ভারতে মারণ আকার ধারণ করেনি এখনো করোনা। তার আগেই রোজ ভয়ে কতো লোক সেঁধিয়ে যাচ্ছে। কেউ আবার পাগলের মতো স্যানিটাইজার আর ডেটল মজুদ করে রাখছে। কেউ চারশোগুন বেশী টাকায় মাস্ক কিনে নিচ্ছে।
গোটা ইতালি ইতিমধ্যে স্তব্ধ। চিনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত মানুষ এই দেশে এখন। ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে করোনা ওই দেশে। এখন অবধি ১৭, ৬৬০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। ১,২৬৬ জন করোনাতে মৃত। গোটা দেশের সবকিছু, মানে সববব বন্ধ। থিয়েটার, ফুটবল স্টেডিয়াম, মিউজিয়াম, সিনেমা হল, শপিং মল সব। রেশন রেখে আসা হয়েছে দরজার বাইরে। ভিতরে সবাই বন্দি। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ চলাকালীন যেমন দিনের পর দিন গৃহ বন্দি থাকতে হতো, সেরকম অবস্থা।
ইতালি সবকটা ছবির মতো শহর এখন মৃত্যুপুরি। দেখে মনে হবে যেন সমস্ত প্রাণ শেষ এই সব অঞ্চলে। কেউ নেই, কোথাও প্রাণ নেই। কিন্তু প্রাণ তো মানুষই বাঁচিয়ে রাখে। একে অপরকে জানান দেয় “বেঁচে আছি। সেই বেঁচে থাকার গানই সব্বাই গেয়ে চলেছে প্রতি বিকেলবেলা। সব্বাই নিজের ফ্ল্যাট বাড়ির বারান্দায়, ছাদে উঠে, চিলেকোঠা থেকে ঝুঁকে, জানালা থেকে মুখ বের করে গলা ছেড়ে গান গাইছে। স্রেফ জানান দিতে, আমরা হারিনা, হারতে পারিনা।
গভীর রাতে হঠাৎ গিটার বাজিয়ে কেউ গান ধরছে, পাশের বাড়ি থেকে ড্রাম বাজানো শুরু হচ্ছে, আরেকটু দূরে গুস্তাভোর মা সুর ধরছে কোন। সম্মিলিত গান পাড়া জুড়ে।
এভাবেই বেঁধে বেঁধে থাকবে প্রতিটি শহর, দেশ, মহাসাগর, পৃথিবী। দ্বন্দ্ব, বিদ্বেষ বাদ দিয়ে মানুষ মানুষের পাশে থাকবে। বেঁচে থাকার তাগিদে, গান গাওয়ার তাগিদে। চরণদাস তো কবেই হীরক রাজার দরবারে বলে গেছিল, যদ্দিন গান, তদ্দিন প্রাণ।
করোনার মতো বেয়াদব উচ্চিংড়ের ভয়ে মৃতপ্রায় হওয়ার চেয়ে, ভয়ে ভয়ে বাঁচার চেয়ে এক্কেবারে মরবো, ততক্ষণ গানবাজনা করবো। Que sera, sera! Que sera, sera! যা হবে, দেখা যাবে ক্ষনে!
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত