খবরটা ঝাঁকিয়ে দিয়েছিল সকালে। খুব রাগ হচ্ছিল। বিশ্বাস হচ্ছিল না কিছুতেই মানুষ এটা করতে পারে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই ঘটনাকেন্দ্রিক আরো তথ্য এলো, আরো কথা মনে পরলো, আরো সত্যতা। সত্যি তো। মানুষ এটা অনেকদিন ধরেই তো করছে। আমাদের কখনো নাড়িয়ে দিয়ে যায় কোন ভ্রূণের ছবি, কখনো শান্ত থাকি।
মানুষ বড় জটিল এক জাত। এর ঠিক কোনটা নৃশংস লাগে আর কোনটা সুস্বাদু সেটা বোঝা দায়। কোনটা সংবেদনশীলতা আর কোনটা নরপিশাচের কাজ সেই বিচারবোধটা ও স্থান-কাল-পাত্র বিশেষে পাল্টে যায়।
কয়েকটি তথ্য সামনে এসেছে। না গর্ভবতী হাতিটিকে হাতে করে বোমা বাঁধা আনারস খাওয়ানো হয়নি। ওটা টোপ ছিল। পথ ভুলে হাতিটি চলে আসে। সাধারণত ওদের জন্য বরাদ্দ থাকে ইলেক্ট্রিকের বেড়াজাল। নিয়তি বলবো না Man vs. Wild এর এই লড়াইয়ে করুণ পরিনতি? খিদের চোটে ওই আনারসটাই খেতে হলো।
ঘরে বানানো বোমা, ফল বা মুরগীর পেটে গুঁজে দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয় এই টোপ। অনন্তকাল ধরে গ্রামে এই টোপ ব্যবহার করা হয়। মূলত বন্য শুয়োর, নীলগাইয়ের আক্রমণ থেকে ক্ষেতকে বাঁচানোর জন্য। শুয়োর কামড়াতে গেলেই বোমা ফেটে যায়, সাথে গায়ে আগুন লাগে। এতে শুয়োরের গায়ের লোম পরিস্কার হয়ে যায়, মারা ও সহজ হয়। আপনারা জানেন শুয়োর মারা দুস্কর এক কাজ।
টকটকে লাল গরম লোহার রড ঢুকিয়ে দেওয়া হয় পেছন দিয়ে৷ শুয়োর গগনবিদারী আওয়াজ করতে করতে মারা যায়। তারপর এক সময় প্লেটে ওঠে৷ এভাবেই গরু কাটা হয় তার পা ভেঙে। দামি মাংস কাটা হয় মেশিনে মাথায় নিপুণ কোপ মেরে।
আড়াই প্যাঁচে পশুর যুগুলার ভেইন কেটে দেওয়া হয় এবং ওই সেনশেসনে যে তড়পানি হয়, তার মাধ্যমে ম্যাক্সিমাম রক্ত বেরিয়ে যায় পশুর শরীর থেকে। যেহেতু রক্তের মাধ্যমেই সবথেকে বেশী জীবানু সংক্রমিত হয়, তাই এটাই বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি নাকি। খেতে ও দারুণ হয়।
পুঁচকি শুয়োরের বাচ্চাকে গোটা ঝলসানো হয়। সাকলিং পিগ বলে। কচি মাংস। তুলতুলে নরম। ষাঁড়ের জিভ কেটে লোভনীয় পদ হয়। কচি পাঁঠা নিয়ে ও আমাদের আমোদ কম না৷ হাতির মাংস খাই না। তাই কি ধাক্কাটা বুকে এসে লাগলো? কে জানে!
গল্পটা শেষমেশ বোধহয় Hunter আর Hunted এরই। গল্পটা বোধহয় selective outrage এরই। নৃশংসতা নিয়ে কেন সমান রাগ হয় না আমাদের? ভিল মানে বাছুরের মাংস, কচি পাঁঠা বা মুরগী হোক, খাই তো আনন্দের সাথেই। তবে কি vegan হয়ে যাওয়াই সব সমস্যার উত্তর?
বাচ্চা হাতির ভ্রূণের ছবি না দেখিয়ে মিষ্টি মিষ্টি স্কেচ, কার্টুন এঁকে আমরা নিজেদের বেদনার বহিঃপ্রকাশ করছি। আমরা সবাই তো নিরামিষাশী না। মাংস খাই কোন না কোন প্রাণীর। তারপর যুক্তি সাজাই। আমি হাতির মাংস খাই না। স্রেফ চিকেন। কিন্তু কেউ না কেউ তো বাঁচতে খায়। যেমন অনেকে কুকুর খায় বা বন্য শুয়োরের জন্য বোমা রেখে দেয়। আমরা ঠিক কতোটা কম খারাপ হিসেবে নিজেদের ধরবো?
এবার সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এরকম এক আধদিন প্রতিবাদ করবো না এবার পশু নৃশংসতার বিরুদ্ধে কড়া আইন আনতে বলবো সরকারকে? যাদের দেখা যাবে কুকুরের লেজে কালিপটকা বাঁধছে, বাজি ঢুকিয়ে দিচ্ছে, পাথর মারছে তাদের কঠোর সাজা দেওয়া হোক। বাকি কয়েকটি পশুকে খাদ্যপণ্য হিসেবে চিহ্নিত করে রাখবো? ওদের জন্মই হবে আমাদের প্লেটে পিস পিস শোয়ার জন্য না হয়? Hierarchy অনুসারেই আমরা শোকজ্ঞাপন করি? আর breed দেখে কুকুরের দত্তক নিই?
যতোদিন না হাতি বা সিংহ নিজের ইতিহাসটা নিজে লিখতে শিখছে, ইতিহাস তো মানুষের উদারতা, তার বাকিদিনের উদাসিনতা পরে ও একদিন নৃশংসতার প্রতিবাদ করা, তার রাগে ফেটে পরার গল্পই বলে চলবে সৌখিন ডাইনিং টেবিলে।
আপনার রাত শুভ হোক। মিষ্টি একটা ছবি দেখে ঘুমাতে যান। বাস্তবের বা জবাইয়ের সময়ের রক্ত আপনার অসংবেদনশীল মনে হয়। তারপরেরটা অবশ্য Delicacy!
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত