুচিত্রা মিত্র।
সবার মাঝে থেকেও সুচিত্রা মিত্র এভাবেই সবার চেয়ে আলাদা। অনেকটা একলাও। একলা চলার গান গেয়ে গেছেন, প্রেরণা জুগিয়েছেন অন্যদের। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, শেষ জীবনে নিজেই হয়ে পড়েছিলেন একা! বিয়ের সাত বছর পরই বিচ্ছেদ। ছোট বোন অকালে মারা যাওয়ায় তাঁর মেয়েটিকেও নিয়ে এসেছিলেন নিজের ঘরে। ছেলে কুনালের সঙ্গে তাঁকেও পেলে-পুষে মানুষ করেছেন নিজের সন্তানের মতো। প্রকৌশলী ছেলে জীবিকার টানে চলে গেল দেশের বাইরে। মেয়ে স্বামীর সংসারে। ব্যক্তিজীবনে সেই থেকে সুচিত্রা মিত্রের সত্যিকার অর্থেই একলা চলার শুরু।
বয়স শরীর কাহিল করার পাশাপাশি কণ্ঠকেও কাবু করে ফেলছিল। প্রকৃত শিল্পীর মৃত্যুর পথে যাত্রা তো সেখান থেকেই শুরু। একটা ঘটনা জানা যায় সাহিত্যিক ‘শ্রী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের’ স্মৃতিচারণে। আশাপূর্ণা দেবীর জন্মদিনে গান গাইতে বসেছিলেন সুচিত্রা মিত্র। গান শুরু করেছিলেন। কিন্তু কণ্ঠ কেমন যেন ম্রিয়মান লাগছিল। সুনীল চেয়ে দেখেছিলেন, সুচিত্রা মিত্র কাঁদছেন! বিস্ময়ে সুনীল জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘এ কি! দিদি, আপনি কাঁদছেন কেন?’ তাঁর কানে সুচিত্রার জবাবটা লেগেছিল আর্তনাদের মতো, ‘গলায় সুর লাগছে না। তাহলে আর বেঁচে থেকে লাভ কী?’
তারপর খুব বেশিদিন আর ওই কষ্টকে সঙ্গী করে থাকেননি। রোগযন্ত্রণা, হাসপাতাল – এসব একেবারে সহ্য করতে পারতেন না সুচিত্রা। বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছের বহুতল ভবনটির দশতলায় তাঁর একমাত্র সঙ্গী ছিলেন সোমনাথ ঘোষ। গাড়ি চালানোর পাশাপাশি ‘দিদিমনি’র দেখভালও করতেন। সেদিন সকালটাকে নাকি একটু বেশিই সুন্দর মনে হয়েছিল। খুশি খুশি মন নিয়েই খেতে বসেছিলেন দুপুরে। তারপর? সুরহারা হওয়ার ভয়কে জয় করে চিরবিদায়!
(তথ্যসূত্র:
১- জীবনশিল্পী সুচিত্রা মিত্র: নির্বাচিত প্রবন্ধমালায় বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী, শৈলেন্দ্র হালদার, একুশ শতক।
২- পুরনো আখরগুলি, সুচিত্রা মিত্র।
৩- Calcutta: a cultural and literary history, Krishna Dutta, Signal Books (২০০৩)।)
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত