প্রথম মোদী সরকারের আমলে বারবারই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার হয়েছে এ রাজ্য। সেই ধারা বজায় রয়েছে তাদের দ্বিতীয় ইনিংসেও। যেমন শিবপুজো থেকে শুরু করে দশেরা উৎসবকে সামনে রেখে বহু রাজ্য কেন্দ্রীয় সাহায্য পেলেও, বাংলার দুর্গাপুজোর কপালে কানাকড়িও জোটেনি।
গত কয়েক বছরে বিভিন্ন রাজ্যে উৎসব-পার্বণের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেই তালিকায় যেমন আছে বিভিন্ন আঞ্চলিক বা লোক উৎসব, তেমনই আছে নানা ধর্মীয় উৎসব। অধিকাংশ রাজ্য নিজেদের এলাকায় উৎসব করার জন্য দিল্লীর দাক্ষিণ্য পেয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম শুধু বাংলা। যে রাজ্যের সংস্কৃতি ও উৎসবের জন্য গর্ব করে গোটা দেশ, তাকে এক টাকাও দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি মোদী সরকার। অথচ এক-একটি রাজ্যকে একাধিক অনুষ্ঠান বা পার্বণের জন্য যে টাকা দিয়েছে কেন্দ্র, কখনও তার অঙ্ক ৫০ লক্ষ, আবার কখনও ২৫ বা ৩০ লক্ষ। এভাবেই কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছে কেন্দ্র। মোট ৬৪টি উৎসবে দেওয়া হয়েছে টাকা। সম্প্রতি লোকসভায় তথ্য দিয়ে সে কথা স্বীকার করেছে পর্যটন মন্ত্রক নিজেই।
কী ধরনের প্রকল্পে অনুদান পেয়েছে রাজ্যগুলি? শুরু করা যাক চণ্ডীগড়ের কথা দিয়ে। সেখানে গোলাপ উৎসবে প্রতি বছর নিয়ম করে টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। হরিয়ানা তাদের আম উৎসবে অনুদান পেয়েছে ২৫ লক্ষ টাকা। হিমাচলের দশেরা ও শিবরাত্রি উৎসবে এক কোটি টাকার উপর অনুদান মিলেছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। এভাবেই মধ্যপ্রদেশে খাজুরাহো ডান্স ফেস্টিভ্যাল, পাঞ্জাবের হোলা মহল্লা, পাতিয়ালা উৎসব, উত্তরপ্রদেশের গঙ্গা মহোৎসব, অযোধ্যা মহোৎসব, তামিলনাড়ুর কুমারি ফেস্টিভ্যাল, তেলেঙ্গানার ঘুড়ি উৎসব, অসমে বৌদ্ধ সম্মেলনের মতো প্রকল্পে খরচ হয়েছে কেন্দ্রীয় অনুদানের কয়েক কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির আঞ্চলিক উৎসবে।
কেন্দ্রের এই তালিকায় বাংলা না থাকায় তাজ্জব অনেকেই। এখানকার বসন্তোৎসব, পৌষমেলা, রাশ উৎসব, রবীন্দ্রজয়ন্তী, জগদ্ধাত্রী পুজো বা রথের মেলার মতো ঐতিহ্যবাহী উৎসবের কথা না হয় বাদ দেওয়া গেল। কিন্তু গঙ্গাসাগর মেলা ও দুর্গাপুজোর মতো সর্বজনীন ও বিশ্বখ্যাত উৎসবকে কী করে এড়িয়ে যেতে পারে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক, তা নিয়ে বিস্মিত অনেকেই। বাংলার প্রতি কেন্দ্রের এই বঞ্চনায় রাজনীতির গন্ধ বেশি করে মিলছে। বাংলার দুর্গোৎসবকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আন্তর্জাতিক রূপ দিয়েছে। দুর্গাপুজো কার্নিভালকে বিদেশেও প্রচারের আলোকে এনেছেন তিনি। অথচ তার চাকচিক্য বাড়াতে গা করেনি কেন্দ্র। যেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা রাজ্যে এসে এখানকার সংস্কৃতি ও পরম্পরার বড়াই করেন, সেখানে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এই বঞ্চনা, এমনটাই মনে করছেন অনেকে।