বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজের দেওয়া ভাষণে দেশবাসীকে যে কোনও রকমের জমায়েত বা জনবহুল এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শের পাশাপাশি রবিবার গোটা দেশে ‘জনতা কার্ফু’ পালনের নিদান দিয়েছেন তিনি। রবিবার অর্থাৎ ২২ মার্চ সকাল ৭টা থেক রাত ৯টা পর্যন্ত গোটা দেশকেই ঘরে থাকতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়ার বার্তা দিতে কলকাতার পার্ক সার্কাস বা দিল্লীর শাহিনবাগের জমায়েত কি রবিবার ঘরে ফিরে যাবে? আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, ঘরে ফেরার প্রশ্নই নেই। কেউ কেউ করোনা সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে প্রতীকী সাড়া দেওয়ার কথা ভাবছেন। কিন্তু ধর্নাস্থল কোনও মূল্যেই যে ফাঁকা হতে দেওয়া হবে না, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
পার্ক সার্কাসের ধর্নার প্রধান উদ্যোক্তা আসমত জামিল বলেন, ‘শাহিন বাগে কী হবে জানি না। পার্ক সার্কাসে ধর্না চলবে। যত দিন না কালা আইন বাতিল করা হচ্ছে, তত দিন, ধর্না থেকে ওঠার প্রশ্নই নেই।’ উল্লেখ্য, ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে লড়ছেন আসমত। ধর্না বা অবস্থানে যেতে চিকিৎসকের বারণ ছিল। তবুও গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘সিএএ-র মতো আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করে ঘরে বসে থাকা যায় না। আগে দেশ বাঁচুক, তার পরে আমি বাঁচব। এইটা ভেবেই বেরিয়ে পড়েছিলাম। তাতে অসুস্থতা আবার বেড়েছে। চিকিৎসার জন্য মুম্বই আসতে হয়েছে। কিন্তু তাতে আমার আফসোস নেই। দেশ বাঁচানোর জন্য যদি প্রাণও যায়, যাক।’ যদিও করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের প্রেক্ষিতে পার্ক সার্কাসের আন্দোলন রবিবার কোন পথে বহাল রাখা হবে, সে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে আন্দোলন যে কোনও মতেই স্থগিত হবে না, এক দিনের জন্যও যে হবে না, সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন আসমত। বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে আমরা সাড়া দেব কি না, এখনও স্থির করিনি। কিন্তু যদি সাড়া দিই, তা হলেও পার্ক সার্কাস থেকে সরে গিয়ে সাড়া দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। রবিবার হয়তো ধর্নাস্থলে লোকজন আমরা কিছুটা কমিয়ে দিতে পারি। হয়তো সবাইকে পরস্পরের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব রেখে বসতে বলতে পারি। কিন্তু ধর্নাস্থল খালি আমরা করব না।’ করোনা সংক্রমণ রুখতে ধর্নাস্থলে রোজ অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড ছড়ানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন আসমত। কিন্তু এই ভয়াবহ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে তা কি যথেষ্ট? মহামারি ঠেকানোর লক্ষ্যে সরকারের আহ্বানে সাড়া দেওয়া কি কর্তব্য নয়? পার্ক সার্কাস আন্দোলনের অন্যতম নেত্রীর মতে, ‘যেখানে উদ্দেশ্য মহৎ, সেখানে রোগ হানা দেয় না।’
তাঁর কথায়, ‘আমাদের সুস্থতা নিয়ে যদি প্রধানমন্ত্রী এতই চিন্তিত হন, তা হলে এই কালা আইন প্রত্যাহার করুন। রবিবার তো জনতা কারফিউ-এর ডাক দিয়েছেন। শনিবারের মধ্যে শুধু একবার বলে দিন যে, এই কালা আইন দেশে কার্যকর করা হবে না। আমরা সবাই প্রধানমন্ত্রীকে মন থেকে ধন্যবাদ দিয়ে ঘরে ফিরে যাব। রবিবার জনতা কারফিউ-ও পালন করব।’ অন্যদিকে পার্ক সার্কাস সিএএ এবং এনআরসি বিরোধী ধর্না র অন্য এক আয়োজক ফারহাত ইসলাম বলেন, মোদীর ‘জনতা কার্ফু’ আমরা মানছি না। অন্য দিনের মতোই আমরা জমায়েত করবো। কলকাতার পার্ক সর্কাসের মত দিল্লীর শাহিন বাগও ধর্না চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তেই এখনও পর্যন্ত অটল। ধর্না তুলে নেওয়া হবে অথবা রবিবার ধর্না স্থগিত রাখা হবে, এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলেই শাহিনবাগের আন্দোলনকারীদের তরফে জানা গিয়েছে।