গত ২৫ মার্চ থেকে গোটা দেশজুড়ে চলছে একটানা লকডাউন। আর এর জেরেই বিপাকে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভিনরাজ্যের শ্রমিকরা। এবার সেই পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা লাঘব করতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করল সুপ্রিম কোর্ট। দেশজুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের থেকে ট্রেনের ভাড়া নেওয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিল দেশের শীর্ষ আদালত। বৃহস্পতিবার বিচারপতিরা সাফ জানিয়ে দেন, আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবার ও জলের ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট রাজ্যকেই করতে হবে। ওই শ্রমিকদের থেকে ট্রেন বা বাসের ভাড়া নেওয়া চলবে না। এমনকী, ট্রেন বা বাসে আসার সময় তাঁদের খাবার ও জলের ব্যবস্থা করতে হবে। রেলকেও যাত্রাপথে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবহণের রেজিস্ট্রেশনের সময় রাজ্যগুলিকে সেই বিষয় নজর রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত, ১ মে থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে ট্রেন চালাতে শুরু করে কেন্দ্র। কিন্তু ট্রেনের ভাড়া নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের টানাপোড়েন চলছিল। এবার তা নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যকে নোটিশ ধরিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার সেই নোটিশের জবাবে কেন্দ্রের তরফে জানান হয়, ইতিমধ্যেই ৯১ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে ঘরে ফেরানো হয়েছে। বাকি সকলকে ঘরে ফেরাতে বদ্ধপরিকর কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও এদিনও একের পর এক কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রের প্রতিনিধিকে। পরিযায়ী শ্রমিকদের অন্ন, পরিবহণ, বাসস্থান নিয়ে অন্ততটি ৫০টি প্রশ্ন করা হলে বেজায় অস্বস্তিতে পড়তে হয় সলিসিটার জেনারেলকে। এদিন পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে একগুচ্ছ নির্দেশও দেয় শীর্ষ আদালত।
উল্লেখ্য, করোনার সংক্রমণ রুখতে গত ২৫ মার্চ থেকে দেশজুড়ে লকডাউন চলছে। এর ফলে সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। ১০ দিন আগে তাঁদের দুর্দশার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির ভূমিকা নিয়ে একটি মামলা দায়ের হলে পত্রপাঠ তা খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু, এবার কংগ্রেস ও সমাজকর্মী মেধা পাটেকরের দায়ের নতুন একটি মামলার প্রেক্ষিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার কারণ জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলিকে নোটিশ পাঠায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বৃহস্পতিবার তারই জবাবে কেন্দ্রের তরফে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা জানান, পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে ১ মে থেকে বিশেষ ট্রেন চালানো শুরু হয়েছে। তাতে ইতিমধ্যে ৯১ লক্ষ শ্রমিককে ঘরে ফেরানে সম্ভব হয়েছে।
একইসঙ্গে তিনি আরও জানান, প্রতিটি পরিযায়ী শ্রমিককে ঘরে না ফেরানো পর্যন্ত কেন্দ্র তাদের প্রচেষ্টায় খামতি রাখবে না। আর ট্রেনও বন্ধ হবে না। তবে এদিনও তিন বিচারপতির বেঞ্চের কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রের প্রতিনিধিকে। বিচারপতিরা সলিসিটার জেনারেলের কাছে জানতে চান, ‘কেন রেজিস্ট্রেশনের পরও বাড়ি ফেরার জন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে ? শ্রমিকদের কাছে কি টাকা চাওয়া হচ্ছে? তাঁদের খাবার ও আশ্রয়ের কী ব্যবস্থা করা হচ্ছে?’ উত্তরে তুষার মেহতা জানান, একসঙ্গে সকলের জন্য পরিবহণের ব্যবস্থা করা কঠিন। কিন্তু গাড়ি না পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের খাবার ও থাকার দায়িত্ব নিচ্ছে সরকার। এই মামলা শোনার পরই নিজের রায়ে উপরিউক্ত নির্দেশগুলি দেয় শীর্ষ আদালত।