মুজফ্ফনগর রেল স্টেশনে নিজের মনেই মায়ের চাঁদর ধরে ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করছে তিন বছরের এক শিশু। কিন্তু কঠিন সত্যটা ওই দুধের শিশুর বোঝার জো নেই। ওর মা আর কোনো দিনও উঠবে না। রেলস্টেশনে প্ল্যাটফর্মের উপর পড়ে মায়ের নিথর দেহ। কখনও চাদর ধরে টানছে সে। কখনও সেই চাদর নিয়ে নিজের মাথা ঢাকছে। কখনও চাদর ফেলে রেখে একবার প্ল্যাটফর্মে ঘুরে আসছে। এসেই আবার মায়ের গায়ের চাদর ধরে টানছে। মা শুয়ে আছে… অনেকক্ষণ ধরে। কিছুতেই উঠছে না। আর মাকে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দুধের শিশু। দেশজুড়ে পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যার এই নিদারুণ মর্মান্তিক ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়েছে বিহারে।
পরিবারের লোকদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, গুজরাটে কাজ করতেন ওই মহিলা। বিহারে বাড়ি ফেরার জন্য রবিবার সেখান থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত স্পেশাল ট্রেনে ওঠেন ওই মহিলা। দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যাভাবে তাঁর শরীর ভালো ছিল না। এরপর ট্রেনের ভিতর খাবার ও জলের অভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তারপর মারা যান।
ট্রেন মুজফ্ফরপুরে পৌঁছালে, ওই মহিলার নিথর দেহ ট্রেন থেকে নামানো হয়। দেহ নামিয়ে যখন প্ল্যাটফর্মে শুইয়ে রাখা হয়েছে, তখনই ওই মহিলার একরত্তি শিশু তাঁর গায়ে জড়ানো চাদর নিয়ে খেলতে শুরু করে।
মাস দুয়েক আগে করোনা সংক্রমণ রুখতে দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই সামনে এসেছে অভিবাসী শ্রমিকদের দুর্ভোগ। একের পর এক, এই ঘটনা আর দেখা যাচ্ছে না। ভিন রাজ্যে কাজ হারিয়ে চরম সংকটে পড়েন তাঁরা। বাড়ি ফেরার জন্য উপায়ান্তর না দেখে কেউ মাইলের পর মাইল হাঁটেন, কেউ সাইকেল প্যাডেল করেন। পথের ক্লান্তি, দুর্ঘটনা কেড়েছে একের পর এক প্রাণ। ১২ বছরের কিশোরী থেকে ৭২ বছরের বৃদ্ধ। মৃত্যুর তালিকা ক্রমে দীর্ঘ হয়েছে।