প্রদীপের নীচেই যে অন্ধকার রয়েছে, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তিনি। চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য হয়েও বাস্তবের রুক্ষ জমিতে যে এ ভাবে আছড়ে পড়তে হবে, তা আগাম বুঝতে পারেননি একেবারেই। আর ঠিক এই জন্যেই এটিকের উইনিং টিমের মেম্বার বিশ্বজিৎ সাহা এখন ফুটবল ছেড়ে ফাস্টফুডের দোকান চালা।
ফুটবল ছেড়ে সম্পূর্ণ অন্য এক পেশায় এখন তিনি। বছর দু’য়েক আগে ফাস্ট ফুডের একটা দোকান খুলেছেন। কিন্তু লকডাউনে ফের ভাগ্য বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন তিনি। একসময়ে কলকাতা ময়দানের পরিচিত মুখ আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, ‘‘লকডাউনে সব সেক্টরেরই অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে। আমারও রোজগার প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে।’’
ফেলে আসা দিনগুলোর দিকে পিছন ফিরে তাকালে বিশ্বজিৎ সাহার এখন মনে হয় কেরিয়ারের সোনালি সময়ে শহরের ফ্র্যাঞ্চাইজি এটিকে থেকে কক্ষচ্যুত হয়ে পড়াতেই তাঁর সব স্বপ্নগুলো তালগোল পাকিয়ে গেল।
সবুজ-মেরুন বা লাল-সাদা জার্সি পরে সে সব দিনের কথা এখন তাঁর কাছে রূপকথার মতোই শোনায়। চেনা পরিচিতরা যখন তাঁকে বলেন, “তুইও তো খেলতিস”— তখন একসময়ের সাইড ব্যাকের বুকে তা যেন ঝড়ই তোলে।
সবুজ ঘাসের মাঠই তো তাঁর আসল জায়গা। ফুটবলের মায়া কাটিয়ে ফাস্ট ফুড সেন্টারে কেন এটিকে-র চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য? বিশ্বজিৎ বলছিলেন, ‘‘আইএসএল-এর প্রথম বছর আমি এটিকে-র হয়ে খেলি। ২০১৪ সালে আইএসএল-এর প্রথম সংস্করণে আমরাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল বাদে সবক’টি ম্যাচই খেলেছিলাম। এটিকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে আমি স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়ায় লোনে খেলতে চলে যাই। আমার ম্যানেজার গোয়ায় এটিকে-র চুক্তিপত্র নিয়ে যায়। দু’বছরের চুক্তিতে আমি সইও করি। চুক্তিতে সই করে দিয়েছি বলেই অন্য ক্লাবের প্রস্তাব নিয়ে আমি আর ভাবনাচিন্তাই করিনি।’’
তখন নিয়ম ছিল, সব দল আগের বছরের ৬ জন করে ফুটবলারকে ধরে রাখতে পারবে। সেই ৬ জনের মধ্যে নাম ছিল এটিকে-র দু’নম্বর জার্সিধারীরও। দ্বিতীয় বছরের মরসুম শুরুর আগে তাঁর এজেন্ট জানান, চুক্তি বাতিল করে দিতে হবে। বিশ্বজিৎ বলছেন, ‘‘আমাকে সই করানোর পরেও কেন যে দলে রাখা হল না, সেটা কোনও দিন জানতে পারিনি।’’