প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা ফকিরদাস কুমার। রুপোলি পর্দার জাঁকজমক থেকে অনেক দূরে বর্ধমানের সেনপুর গ্রামে নিজের বাড়িতে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছেন তিনি। সেখানেই বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয় ৮৭ বছর বয়সের এই অভিনেতার। তাঁর মৃত্যুতে কমল বাংলা ছবির স্বর্ণযুগের সাক্ষী আরও একজন শিল্পীর সংখ্যা। বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গেই ১৪ টি ছবিতে অভিনয় করেছেন ফকিরদা। কমেডি চরিত্রে তাঁর অভিনয় দর্শক মনে আজও দাগ কাটে। অভিনয় করেছেন সদ্য প্রয়াত তাপস পালের সঙ্গেও।
ফকিরদার এক ছেলে দেবাশীষ দাস কুমার জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। গত কয়েকদিন ধরে তিনি বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন। বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়। প্রত্যেক বছর মহানায়কের জন্মদিনে ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে চালভাজা আর নাড়ু নিয়ে যেতেন ফকিরদাস। যতদিন মহানায়ক বেঁচেছিলেন রুটিনে কখনও ছেদ পড়েনি। শিল্পী হিসেবে যথাযোগ্য সম্মান না পাওয়ায় আক্ষেপ ছিল। কিন্তু ভাললাগার স্মৃতিগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেই জীবনটাকে উপভোগ করেছেন তিনি। তিন ছেলে রয়েছে ফকিরদাসের। তাঁরাও অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত।
দুশোর উপর বাংলা, হিন্দি ও ওড়িয়া ছবিতে অভিনয় করেছেন ফকিরদাস। একটা সময় বাংলা ছবিতে চাকর বা পরিবারের পুরনো লোকের ভূমিকায় ফকিরদাসের উপস্থিতি ছিল প্রায় নিয়মিত। এছাড়াও অসংখ্য নাটক, টেলিফিল্ম, যাত্রা ও নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন বেতার নাটকেও। জানা যায়, বেতার শিল্পী হিসেবে তাঁকে গড়েপিটে তৈরি করেছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।
অল্প বয়সে কেষ্টযাত্রার মধ্য দিয়ে অভিনয়ে আসেন ফকিরদাস। তারপর দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করেছেন রেলে। কিন্তু যখন যেখানে থেকেছেন অভিনয়ে বিরতি পড়েনি। অভিনেতা হিসেবে তিনি যেমন উত্তমকুমারের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন তেমনি অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন পরিচালক তরুণ মজুমদারের। তরুণবাবুর অজস্র ছবিতে দেখা গেছে ফকিরদাসকে। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুপ্রিয়া দেবী, সুচিত্রা সেন, উৎপল দত্ত, প্রসেনজিৎ, তাপস পাল, দেবশ্রী, শতাব্দী, সন্ধ্যা রায়-সহ অনেক অভিনেতা অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।