বছরের প্রথম ডার্বি। চলতি আই লিগের প্রথম বড় ম্যাচ। আর সেই ম্যাচেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ইস্টবেঙ্গলকে হারাল মোহনবাগান। আক্রমণ প্রতি-আক্রমণের খেলা চলল গোটা ৯০ মিনিট ধরে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একে অন্যকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়ল না দু’দল। কিন্তু বাগান ফুটবলাররা সুযোগ থেকে ফসল তুললেন বেশি। আর বিশ্রী হারের সমর্থকদের ক্ষোভের সম্মুখীন হলেন ইস্টবেঙ্গল খেলোয়াড় মার্কোস।
রবিবাসরীয় যুবভারতীতে ডার্বি শেষ হওয়ার মিনিট পনেরো পরেও গ্যালারিতে দু’হাতে মুখ ঢেকে বসেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের এক তরুণ সমর্থক। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন এ বারও পূর্ণ হবে না। ঠিক মতো দলই তো গড়া হয়নি এই মরসুমে। মার্কোস, ক্রেসপির মতো নিম্নমানের বিদেশিদের নিয়ে ট্রফি জেতার স্বপ্ন দেখাই অপরাধ।’’
সাত ম্যাচে চার গোল করলেও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা একেবারেই খুশি নন মার্কোসকে নিয়ে। ইতিমধ্যেই তাঁর জায়গায় নতুন বিদেশি স্ট্রাইকারকে আনার দাবিতে সরব। হতাশ মার্কোস বলছেন, ‘‘গোল করার জন্য পর্যাপ্ত পাস পাচ্ছি কোথায়?’’ বিধ্বস্ত কোলাডো, খুয়ান মেরা গঞ্জালেসও। মোহনবাগানের ডিফেন্ডার ধনচন্দ্র সিংহের সঙ্গে সংঘর্ষে ম্যাচের ২৫ মিনিটে মাথা ফেটে গিয়েছিল কোলাডোর। ব্যান্ডেজ বেঁধেই পুরো ম্যাচ খেলেন তিনি। আর স্পেনীয় মেরার দুরন্ত শট ক্রসবারে লেগে ফেরে। স্টেডিয়াম ছাড়ার সময় বলছিলেন, ‘‘একেই বলে দুর্ভাগ্য। এই ম্যাচটা জিততেও পারতাম।’’
রবিবাসরীয় ডার্বিতে গোল করেছেন মার্কোস। কোচও তাঁর পাশে। তা সত্ত্বেও লাল-হলুদ শিবিরে স্পেনীয় স্ট্রাইকারের ভবিষ্যৎ একেবারেই সুরক্ষিত নয়। আগামী মঙ্গলবার কলকাতায় বিনিয়োগকারী সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের। কোচ আলেহান্দ্রোও সেখানে থাকবেন। সেখানেই নতুন ফুটবলার নেওয়া নিয়ে আলোচনা হবে। ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা বলছিলেন, ‘‘রক্ষণ থেকে আক্রমণ— সব বিভাগেই তো ফুটবলার পরিবর্তন দরকার। মঙ্গলবারের বৈঠকেই এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।’’
ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখে হতাশ কেভিন স্মিথও! ডার্বির আকর্ষণেই আয়ারল্যান্ড থেকে কলকাতায় এসেছেন তিনি। রবিবার যুবভারতীর গ্যালারিতে বসেছিলেন মোহনবাগান অন্তপ্রাণ আবু শর্মার পাশে। অভিভূত কেভিন বলেছিলেন, ‘‘ভারতে ফুটবলকে কেন্দ্র করে উন্মাদনা এই স্তরে পৌঁছতে পারে, কোনও ধারণা ছিল না। তবে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল তো সে ভাবে লড়াই করতেই পারল না।’’
আগের ম্যাচে গোকুলম এফসির বিরুদ্ধে রক্ষণের ব্যর্থতায় তিন গোল খেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। মোহনবাগানকে আটকাতে রক্ষণাত্মক রণনীতিকেই অস্ত্র করেছিলেন আলেহান্দ্রো। শুধু তাই নয়। রক্ষণ শক্তিশালী করতে আশির আখতারের পরিবর্তে রবিবার মেহতাব সিংহকে প্রথম একাদশে রেখেছিলেন। তা সত্ত্বেও মোহনবাগানের আক্রমণের সামনে বার বার ভেঙে পড়ছিল যাবতীয় প্রতিরোধ। কার্যত বিনাবাধায় গোল করেন জোসেবা বেইতিয়া ও পাপা বাবাকর জিওয়ারা। সবুজ-মেরুনের দুই তারকার কাছাকাছি কোনও ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডারই ছিলেন না।