প্রতি বছর ২০ মার্চ হয় বসন্ত বিষুব। ওই বিশেষ দিনে নিরক্ষরেখা উপরে সূর্যের উলম্ব অবস্থানের কারণে দিন-রাত সমান হয়। চীনে রীতি রয়েছে, ২০ মার্চের ১৫ দিন পরে, অর্থাৎ ৪ এপ্রিল পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে খাবার, ওয়াইন ও প্রিয় জিনিস রেখে আসতে হয় কবরে। আজ ৪ এপ্রিল। নিয়মমতো আজই কয়েক শতাব্দী ধরে চলে আসা সেই বিশেষ দিন। কিন্তু এই বছর করোনা ধ্বংসলীলায় বদলে গিয়েছে গোটা ছবিটাই। অসংখ্য প্রিয়জনকে হারিয়েছেন প্রতিটা মানুষ। এই মারণ ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে কয়েক হাজার প্রাণ। শোনা যাচ্ছে, বহু পরিবার এখনও তাঁদের সদস্যের মৃত্যুর পরে কবর দেওয়ার সুযোগও পাননি। কফিনবন্দী হয়ে পড়ে আছে দেহ। যাঁর ফলে অন্যান্য বছরের থেকে এ বছরের ছবিটা আলাদা। এমনকী যাঁরা সমাহিত হয়েছেন, তাঁদের কবরেও নেই প্রতি বছরের মতো ভিড়।
প্রসঙ্গত, চীনের সরকার দাবি করেছে, হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ২৫৬৩ জন মারা গেছেন করোনাভাইরাসে। কিন্তু আজ সে শহরের হাহাকার আজ বলছে, সংখ্যাটা সরকারি হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি। একটি প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। তাদের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, গত দু’সপ্তাহ ধরে লম্বা লাইন পড়েছে উহানের সরকারি দফতরে। সকলেই প্রিয়জনদের দাহ করার পরে ছাই সংগ্রহ করতে এসেছেন। কেউ কেউ ছ’ঘণ্টা পর্যন্তও দাঁড়িয়ে থাকছেন। শুধু তাই নয়। এখনও পর্যন্ত দফায় দফায় কবর দেওয়া হচ্ছে অসংখ্য লাশ। ১৯-২০ ঘণ্টা করে কাজ চলছে একটানা। কেইক্সিন ম্যাগাজিনের রিপোর্ট বলছে, শেষ দু’দিনে অন্তত পাঁচ হাজার কফিন এসেছে সেখানে।
ওয়াশিংটন পোস্ট প্রশ্ন তুলেছে, চীনের দেওয়া মৃত্যুর পরিসংখ্যান তাহলে কতটা সত্য? চীনের নিজস্ব সোশ্যাল সাইটে যা তথ্য পাওয়া গেছে তাতে জানা যাচ্ছে, গত দেড় সপ্তাহ ধরে উহানের ফিউনেরাল হোমগুলি থেকে তিন-সাড়ে তিন হাজার দেহ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রতি দিন। ওয়াশিংটন পোস্টের দাবি, সমস্তটা যাচাই করে ধারণা করা যায়, উহানের মৃতের সংখ্যা কম করে ৪২ হাজার। সরকার যা বলেছে, তার ১৬ গুণ বেশি। উহানের সাধারণ মানুষও বলছেন, সরকারি তথ্যে বড় গাফিলতি রয়েছে। কারণ কবরস্থানগুলি উপচে পড়েছিল। মাত্র আড়াই হাজার মৃত্যুতে এমনটা হওয়ার কথা নয় মোটেই। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টও একই কথা বলছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।