বিরোধীদের আপত্তি এড়িয়ে গত ১১ ডিসেম্বর সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) বিল পাশ করিয়ে নেয় মোদী সরকার। তার পর দিন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে সই করে দেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। কিন্তু কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। তা চরম আকার ধারণ করে উত্তরপ্রদেশে। বেশ কয়েক জন প্রাণ হারান সেখানে। সেই বিক্ষোভ চলাকালীন, পুলিশি নিস্ক্রিয়তা নিয়ে ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিমিং করতে গিয়ে গ্রেফতার হন সাদাফ জাফর। লখনউয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় ক্যানসার রোগী এসআর দারাপুরীকে। তাঁদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা বাঁধানোর অভিযোগ দায়ের হয়। শুরু থেকেই এর তীব্র বিরোধিতা করে আসছিলেন সমাজকর্মীরা। এবার সাদাফ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন “হিংসা চালাচ্ছে যোগীর পুলিশই”।
উত্তরপ্রদেশে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে দিল্লীতে গণ-আদালত বসিয়েছিল কয়েকটি নাগরিক সংগঠন। সেখানে সাদাফ-দারাপুরীরা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন। দিনভর শুনানির শেষে জুরিরা রায় দিলেন, উত্তরপ্রদেশে রাজ্য প্রশাসনই হিংসা চালাচ্ছে। সাদাফকে প্রথমে থানায় নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। ‘‘আমাকে যে মারধর করা হতে পারে, আমাকে যে এ দেশে পাকিস্তানি বলে ডাকা হতে পারে, আমার সামনে যে অন্য লোককে উলঙ্গ করা হতে পারে, তা অবিশ্বাস্য ছিল। মনে হচ্ছিল, আমি যেন হিটলারের জার্মানিতে এক জন ইহুদি। কেন আমার সঙ্গে এমন আচরণ করা হল? আমি মুসলিম। বারবার ‘তুম লোগ’ শব্দটাই শুনেছি।’’ সাদাফ গ্রেফতার হয়েছেন শুনে থানায় গিয়েছিলেন সমাজকর্মী দীপক কবীর। তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’, ‘শহুরে নকশাল’ বলে হাত-পা চেপে ধরে পুলিশ। তার পর? নির্দেশ আসে, ‘‘এমন পেটাও যেন হাত-পা-মুখ দু’ইঞ্চি ফুলে যায়।’’
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর সাদাফ জাফরের মনে হয়েছিল, ‘‘আমার যেন আর কোনও পরিচিতি রইল না। আমি যে সামাজিক কাজকর্ম করি, আমি যে থিয়েটার করেছি, ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছি, আমি যে অনুবাদ করি, সেই সব পরিচয় ধুয়েমুছে গেল।’’ ‘‘আমি কেন গ্রেফতার হয়েছিলাম জানেন?’’ নিজেই উত্তর দিলেন প্রাক্তন আইপিএস এস আর দারাপুরী। ‘‘একটাই কারণ। আমি মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম। নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিপক্ষে ছিলাম।’’
উত্তরপ্রদেশ ঘুরে হর্ষ মন্দার, নিবেদিতা মেননদের তুলে আনা ছবি-ভিডিয়ো দেখে, সাদাফদের বক্তব্য শুনে প্রাক্তন বিচারপতি এ পি শাহ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, ‘‘কী ভাবে একটা পুলিশ বাহিনী এতখানি সাম্প্রদায়িক হয়ে গেল?’’ স্বাধীন ভারতে কি এই পরিস্থিতি আগে তৈরি হয়নি? ইরফানের জবাব, ‘‘না, কারণ জরুরি অবস্থার সময় কী আইন, তা জানা ছিল। এখানে আইনই নেই।’’
জাফরের আরও দাবি, “পুলিশ আমাকে গালিগালাজ করছিল। আমাকে প্রথমে এক জন মহিলা পুলিশকর্মী চড় মারেন। তার পর মারেন এক পুরুষ অফিসার। ওই পুরুষ অফিসার নিজেকে ইন্সপেক্টর জেনারেল পদমর্যাদার অফিসার বলে দাবি করেছিলেন। তিনিই আমার পেটে লাথি মারেন এবং বলেন পাকিস্তানে চলে যাও।’ জেলেও তাঁকে খাবার ও কম্বল দেওয়া হত না”।