শিক্ষায় গোটা দেশের মধ্যে যে বাংলা কতটা এগিয়ে, ফের তার প্রমাণ পাওয়া গেল খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যেই। যেখানে জেলাভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের বারাণসী ও তাঁর নিজের রাজ্য গুজরাটের মেহসনা জেলাকে পিছনে ফেলে দিয়েছে বাংলার বাঁকুড়া জেলা। চার থেকে আট বছরের শিশুদের মানসিক বোধের বিকাশের নিরিখেও বাঁকুড়ার খুদেরা মেহসনা, নালন্দা এবং বারাণসীকে পিছনে ফেলেছে। অ্যানুয়াল স্ট্যাটাস অফ এডুকেশন রিপোর্টের (অসর) ১৪তম সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে।
‘অসর ২০১৯: শৈশব’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বাঁকুড়ায় প্রথম শ্রেণির ৮৩ শতাংশ ছাত্রছাত্রী অক্ষর চেনে। কিন্তু মেহসনাতে লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে, সেখানে ৬২ শতাংশ পড়ুয়া অক্ষর চেনে। এদিকে বারাণসীতে ৪১.৯ শতাংশ প্রথম শ্রেণীর পড়ুয়া অক্ষর চেনে না। আর বিহারের নালন্দায় অর্ধেকেরও বেশি (৫৮.৯%) খুদে পড়ুয়া অক্ষর চেনে না। ১ থেকে ৯ সংখ্যা চিনতে পারে বাঁকুড়ায় প্রথম শ্রেণির ৮২ শতাংশ পড়ুয়া। মেহসনায় এই হার ৬২.৭ শতাংশ, বারাণসীতে ৬৮.৮ শতাংশ। তবে নালন্দা (৭৪.২) এ ক্ষেত্রে মেহসনা, বারাণসীর থেকে এগিয়ে।
চার লাইনের একটি অনু্চ্ছেদ প্রথম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পড়ার নিরিখেও বাঁকুড়া (৩০.১০) অন্যদের পিছনে ফেলেছে। নালন্দা, বারাণসী এবং মেহসনায় প্রথম শ্রেণির যথাক্রমে ১৯.৩, ১৮.৭ ও ১০.৬৪ শতাংশ শিশু ওই অনুচ্ছেদ পড়তে পারে। তবে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের একই পাঠ্য পড়তে পারার নিরিখে বাঁকুড়ার কচিকাঁচারা (৪৬.৬ শতাংশ) কিছুটা পিছিয়ে মেহসনার (৫০.৩ শতাংশ) থেকে। তবে বারাণসী (৪১.৬ শতাংশ) ও নালন্দার (২৮.২ শতাংশ) থেকে বাঁকুড়া সবদিক থেকেই এগিয়ে।
অসর-এর সমীক্ষার ফল নিয়ে কী বলছেন শিক্ষাবিদরা? রাজ্যের প্রাক্তন স্কুল শিক্ষামন্ত্রী, বাঁকুড়ারই মানুষ পার্থ দে বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে বাংলা বরাবরই শিক্ষায় এগিয়ে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায়। দেশের অন্য রাজ্যের জেলাগুলির সঙ্গে হিসাব করলে এখানে পড়াশোনার মান তুলনামূলক ভালোই। তবে উন্নতির আরও সুযোগ রয়েছে।’ রাজ্য স্কুলশিক্ষা পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদারের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় সাড়া জাগানো সাফল্য এসেছে। আগামী দিনে সারা দেশকে চমকে দেবে বাংলা। শিক্ষার সার্বিক পরিকাঠামো, নতুন সিলেবাস ও শিক্ষা পদ্ধতি এবং প্রশ্নের ধাঁচ ও নম্বর দেওয়ার ধরনে আমূল বদল বাংলার পড়ুয়াদের কাছে যে বেশ গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে, তা এই ফলাফলে স্পষ্ট।’