এতদিন যা হয়নি, মোদী জমানায় এবার সেটাই হয়েছে। দেশের শিক্ষানীতিকে আমূলে বদলে ফেলতে চলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। গত সপ্তাহে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে জাতীয় শিক্ষা নীতির যে খসড়া জমা পড়েছে, সেখানে প্রস্তাব রয়েছে, দেশের সব রাজ্যেই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দি ভাষা পড়ানো বাধ্যতামূলক করা হোক৷ আর তারপরই কেন্দ্রের নতুন শিক্ষানীতিতে কৌশলে অহিন্দিভাষী রাজ্যগুলির ওপরে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলেই মনে করছে তামিলনাড়ুর প্রতিটি রাজনৈতিক দল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এডাপ্পাডি কে পালানিস্বামী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কিছুতেই কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন শিক্ষানীতি রাজ্যে প্রয়োগ করবেন না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি আবেদন জানিয়েছেন, নতুন শিক্ষানীতি পুনর্বিবেচনা করুন।
পালানিস্বামী বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘নতুন শিক্ষানীতিতে ত্রিভাষা সূত্র বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি, তিনি যেন ওই সূত্র নিয়ে পুনর্বিবেচনা করেন। প্রতিটি রাজ্য তার বিবেচনামতো নতুন শিক্ষানীতি কার্যকর করুক।’ ত্রিভাষা সূত্রে অবশ্য আগেই বলা হয়েছে, প্রতিটি রাজ্য স্থির করবে, কোন ভাষাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে তামিলনাড়ুতে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছিল, তার কথা উল্লেখ করেছেন পালানিস্বামী। সেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন প্রাক্তন তিন মুখ্যমন্ত্রী আন্নাদুরাই, এমজি আর এবং জয়ললিতা। কিছুদিন আগে ডিএমকে-র নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলি পালানিস্বামী সরকারের কাছে আবেদন জানায়, কেন্দ্রের নয়া শিক্ষানীতি বয়কট করা হোক। কারণ ওই শিক্ষানীতিতে কৌশলে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের জাতীয় শিক্ষা নীতির প্রধান, ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান কে কস্তুরীরঙ্গন৷ তাঁরই নেতৃত্বে নির্মিত জাতীয় শিক্ষা নীতির খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে, দেশের সব স্কুলে তিনটি ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক৷ হিন্দিভাষী রাজ্যে হিন্দির সঙ্গে ইংরেজি ও যে কোনও একটি ভারতীয় আধুনিক ভাষা শিখতে হবে৷ অহিন্দিভাষী রাজ্যে হিন্দি এবং ইংরেজির সঙ্গে শিখতে পারা যাবে একটি আঞ্চলিক ভাষা৷ এদিকে, দক্ষিণী বিভিন্ন রাজ্যে নিজেদের আঞ্চলিক ভাষাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ কিন্তু নতুন শিক্ষানীতির খসড়া বাস্তবায়িত হলে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরালা, কর্ণাটকে আঞ্চলিক ভাষাটি তৃতীয় ভাষার মর্যাদা পাবে, যা তাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে রাজ্যগুলি জানিয়ে দিয়েছে৷ এমডিএমকে নেতা ভাইকোর মন্তব্য, ‘এটা ভাষা যুদ্ধ’৷ তাদের স্পষ্ট ঘোষণা, তামিলনাড়ু তামিল ও ইংরেজি ছাড়া আর কোনও ভাষা স্কুলে পড়ানো বাধ্যতামূলক করা হবে না৷