ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে কোনও দেশের নামে জিন্দাবাদ দেওয়া যাবে না? গতকাল বেঙ্গালুরুতে অমূল্যা লিওনা নামে তরুণীটিকে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলার অপরাধে গ্রেপ্তার করার পর থেকে একথা আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। অমূল্যা কি রাজনীতি করেন আমি জানিনা কিন্তু একটা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নামে জয়ধ্বনি দেওয়ার অপরাধে কী কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়? কোনও দেশের নামে কেউ তো জিন্দাবাদ ধ্বনি দিতেই পারেন! যেমন একসময় আমরা বলতাম কিউবা জিন্দাবাদ, ভিয়েতনাম জিন্দাবাদ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। এতো একটা দেশ ও তার মানুষের প্রতি সংহতি জানানোর ঘোষণা! এরমধ্যে অপরাধ কোথায়?
সিনেমা হলে বা কোন অডিটোরিয়ামে যখন ‘জন গণ মন’ শুরু হয় তখন তো সেখানে উপস্থিত অন্য দেশের মানুষেরাও উঠে দাঁড়ান। জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য তারা এ কাজ করেন। একাজের জন্য তাদেরকে গ্রেপ্তার করার কথা কল্পনাও করা যায়না।
পাকিস্তান সরকারের তীব্র ভারত বিরোধী মনোভাব, লাগাতারভাবে গোটা বিশ্বে ভারতকে হেনস্থা করার চেষ্টা, ভারতে সন্ত্রাসবাদী অন্তর্ঘাত, এসব কাজকে কোন দেশপ্রেমিক মানুষের সমর্থন করা উচিৎ নয়, আমিও করি না, করার প্রশ্নই নেই। কিন্তু সে দেশের সেনানায়কদের অঙ্গুলিহেলনে চলা সরকারের ভারত বিরোধী কার্যকলাপের জন্য গোটা দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর রাজনীতিও আমি মানিনা। ধর্মান্ধ রাষ্ট্রনায়কদের কৃতকর্মের দায় সে দেশের মানুষ নেবেন কেন? মনে রাখতে হবে পাকিস্তানের মানুষ মানেই কিন্তু সন্ত্রাসবাদী বা ভারত বিরোধী নয়।
ভারত বিরোধী জিগির সম্পূর্ণভাবে সে দেশের সরকারি সিদ্ধান্ত ও ধর্মান্ধ জঙ্গিদের কার্যকলাপ। সাধারণ মানুষদের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই এবং তা তারা সমর্থন করেন না। তাই আমরা যুদ্ধবাজ জঙ্গিদের সঙ্গে সাধারণ মানুষদের গুলিয়ে ফেলবো কেন? ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বললেই কাউকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা কিন্তু আদতে সেই দেশের জঙ্গিদের হাতকেই শক্তিশালী করবে। এই ঘটনাকে সামনে রেখে তারা ভারত বিরোধী প্রচার আরও বাড়াবে। ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ মানে তো একটা দেশকে সন্মান জানানো, তা মোটেই সে দেশের সরকারকে সমর্থন জানানো নয়। আমার মনে হয় এই ধরণের গ্রেপ্তারির ঘটনা দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে ঘৃণার আবহাওয়া আরও জোরদার করবে, শক্ত করবে পাকিস্তানের ভারত বিরোধী লবি ও যুদ্ধবাজ সরকারের হাত।
অমূল্যার বিরুদ্ধে ওঠা অন্য অভিযোগ নিয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই। সেখানে আইন আইনের রাস্তায় চলবে। তিনি কোন অপরাধ করলে তার বিচার ও শাস্তি হোক। কিন্তু ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলাটা কোন অপরাধ নয়। এ কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করার কোন অর্থই হয়না। ইদানীং পাকিস্তান নামক দেশটি এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণার রাজনীতির এক জিগির তুলেছে মোদি-অমিত অ্যান্ড কোং। অমূল্যার ঘটনা বিজেপি সরকারের সেই মানসিকতারই প্রতিফলন।
অমূল্যা লিওনা নামে একুশ বছর বয়সী ইংরেজি অনার্সের ছাত্রীটি একটি শিক্ষিত কন্নড় পরিবারের মেয়ে। পরিবারটি বিজেপি সমর্থক হলেও সাম্প্রতিক ধর্মান্ধতার রাজনীতিতে মেয়েটি বেশ বিরক্ত। সমস্ত দেশের মানুষ ও ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা আছে বলে সে তার ফেসবুকের দেওয়ালে ভারত সহ বাংলাদেশ, নেপাল, চিন, আফগানিস্তান, ভুটান, শ্রীলঙ্কা সহ প্রায় প্রতিটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নামে জিন্দাবাদ বলেছে। বোঝাই যাচ্ছে প্রতিটি প্রতিবেশী দেশ ও তার মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে তার, লাইক পেয়েছে ১৭০০টি। সভাস্থলেও সে সব দেশের নামেই জিন্দাবাদ ধ্বনি দিতে চেয়েছিল। এটাই তো সহনশীল মনোভাবের প্রমাণ। পাকিস্তানের নামটি হঠাৎই সে প্রথমে বলে ফেলেছে। এটা কাউকে গ্রেপ্তারের কারণ হতে পারেনা! প্রতিবেশী দেশ ও তার মানুষের প্রতি এই সহমর্মিতা না থাকলে তো জিন্দালাশ হয়ে থাকতে হবে।