এনপিআর নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির সঙ্গে সেটিং করেছেন বলে যারা কুৎসা করছেন তারাই কিন্তু দিল্লিতে একই বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ডাকা বৈঠকে যোগ দিলেন। কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ডাকা বৈঠকে দিব্যি অংশগ্রহণ করেছেন। কংগ্রেসীদের নতুন বন্ধু সিপিএম কিন্তু এব্যাপারে কোন আপত্তি তোলেনি। আমার প্রশ্ন, ফেডারেল স্ট্রাকচারে কেন্দ্রীয় সরকারকে অগ্রাহ্য করা যায়না এই যুক্তি বাংলায় না মানা হলে দিল্লিতে মানা হবে কেন? রাজ্যে মোদি আসার পর প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর একটা জরুরি কথা তাকে জানানোর জন্য দেখা করা নিয়ে যারা মুখ্যমন্ত্রীর মুণ্ডপাত করেছিলেন, তারা কিন্তু নতুন বন্ধুদের এই ডিগবাজি নিয়ে সম্পূর্ণ নীরব। এই হল সিপিএম, এই হল তাদের ধন্ধমূলক বস্তুবাদ। সাধে দলটার এমন দশা হয়েছে!
কংগ্রেস, সিপিএম আঁতাতের মূল সুর কিন্তু বিজেপি নয়, তৃণমূল বিরোধিতা। অথচ এটা সবাই জানেন কংগ্রেস এবং সিপিএম হাওয়া কোনদিকে যায় তা বোঝার জন্য যখন ঘাপটি মেরে বসেছিলেন তখন কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এনআরসি, এনপিআর, ক্যা’র বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। তিনিই দেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তার রাজ্যে তিনি এনপিআর হতে দেবেন না। অথচ স্রেফ বিরোধিতা করার জন্যই কংগ্রেস ও সিপিএম তার সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
সিপিএম ও কংগ্রেস যাই বলুক না কেন গোটা দেশে এনআরসি, এনপিআর, ক্যা বিরোধী লড়াইয়ের প্রধান মুখ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে তিনি এই যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এ নিয়ে সভা, মিটিং, মিছিল, শাসকদলের সমালোচনা, অবস্থান, ধর্না, বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক তিনিই সবচেয়ে বেশি করেছেন। নিজেদের ব্যর্থতা ও রাস্তায় নেমে লড়াই করার দায় এড়াতেই যে কংগ্রেস, সিপিএম এসব কুযুক্তির অবতারণা করছে এ কথা বোঝার বুদ্ধি বাংলার মানুষের আছে।
শুধু রাজনৈতিক দূরদর্শীতার অভাবই নয়, প্রশাসনিক দক্ষতাতেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তার বিরোধীদের থেকে অনেক এগিয়ে আছেন, এটাও তাদের গাত্রদাহের একটা বড় কারণ। খবরের কাগজে দেখছিলাম সরকারি পরিসংখ্যান বলছে কর্মহীন অবস্থায় মানুষের আত্মহত্যার ঘটনা বামশাসিত কেরলে সবথেকে বেশি। অন্যদিকে গত ২ বছরে বাংলায় অনাহারে কোন কৃষকের মৃত্যু হয়নি। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যানই বলছে বাংলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগোনোর কথা। শুধু আমার সিপিএম ও কংগ্রেস বন্ধুরা তা দেখতে পারছেন না।
এ এক বিচিত্র রাজনীতি! এনআরসি ইস্যুটাই তারা ধরতে পারেন নি। তা পারলে এই প্রশ্নে দেশব্যাপী বিজেপি বিরোধী আরও বৃহত্তর জোট গড়ে তোলার ডাক দিতেন তারা। তা না করে তাদের এখন মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলার জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপি বিরোধী লড়াইকে যেনতেন প্রকারেণ দুর্বল করে দেওয়া। নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে আন্দোলনের নামে ভেসে ওঠার চেষ্টা করছে দেশের দুটি প্রাচীন দল। তারা বুঝতেই পারছেন না রাজ্যে কিন্তু তৃণমূলের ভিত এনআরসি, ক্যা, এনপিআর বিরোধী লড়াইয়ের সূত্রে আরও মজবুত হয়েছে। হিন্দু, মুসলমান, দলিত সব সম্প্রদায়ের মানুষ আরও বেশি করে তার পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন। এখনও এই সত্যটা বুঝতে না পারলে পাশ দিয়ে মিছিল চলে যাবে, আপনারা শুধু দর্শক হয়ে থাকবেন। এখনও নিজেদের সংশোধন না করতে পারলে অচিরেই কংগ্রেস ও সিপিএম দল দুটি স্রেফ সাইনবোর্ডে পরিণত হবে।
কংগ্রেস ও সিপিএমের বন্ধুদের বলি, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী লড়ছেন, তার পাশে দাঁড়ানো বা না দাঁড়ানো আপনাদের ইচ্ছে। কিন্তু কুৎসার রাজনীতি করে নিজেদের আর ছোট করবেন না।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত