একসময় কলকাতায় স্টোনম্যানের আতঙ্কে ঘুম উড়েছিল শহরের ফুটবাথবাসীদের। সেই ঘটনার নেপথ্যে কে বা কারা, সেটার হদিশ পেতে নাজেহাল হয়েছিল কলকাতা পুলিশ। কার্যত একই ভঙ্গিতে কয়েকবছর ধরে পূর্ব বর্ধমান ও সংলগ্ন কয়েকটি জেলায় ধারাবাহিকভাবে খুনের ঘটনা ঘটছিল। তবে খুনের ধরণটা ছিল একটু আলাদা। মহিলা সদস্য বাড়িতে একা রয়েছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই বিদ্যুতের মিটার দেখার অছিলায় গৃহস্থ বাড়িতে ঢুকত আততায়ী। মুহূর্তে চেন দিয়ে পেঁচিয়ে খুন করত মহিলাদের। এরপর দেহের সঙ্গে মেতে উঠত যৌনতায়। একের পর এহেন ঘটনা ঘটায় নড়েচড়ে বসেছিল পুলিশ।
এরপর গত বছরের ৩০ মে কালনা থানার সিঙ্গেরকোণ গ্রামে এক কিশোরী চেন কিলারের লালসার শিকার হয়। তবে এক্ষেত্রে খুনের পর নয়, আগেই কিশোরীর উপর যৌন নির্যাতন চালায় অভিযুক্ত। বরাত জোরে সেই মুহূর্তে প্রাণে বেঁচে যায় সে। কিশোরীর মা বিকেলে ঘরে ফিরে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে তাঁর মেয়ে। তবে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও নির্যাতিতাকে বাঁচানো যায়নি। ১২ জুন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই কিশোরীর। তখনও খুনি কামরুজ্জামানের নাগাল পায়নি পুলিশ। ঘটনার মোড় ঘুরে যায় ওই বছরেরই ২২ জুলাই। পুলিশ চেন কিলারকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় সন্ধান চালাচ্ছিল।
সেই সময় কালনার কাঁকুড়িয়ার রাস্তা থেকে সন্দেহ হওয়ায় কামরুজ্জামান সরকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁকে চেপে ধরতেই সে কিশোরীকে খুনের কথা স্বীকার করে নেয় বলে জানায় তদন্তকারীরা। এরপর ওই বছরের ২৫ আগস্ট পুলিশ আদালতে চার্জশিট পেশ করে দেয়। ৭ সেপ্টেম্বর চার্জ গঠন হয়। কালনা মহকুমা আদালতে শুরু বিচার। মামলায় ৩৫ জন সাক্ষ্য দেন। এবার খুনের পর যৌন নির্যাতনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত বর্ধমানের সেই চেন কিলারকে ফাঁসির সাজা দিল কালনা আদালত। আজ কালনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক তপনকুমার মণ্ডল খুনি কামরুজ্জামানের সাজা ঘোষণা করেন। এই রায়ে খুশি নির্যাতিতা ও মৃতদের পরিবারের সদস্যরা।