মারণ করোনা ভাইরাসের থাবায় ক্রমশঃ গোটা দেশজুড়েই মৃত্যুর মিছিল বেড়ে চলেছে। কিন্তু এই মারণ ভাইরাস যে আরও কত কিছু শেষ করে দিচ্ছে, তার বেশিরভাগটাই অজানা থাকছে আমাদের কাছে। যেমন মণিপুরের ২২ বছরের তরুণী বাবাকে শেষ দেখার জন্য তিন মিনিটের বেশি সময় পেলেন না। কান্নায় ভেঙে পড়া মেয়েটির কাঁধে কেউ হাতটুকু রাখতে পারল না। করোনার ভয়ের থেকেও আরও বেশি করে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেল তাঁর জীবনের হৃদয়বিদারক যন্ত্রণার মুহূর্তটি।
ইম্ফলের একটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে ছিলেন ২২ বছরের অঞ্জলি হেমাঙ্গতে। করোনার উপসর্গ রয়েছে তাঁর। পরীক্ষা হয়নি এখনও। তবে আইসোলেশনে রাখার কথা বলেছেন চিকিৎসকরা। মণিপুরের কাঙ্গপোকপি-তে বাড়ি তাঁর। মঙ্গলবার রাতে খবর পান, মারা গেছেন তাঁর বাবা। বাবা দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন অসুখে। বাবার মৃত্যুর পরে তাঁকে শেষ দেখা দেখতে বুধবার কোয়ারেন্টাইন সেন্টার থেকে বাড়িতে আনা হয় তরুণীকে।
মন ভেঙে দেওয়া একটি ভিডিওয় দেখা গেছে, তরুণী তাঁর বাবার কফিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, হাঁটু গেড়ে বসে উঁকি মেরে দেখছেন তাঁর শেষ দেখাটুকু। ছুঁতে পারছেন না। কাঁদছেন, কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর মা বা অন্য কোনও আত্মীয় মেয়েটিকে সান্ত্বনা দিতে পর্যন্ত এগিয়ে আসতে পারছেন না, কারণ মেয়েটি নিজের শরীরে করোনার উপসর্গ বহন করছে।
অন্যদিকে প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে আছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ঘড়ি দেখছেন চিকিৎসকরা। তিন মিনিটের বেশি সময় নেই। সময় হতেই তরুণীকে সরিয়ে আনা হল বাবার কফিনের পাশ থেকে। ফিরতে হবে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। ফিরতে ফিরতে বাঁধ ভাঙে যন্ত্রণা। কান্না উপচে পড়ে তরুণী কন্যার। বাবার শেষবিদায় যে এমন হবে, কখনও দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি তিনি।
জানা গেছে, মেয়েটির শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরেই ইম্ফলের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে ঠাঁই হয় তাঁর। এরই মধ্যে খবর আসে, বাবা মারা গিয়েছেন। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে, পিপিই কিট পরে বুধবার বাবার শেষকৃত্যে একবারটি যাওয়ার সুযোগ পান তিনি। কফিনের ভিতরে চিরঘুমে থাকা বাবাকে দেখতে পান চোখের দেখা। কিন্তু সবমিলিয়ে ৩ মিনিট। ওইটুকু সময়ই ছিল বাবা-মেয়ের মধ্যে।