করোনা ভাইরাসের আক্রমণটা পুজোর সময় হলে কলকাতার অবস্থা আর দেখতে হতো না হয়তো৷ পুজোর সময় গোটা পৃথিবী থেকে বাংলায় ফেরে লোকে। জাস্ট ভাবুন করোনা ভাইরাস নিয়ে ফিরছে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে বাইরে থেকে। আমার তো ভেবেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে৷ নিশ্চিন্ত হচ্ছি এটা ভেবে, সৌভাগ্যক্রমে বা দুর্ভাগ্যক্রমে মেট্রো শহর হলে ও কলকাতায় আর দিল্লি বম্বের মতো বাইরের লোক আসেনা। প্রচুর মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ছেলেমেয়েদের ঘন ঘন বিদেশে কাজে যেতে হয় না, চায়না- কোরিয়ার কোন ফ্যাক্টরি বাংলায় নেই, Pollination ও নেই।
মুম্বাই-নয়ডা-কেরালাতে এটাই হচ্ছে। বাইরে থেকে লোকে বহন (pollinate) করে নিয়ে আসছে ভাইরাস টা তারপর ভীড়ে মিশে যাচ্ছে। প্রথম ধাপে আপনার কাছে উপায় দুটো। বিমানবন্দরে আর রেল স্টেশনে পরিক্ষা করা, ট্রাভেল হিস্ট্রি নিয়ে চারদিন পরে খোঁজ নেওয়া তার শারীরিক অবস্থা সম্বন্ধে। সেটা সরকার করছে৷ কলকাতার কেসে বিমানবন্দরে জ্বর ধরা পরেনি। অসুস্থ হয়েছে কাল।
প্রিয় বাঙালি, আমি বলি বটে, মাংকি টুপি, বোরোলিন আর জেলুসিল পেলে বাঙালি সব পারে কিন্তু এই করোনাটা মগনলাল মেঘরাজ না, ওর চেয়ে ও দুর্ধর্ষ দুশমন। চায়নার মতো প্রথম দিন থেকে যুদ্ধকালীন তৎপরতা না দেখালে, precaution না নিলে গোটা সিস্টেমটা গাধার পাছুতে চলে যাবে। ভেবে দেখেছেন আপনার রাজ্যে ভেন্টিলেটর ঠিক কটা? ভেন্টিলেটর পরিস্কার হয় কতোগুলো হাসপাতালে? ভেন্টিলেটর থেকে ও জীবানু ছড়ায় স্যার! ভাববেন না, মাল্লু আছে বলে মেডিকাতে শুয়ে পরবেন। যেতে হবে আইডিতেই, সেখানে শঙ্খ ঘোষ বা দিলীপ ঘোষ, সব সমান।
সময় আছে। সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো ঝাপিয়ে পড়ুক৷ ট্রেনে বাসে স্যানিটাইজার নিয়ে প্রচার চলুক। যারা ঠাকুর আর বাবার নামে জলছত্র খোলে, ফ্রিতে ফি শনিবার খিচুড়ি খাওয়ায় তারা ফ্রিতে হাত ধোবার ব্যবস্থা করুক। পাড়ার মাতব্বররা প্রান্তিক মানুষদের নসবন্দি বা ছাপ্পা ভোট দেওয়ার জন্য যেভাবে ধরে বেঁধে আনে, সেভাবে স্যানিটাইজ করে, মাস্ক পরে কাজ করতে বাধ্য করুক৷
গরীব মানুষ যারা পেটের তাগিদে এই ফ্ল্যাট ও ফ্ল্যাটে কাজ করে বেড়ায় তাদের মাস্ক ও ডেটল হ্যান্ড ওয়াশ উপহার দিন। পইপই করে বলুন, বাড়িতে ও ব্যবহার করতে।
গ্রামের মানুষ আপাতভাবে সুরক্ষিত যদি না বাইরে থেকে তাদের গ্রামে কেউ আসে জীবানুটা নিয়ে। গ্রামে খোঁজ নেওয়া যায় চটজলদি। অমুকের ছেলে কাল সৌদি থেকে ঘরে ফিরেছে বা তমুকের মেয়ে মুম্বাই থেকে জামাই নিয়ে এয়েচে। এদের প্রত্যেককে কয়েকদিন সন্দেহের চোখে দেখুন। লজ্জিত না হয়ে প্রশ্ন করুন, “বাবা জ্বর নেই তো। বুঝতেই পারছো prevention is better than cure।”
মাথায় রাখবেন, রোগের সাথে কোন সহানুভূতি থাকা উচিৎ না, রোগীর সাথে রাখুন। মন্ত্রী হোক বা উজির, রাজ্য বা দেশের বাইরে থেকে আসার খবর পেলেই খোঁজ নিন সে কিরকম বোধ করছে।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত