এ যেন মগের মুলুক! করোনার থাবায় বিপন্ন গোটা দেশ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অহরহ আসছে ভাইরাস সংক্রমণের খবর। কিন্তু তার পরেও নাকি ‘স্বজনপোষণ’ করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা সত্ত্বেও মোদী সরকার এ দেশে মাস্ক, ডাক্তারদের শরীর ঢাকার হ্যাজম্যাট স্যুট বা কভারঅল এবং ভেন্টিলেটর মজুত করেনি। এই অভিযোগ আগেই উঠেছে। এ বার করোনাভাইরাস টেস্টিং কিটের জোগান নিয়েও মোদী সরকারের দিকে গুরুতর অভিযোগের আঙুল উঠল। বিরোধী তথা শিল্প মহলের অভিযোগ, স্বাস্থ্য মন্ত্রক এমন ভাবে নির্দেশিকা জারি করেছে, যাতে মোদী-অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ গুজরাতের একটি মাত্র সংস্থা তাদের তৈরি করোনার টেস্টিং কিট বাজারে বিক্রি করতে পারবে।
প্রসঙ্গত, শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রক নির্দেশিকা জারি করে, শুধু মাত্র আমেরিকা ও ইউরোপের সংস্থার দ্বারা অনুমোদিত টেস্টিং কিটই এ দেশে ব্যবহার করা যাবে। সে ক্ষেত্রে গুজরাতের কোসারা ডায়গোনস্টিকস সংস্থাই একমাত্র এ দেশে টেস্টিং কিট বেচতে পারবে। মেহুল সারাভাইয়ের এই সংস্থা আমেরিকার একটি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমদাবাদ সফরের সময় মেহুলের বাবা কার্তিকেয় সারাভাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সামনেই মেলানিয়া ট্রাম্পকে উত্তরীয় পরিয়েছিলেন। সে ছবিও আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।
কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, ‘২০ মার্চ সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন ও পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি ১৪টি সংস্থাকে করোনাভাইরাস টেস্টিং কিট বানানোর টেস্ট লাইসেন্স দিয়েছিল। কিন্তু পরের দিন, ২১ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রক যে শর্ত জারি করে, তাতে শুধু মাত্র গুজরাতের একটি সংস্থাকেই অনুমোদন দেওয়া হল কেন? প্রধানমন্ত্রী কি এর উত্তর দেবেন?’ মোদীকে চিঠি লিখে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর দাবি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি যে সব কিটের অনুমোদন দিয়েছে, তাদেরও জোগানের অনুমতি দেওয়া হোক। দেশের ডায়গনস্টিক ম্যানুফ্যাকচারার্স-দের অ্যাসোসিয়েশনও জানিয়েছে, তারা এ নিয়ে সরব হবে।
গুজরাতের কোসারা সংস্থা জানিয়েছে, তাদের কারখানায় দিনে ১০ হাজার টেস্টিং কিট তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন বেসরকারি ল্যাবেও করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের একটি সংস্থা জোগান দিয়ে উঠতে পারবে না। ডাক্তারদের সুরক্ষার সামগ্রী বা পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) কিট সরবরাহের ক্ষেত্রেও একটি মাত্র সংস্থাকে ছাড়পত্র দেওয়ার ফলে সারা দেশে এর অভাব দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এইচএলএল হেলথকেয়ার লিমিটেড অন্যান্য সংস্থা থেকে এই কিট কিনে সরবরাহ করে। ডাক্তারদের অভিযোগ, এইচএলএল এখন বেশি দামে কিট বেচছে। অন্যান্য সংস্থার থেকে কিনে আবার বাকি দেশে সরবরাহ করতেও দেরি হচ্ছে।