শাহরুখ খান। নাম তো সুনা হোগা! এবার দানের পরিমাণ ভি সুনলো। সব্বাই যখন টাকার পরিমাণ জাহির করে করে ক্লান্ত, SRK এলেন, নিজের সেই চেনা কায়দায় দুহাত তুলে ভরসা দিলেন কোটি কোটি ভারতবাসীকে: ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে৷
শাহরুখ খান- নাম তো সুনা হোগা। দান খয়রাতি ভি সুনলো। তার আগে একটা গল্প বলি। শাহরুখ খান একটা কথা বারবার বলেন, There is no Novelty in Poverty. মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে তো। দিল্লির এঁদো গলি থেকে মন্নতের সফরটা গোলাপ বেছানো ছিল না যে। ওর কথাতেই, বাবা যখন মৃত্যু শয্যায়, ইঞ্জেকশন কেনার ও টাকা থাকতো না। এক পিসি বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতো৷ কিন্তু সেটা ও, কয়েকটার টাকা। হয়তো ২০টা ইঞ্জেকশন লাগতো, বাবাকে দেওয়া হতো ৭টা। শাহরুখ খান দারিদ্র্য দুর্দশা দেখেছে বলেই দারিদ্রদের দান করার সময় বড়াই করে না।
বিয়ে শাদি হয়ে যাওয়া, মাসকমে এম.এ পাশ, সামান্য নাটক করা এক ছেলে ছিল শাহরুখ খান। মোটেও ভালো দেখতে না। শ্যামবর্ণ, গালে টোল আছে। মুম্বাইয়ের মেরিন ড্রাইভ এলাকার ঠিক মাঝে যেখান থেকে সমুদ্র আর চারপাশ সমুদ্ররানীর নেকলেসের মতো লাগে, ঠিক সেখানে দাঁড়িয়ে ছেলেটা সেদিন বলেছিল, একদিন আমি এই গোটা শহর রাজ করবো৷ এই এখানে বাড়ি করবো, ওইখানে থাকবে অফিস। পাগলের প্রলাপ গুটিকয়েক বন্ধু শুনেছিল শুধু।
বাকিরা অর্থ দান করে, শাহরুখ খান গোটা দশেক এনজিওর এক বছরের দান নিজে একা করে ঠিক করে আর কতো অর্থ দরকারি। ইনশাআল্লাহ মানুষ বেঁচে যাক!
শাহরুখ খান তার ক্রিকেট টিম, প্রযোজনা সংস্থার হয়ে প্রধানমন্ত্রী, মহারাষ্ট্রর মুখ্যমন্ত্রী আর বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে একটা মোটা টাকা দিচ্ছেন। এছাড়া ৫০,০০০ পিপিই কিট দিচ্ছেন হাসপাতালে, বাংলা আর মহারাষ্ট্রের হাসপাতালের জন্য আরো অর্থ সাহায্যের ব্যবস্থা করছেন কয়েকদিনে যাতে তাদের ভেন্টিলেটর বা পিপিই কিটের আকাল না হয়। মুম্বাইয়ে কোরোনার কারণে বেকার হয়ে যাওয়া ৫৫০০ দিন আনি দিন খাই পরিবারকে রোজ তিনবেলা খাওয়াবেন ‘রাহুল’- নাম তো সুনা হোগা। ২,০০০ প্লেট খাবার রোজ হাসপাতাল আর জরুরি পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষদের জন্য বানাবে এক রান্নাঘর। টাকা দেবে খান সাহেব। এ ছাড়া ও মুম্বাই পুলিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তার সংস্থা রোজ তিন লক্ষ খাবারের প্যাকেট বানাবে প্রান্তিক, ভবঘুরে আর ভিক্ষুকদের জন্য। মুম্বাই পুলিশ এরকম মানুষ দেখতে পেলেই প্রথমে শাহরুখ খানের দেওয়া খাবারের প্যাকেট আর জল দেবে ওদের। ওরাই হিন্দুস্তান, স্বদেশ। এছাড়া দিল্লির ২৫০০ ঠিকে শ্রমিককে প্রতি সপ্তাহে বিনেপয়সাতে গোটা পরিবারের জন্য রেশন বিলি করবে৷
এসব করতে ঠিক কতো টাকা লাগে? সেটা উনিও বলবেন না। কোনদিন বলেন নি। ঢাক পেটাননি নিজের দান খয়রাতি নিয়ে। ওর আব্বু নাকি বলতো, প্রশংসা করবে সব্বাইকে জানিয়ে, দান করবে চুপচাপ। তাই অনেক অনেকদিন আমরা জানতে পারিনি শাহরুখ খান ২০০০ এসিড আক্রান্ত মহিলার সমস্ত খরচ বহন করেন। আমরা জানতে পারিনি ঠিক কতোজন ফ্যানকে চুপিচুপি বাদশা সাহায্য করে গেছেন। আমরা জানতে পারিনি কতোজন স্পট বয়কে উনি স্বপ্ন দেখিয়েছেন বাঁচতে।
টাকা দিয়ে সবকিছু মাপা যায়? অর্থ সব কিনে নিতে পারে? যে ছেলেটি স্কুললাইফ থেকে জেল দিয়ে ব্যাকব্রাশ করে, হাত দিয়ে চুল কপালের থেকে সরিয়ে নেয়, একলা ঘরে আয়নার সামনে দু হাত ছড়িয়ে বলে সেনোরিটা তুম নেহি সমঝোগি, তার Quarantine এ শাহরুখই থাকে।
যে মেয়েটি Quarantine এ “Mere Khwabo mein jo aaye” একলা ঘরে তোয়ালে চেপে নাচছে, যে রোজ রাতে “Dil Se” দেখে ভাবছে ওর নিশ্বাসে ও যদি ওভাবে কেউ নিশ্বাস নিত আর পেছনে গান চলতো “Aye ajnabi tu bhi kabhi”, যার ঘরে আজ ও খুঁজলে হয়তো মিলবে কোন হলদে হয়ে যাওয়া পোস্টার, তার নাম শম্পা, সাবিত্রী, চম্পা, চামেলি যাই হোক না কেন, সে আসলে সিমরন, যাকে Lockdown এও বাঁচতে শিখিয়েছে শাহরুখ খান।
চুনিবাবু, সব টাকা ছুঁড়ে দিয়ে কেনা যায় না, টাকা দিয়ে মাপা যায় না। ৩০ বছর ধরে মনখারাপ আর হতাশায় যে লোকটা রোদ্দুর নিয়ে এসেছিল, যে রোজ রাতে আমার আত্মহত্যা থামিয়ে দিয়েছিল, যে ব্রেকআপের পরের সকালটা ঝলমলে করে দিয়েছিল, তোমার কথায় ওর এক চুটকি দান খয়রাতি তুম ক্যা সমঝো চুনিবাবু৷
এই সবটা কতো টাকার দান সেটা হিসেব করতে পারো। হিসেব করতে পারো টাটা আম্বানি প্রেমজির সাথে, কিন্তু করবে কি করে? শাহরুখ খান তো আজ অবধি নিজের দানের পরিমাণ জাহির করেন না। মানুষ পরে জানতে পারে কোটি কোটি টাকার দান এসেছিল এক সাদামাটা সুপারস্টারের থেকে। শাহরুখ খান, নাম তো সুনা হোগা!
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত