মাসখানেক আগেই বাংলায় বেজে গিয়েছে পুরভোটের দামামা। যেহেতু আগামী বছর রাজ্য বিধানসভার ভোট। ফলে আসন্ন পুরভোটই হল তার সেমি ফাইনাল। তাই কেবল বিজেপি বাদে ইতিমধ্যেই জোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের সবকটি দলই। তবে পুর নির্বাচনে বাম ও কংগ্রেস জোট করে লড়লেও তার প্রভাব পড়বে না কলকাতা পুরসভার ভোটের ফলে। এমনটাই দাবি ভোট বিশ্লেষকদের।
রবিবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র জানিয়েছেন, আগামী পুরসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট আসন সমঝোতা নয়, জোট করেই লড়বে। মালদায় দলীয় কর্মসূচীতে যোগ দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের কাছে এমন। মন্তব্য করেন তিনি। তবে সোমেনের এই ফর্মুলা কলকাতার পুরভোটে কাজ করবে না, এমনটাই মনে করছেন রাজনীতিবিদ এবং ভোটের বিশ্লেষকরা। তাঁরা মোটের ওপর একমত, গত ১০ বছরে কলকাতার উন্নয়নে যথেষ্ট কাজ করেছে তৃণমূলের পুর বোর্ড। যদিও তার ভিত্তিতে নয়, কলকাতার পুরভোটে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বড় ইস্যু হতে চলেছে।
ভোট বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী যেমন বলছেন, ‘যাদবপুর, টালিগঞ্জের দিকের কয়েকটি আসন জোটের পক্ষে গেলেও, কলকাতা পুরসভায় মূল লড়াই হবে তৃণমূল বনাম বিজেপির।’ এর কারণ হিসেবে তিনি জানাচ্ছেন, কলকাতার পুরভোট অন্তত সিএএ-র পক্ষে-বিপক্ষেই হতে চলেছে। কলকাতা পুর এলাকার ৩১ শতাংশ ভোটারই মুসলিম। সেই ভোটের সামান্য অংশও তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনও দিকে যাবে না। আবার যাঁরা সিএএ সমর্থন করছেন, তাঁরা ভোট দেবেন বিজেপিকেই। তৃতীয় পক্ষের কোনও জায়গাই থাকবে না।
ভোট বিশ্লেষক মইদুল ইসলাম বলছেন, ‘স্থানীয় সমস্যা পুরভোটে বড় ফ্যাক্টর হলেও শহরের ভোটে রাজনীতিই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে।’ তাঁর ব্যাখ্যা, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, দিল্লীতে হারের পর বিজেপি মানসিক ভাবে কিছুটা দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। সেই সুযোগ যদি জোট নিতে পারে, তা হলে কয়েকটি এলাকায় কিছুটা সুবিধা পাবে। তবে সমস্যা হল, বাম এবং কংগ্রেস স্বাভাবিক ‘বন্ধু’ নয়। তাদের জোট নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। আবার গত লোকসভা নির্বাচনে প্রবল তৃণমূল বিরোধিতার মুখেও দেখা গিয়েছে ঘাসফুল ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে। সেই ভোটই যদি তারা ধরে রাখতে পারে, সেটাই যথেষ্ট।
রাজনীতিক ও ভোট বিশ্লেষক শুভময় মৈত্রও মইদুলের সঙ্গে একমত। তিনিও মনে করছেন বিজেপি তুলনামূলক ভাবে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। পুরভোটে কাজ করবে না মোদী হাওয়াও। একই সঙ্গে কলকাতায় এনআরসি, এনপিআর এবং সিএএ-ই বড় ইস্যু হবে। আর যেহেতু শহরে মুসলিমদের জনসংখ্যা ভালই। তাই তাঁদের প্রায় পুরো সমর্থনই তৃণমূলের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।