শুক্রবার মোহন বাগানের প্রতিপক্ষ নেরোকা। কল্যাণীতে নেরোকা ম্যাচের আগে ফুরফুরে মেজাজে মোহন বাগান শিবির। কাল দেড় ঘণ্টা অনুশীলনের পর যুবভারতীর প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডের ড্রেসিংরুমে মিউজিক সিস্টেমে চলছে ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের থিম সঙ। গানের তালে পা মেলাচ্ছেন ফ্রান গঞ্জালেস মুনোজ, ভিপি সুহেররা। প্র্যাকটিস সেরে কোমরন টারসুনভকে নিয়ে সল্টলেক সিটি সেন্টারে শপিংয়ে গেলেন বাবা দিওয়ারা। কোচ ভিকুনার সহকারী টমাস ও ফিজিক্যাল ট্রেনার পাউলিয়াস আবার ক্রীড়া সরঞ্জামের সন্ধানে ময়দান মার্কেটে যাওয়ার পরিকল্পনায় ব্যস্ত। বোঝা গেল চনমনে সবুজ-মেরুন ব্রিগেডের স্পিরিট এখন বেশ উঁচু তারেই বাঁধা।
আই লিগে টানা ন’ম্যাচে অপরাজিত মোহনবাগান। ১১ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের শীর্ষ স্থানে জোসেবা বেইতিয়ারা। সমর্থকেরা আই লিগ জয়ের আগাম উৎসবও শুরু করে দিয়েছেন। ব্যতিক্রম কিবু ভিকুনা। মোহনবাগান কোচ অদ্ভুত ভাবে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদাসীন। আর ক’টা ম্যাচ জিতলে খেতাব নিশ্চিত? প্রথম দলের চার ফুটবলার— ফ্রান গঞ্জালেস, ফ্রান মোরান্তে, জোসেবা বেইতিয়া ও আশুতোষ মেহতা ইতিমধ্যেই তিনটি করে হলুদ কার্ড দেখে ফেলেছেন। আজ, শুক্রবার কল্যাণীতে নেরোকা এফসির বিরুদ্ধে ফের কেউ কার্ড দেখার অর্থ, ২২ ফেব্রুয়ারি গোয়ায় চার্চিল ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে দল থেকে ছিটকে যাওয়া। এই পরিস্থিতিতে ম্যাচে কি বেইতিয়াদের বিশ্রাম দেওয়ার কথা ভাবছেন সবুজ-মেরুন কোচ?
শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সব কোচই সেরা দল নামাতে চান। তাই নির্বাসনের খাঁড়া ঝুলছে যে ফুটবলারদের মাথার উপরে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের খেলানোর ঝুঁকি নেন না। কিন্তু কিবুর দর্শন সম্পূর্ণ আলাদা। বৃহস্পতিবার দুপুরে মোহনবাগান তাঁবুতে সাংবাদিক বৈঠকে বলে দিলেন, ‘‘আগেও বলেছি, আমি শুধু এই ম্যাচটা নিয়েই ভাবছি। কার্ড দেখে রয়েছে বলে পরের ম্যাচের কথা ভেবে আমি ওদের শুক্রবার না-ও খেলাতে পারি। কিন্তু চার্চিল ম্যাচের আগে যদি ওদের মধ্য থেকে কেউ অনুশীলনে চোট পেয়ে ছিটকে যায় তখন কী হবে? ’’
চলতি লিগে উত্তর-পূর্ব ভারতের দলটির ধারাবাহিকতা বলে কিছু নেই। মোট ১২টি ম্যাচের মধ্যে নেরোকা হেরেছে ছ’টি ম্যাচে। জিতেছে তিনটি ও ড্র করেছে তিনটিতে। এমন একটি দলের বিরুদ্ধে জেতার ব্যাপারে মোহন বাগান কোচ কিবু ভিকুনা আত্মবিশ্বাসী হলেও প্রতিপক্ষকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না। তিনি জানাচ্ছেন, ‘প্রথম পর্বের থেকে নেরোকা দলের শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে। বিশেষত ফিলিপস আদজার মতো বিপজ্জনক স্ট্রাইকারকে সই করিয়েছে তারা। ওর দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। ট্রাউ ম্যাচে আদজার বিশেষ ভূমিকা ছিল। ওকে কড়া মার্কিংয়ে রেখেছিল ট্রাউয়ের ডিফেন্ডাররা। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হ্যাটট্রিক করে যায় এনপি সিং। আমাদেরও তাই সতর্ক থাকতে হবে। আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। প্র্যাকটিসে নামার আগে ছেলেদের সেটাই মনে করিয়ে দিয়েছি।’ শুক্রবারের ম্যাচে নেরোকা পাচ্ছে না তাদের নির্ভরযোগ্য স্টপার ওসমানু দিওয়ারাকে।
নেরোকার কোচ গিফট রাইখান সর্ব-ভারতীয় ফুটবলে পরিচিত মুখ। গত পাঁচ বছর তাঁকে নেরোকা কিংবা আইজলের দায়িত্বে দেখা গিয়েছে। এবার নেরোকার ম্যানেজমেন্টের হাল খারাপ। কোচ গিফটের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল নতুন মরশুমে নেরোকা মিশে যাচ্ছে আইএসএলের দল নর্থইস্ট ইউনাইটেডের সঙ্গে। তাই পোড় খাওয়া কোচটি বেশ হতাশ। তবে এদিন তিনি বললেন, ‘মোহন বাগান সেট টিম খেলাচ্ছে। ফলে ওদের গেম প্ল্যান বুঝতে আমার সুবিধা হবে। সীমিত সামর্থ্য নিয়ে চেষ্টা করব এক নম্বরে থাকা মোহন বাগানের কাছ থেকে অন্তত একটি পয়েন্ট ছিনিয়ে নিতে।’ তবে গিফট রাইখান যাই বলুন না কেন, ছন্দে থাকা মোহন বাগানকে আটকানোর মতো রসদ অন্তত তাঁর দলে নেই।