বাবার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পরও ব্যাট হাতে বাইশ গজে নেমেছিলেন শচীন তেন্ডুলকার। কেনিয়ার বিরুদ্ধে শতরান করে প্রয়াত বাবাকে উৎসর্গ করেছিলেন। গোটা দুনিয়ার কাছে আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন মাস্টার ব্লাস্টার। বিরাট কোহলির কেরিয়ারেও এক সময় একই ঘটনা ঘটেছে। বাবার মৃত্যুসংবাদও কর্তব্যচ্যুত করতে পারেনি ভারত অধিনায়ককে। এবার ক্রিকেট বিশ্ব স্যালুট জানাল বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বজয়ী অধিনায়ক আকবর আলিকে। দিনকয়েক আগেই প্রিয় দিদিকে চিরতরে হারিয়েছেন আকবর। বিশ্বকাপের মঞ্চে তা কাউকে বুঝতেই দিলেন না তিনি।
আকবর আলি, যিনি টুর্নামেন্টের মাঝপথে তাঁর প্রিয় দিদির মৃত্যুসংবাদ পেয়েছেন। চার ভাইয়ের ওই একটিই মাত্র বোন। সবার ছোট আকবরের প্রতিই সব চেয়ে স্নেহপ্রবণ ছিলেন যিনি। যমজ সন্তানের জন্ম দিয়ে সেই দিদি হারিয়ে গেলেন চিরতরে। আকবরের পরিবার সিদ্ধান্ত নেয়, ছেলে দূরদেশে গিয়েছে দেশের স্বপ্নপূরণ করতে, তাই এমন মর্মান্তিক দুঃসংবাদ এখন তাঁকে না-দেওয়াই ঠিক হবে। কিন্তু আকবর কী ভাবে যেন ঠিক জেনে যান। বাড়িতে ফোন করে কান্নায় ভেঙে পড়ে অনুযোগ করেন, কেন তোমরা আমাকে খবর দাওনি?
চোখ মুছতে মুছতে তখনই কি আকবর প্রতিজ্ঞা সেরে নিয়েছিলেন নিজের মধ্যে যে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দিদির জন্য বিশ্বজয়ের ট্রফি নিয়ে ফিরব? রবিবার রাতে সেনওয়েস পার্কের নৈশালোকে জ্বলজ্বল করছিল আকবরের সেই প্রতিজ্ঞা। মনে করিয়ে দিচ্ছিল বাবাকে হারিয়েও বুকের ভিতরে কান্না চেপে বিশ্বকাপে শচিন তেন্ডুলকরের সেই ব্রিস্টল সেঞ্চুরির কথা। রঞ্জি ট্রফির মাঝে বাবাকে হারিয়ে খেলা চালিয়ে গিয়ে দিল্লিকে বাঁচিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। এ বার ক্রিকেটের লোকগাথায় ঢুকে পড়ল যোদ্ধা আকবরের লড়াইও।
বুকের মধ্যে দিদিকে হারানোর যন্ত্রণা চেপে রেখে এরপর একে একে দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড এবং ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে ১৮ বছরের আকবর। দিদিকে শেষবারের মতো দেখতে না পাওয়ার কষ্টই তাঁর বুকে যেন আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। সেই জেদই হয়ে উঠেছিল তাঁর শক্তি। আর তাতেই গোটা বিশ্বকে চমকে দিলেন ঠান্ডা মাথার আকবর।
তবে হাজার প্রশংসা ও চাপা কান্নার মধ্যেও বিশ্বকাপটা যেভাবে শেষ হল, তা একেবারেই ভাল লাগেনি আকবরের। ম্যাচ শেষ হতেই ডাগ আউট থেকে ছুটে মাঠে নেমে পড়েন বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা। ভারতীয়দের সঙ্গে অখেলোয়াড়োচিত আচরণ করেন। যশস্বীদের উদ্দেশে কটূক্তিও করা হয়। এক বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে ধাক্কা মেরে সরিয়েও দেন ভারতীয় তারকারা। বিশ্বজয়ী দলের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষাকে ‘নোংরা’ আখ্যা দিয়েছেন অনূর্ধ্ব–১৯ ভারত অধিনায়ক প্রিয়ম গর্গ।