সকাল সকালই টলিপাড়ায় শোকের আবহ। প্রয়াত হয়েছেন অভিনেতা তাপস পাল। সহকর্মীর এমন আকস্মিক প্রয়াণে শোকস্তব্ধ অভিনেতা অভিনেত্রীরা। তবে শোকের আবহ টালিগঞ্জ ছাড়িয়ে পৌঁছেছে চন্দননগরেও। যেখান থেকে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল। সাহেব যে আর ফিরবে না তা বিশ্বাস হচ্ছে না এলাকার মানুষের। প্রিয় অভিনেতার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এলাকার মানুষের দাবি, তাপস পালের মর্মর মূর্তি বসানো হোক চন্দননগরে এবং তার স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হোক চন্দননগরের বাড়িতে।
এলাকার সাধারণ ছেলে। সেখান থেকে বিখ্যাত অভিনেতা হয়ে ওঠা। সেই অভিনেতার মৃত্যুতে শোকের ছায়া চন্দননগর জুড়ে। প্রিয় বন্ধুর আকস্মিক মৃত্যু সংবাদে বাকরুদ্ধ তাপস পালের বাল্যবন্ধুরা একে একে হাজির চন্দননগরের ধারাপাড়া এলাকায়।
বাল্যবন্ধু বাবু পাল বলেন, তাপস পাল অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী, ভাল মানুষ ছিল। একবার বিতর্কিত কিছু বলার পর বদনাম হয়েছিল। কিন্তু পরে ক্ষমাও চেয়ে নেয়। এক সঙ্গে ফুটবল খেলা, সাঁতার কাটা, ঘুরতে যাওয়া নানা স্মৃতি রোমান্থন করতে গিয়ে চোখে জল চলে আসছে সবার। এক সময় বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করা রেবা রায়ের বক্তব্য, এত ভাল মানুষ খুব কম দেখা যায়। লুচির সঙ্গে কুমড়োর তরকারি তার ছিল প্রিয় খাবার। বিকালের দিকে আবার তার জন্য প্রায়ই মোগলাই তৈরি করে দিতে হতো।
হরিহর আত্মা বন্ধু বাবু পালের অশ্রুধারা বাগ মানছে না সকাল থেকেই। তিনি জানান, কয়েকদিন আগেই কথা হয়েছিল। কলকাতায় ফিরে দেখা করার কথা ছিল। সেই সঙ্গে অন্যান্য বারের মতো এবারেও বাবু পালের বাড়িতে অন্নপূর্ণা পুজোয় আসার কথা ছিল। সেই সঙ্গে এটাও জানিয়েছিল যে, কয়েকমাস পর থেকেই আবার শ্যুটিং শুরু করার কথা ছিল তাপস পালের। মাঝেমধ্যে চন্দননগরে এলে প্রিয় বন্ধু বাবু পালের কাছে সময় কাটিয়ে চলে যেতেন তাপস পাল। বোনেদের সঙ্গে সম্পত্তিগত কারণে বিবাদ হলেও চন্দননগর নিবাসী তাঁর এক বোন পাপিয়া পাল দাদার মৃত্যু সংবাদে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। হাতজোড় করে সবাইকে জানান, তিনি আজকে কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই।
চন্দননগর ধারাপাড়ায় ডাক্তার গজেন্দ্রচন্দ্র পালের একমাত্র পুত্র তাপস পাল এবং তিন বোন চন্দননগরের বাড়ি থেকেই বড় হয়ে উঠেছে। প্রথমে পাড়ার কাছেই প্রবর্তক স্কুলে। তারপর কানাইলাল বিদ্যামন্দির এবং চুঁচুড়া মহসিন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তাপস পাল। তারপর হঠাৎ করেই ফিল্মে সুযোগ। দাদার কীর্তি সিনেমায় তার অসাধারণ অভিনয় মন জয় করে নিয়েছিল আপামর বাঙালির মনে। তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
একটা সময় চন্দননগরে বাবার কাছে আসা-যাওয়া ছিল। কিন্তু বাবা প্রয়াত হওয়ার পর আর সেই ভাবে আসতেন না তিনি। সম্পত্তি নিয়ে বোনেদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। যা নিয়ে একটা সময় আদালতে যায় দুই পক্ষ। তবে তাপস পাল দাঁড়িয়ে বিচারককে জানিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন, তার বাবার পৈতৃক সম্পত্তি তিনি বোনেদের দিয়ে গেলেন। তারপর থেকে চন্দননগর আসা তাঁর কমে গিয়েছিল। প্রিয় বন্ধু বাবু পালের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল নিয়মিত। তার মৃত্যুতে প্রতিবেশী ও বাল্যবন্ধুরা চাইছেন অন্তত একবার তার নশ্বর দেহ আনা হোক চন্দননগরে। অশ্রুজলে শেষ বিদায় জানতে তৈরি সাহেবের শহর।