বাইরে তখন বিক্ষোভের আবহ থাকলেও, রাজভবনে ভিতরে ততক্ষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বিজেপির রাজ্যনেতাদের বৈঠক শুরু হয়ে গিয়েছে। দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়-সহ রাজ্য বিজেপির তাবড় নেতারা তখন প্রধানমন্ত্রীকে বোঝাতে শুরু করেছেন, কী ভাবে জেলায় জেলায় সিএএ-র সমর্থনে তাঁরা লাগাতার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। সেইসময় হঠাৎই নিজেই গাড়ি চালিয়ে রাজভবনের উত্তর গেটের সামনে সপরিবারে হাজির হলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী রচনা শর্মা ও ছোট্ট কন্যা।
নির্ধারিত সময়ের অনেকটা পরেই বাবুল রাজভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পৌঁছন। তাঁর দাবি, বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে রাজভবনে আসতে হওয়ার ফলেই এই বিলম্ব। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া পেতে তখন বাবুলের গাড়ি ছেঁকে ধরেছেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। সে সব সামলে স্ত্রী-সন্তানকে গাড়িতে বসিয়ে রাজভবনে ঢুকতে গিয়েই বাবুল যেন রীতিমতো ‘হোঁচট খেলেন’। গেটে তাঁর সঙ্গে মুখোমুখি দিলীপরা। ততক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের বৈঠক শেষ। যে বৈঠকে বাবুলেরও থাকার কথা ছিল। বৈঠক শেষ করে দিলীপরা যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই রাজভবনে ঢুকছেন বাবুল।
স্বভাবতই আসানসোলের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর জন্য সেই পরিস্থিতি যথেষ্টই অস্বস্তিকর। তবে মুখের হাসি অমলিন রেখে বাবুল বিষয়টি সহজ করার চেষ্টা করলেও, তাঁকে খোঁচা দিতে ছাড়লেন না বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি অবশ্য কৌশলে এদিন বাবুলকে একপ্রকার ঠুকে দিলেন। বাবুলকে দেখে দিলীপ হেসে বললেন, ‘বাবুলদা দিল্লীতেই দেখা করে নেবেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।’ বাবুল অবশ্য পরে জানান, ‘আমি নাগপুর থেকে এ দিনই পৌঁছেছি। তাই, কিছুটা দেরি হয়েছে। রাজভবনে না-হলেও কারেন্সি বিল্ডিংয়ের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে।’
তখনকার মতো বিষয়টি মিটে গেলেও রাজ্য বিজেপির অন্দরে বাবুলের দেরি করে রাজভবনে পৌঁছনো নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘আজ পর্যন্ত কোনও কর্মসূচিতে বাবুল ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারেননি। সব সময়েই দেরি। পার্টির কোনও কর্মসূচিতে ওঁকে আমন্ত্রণ জানানো হলে নির্ধারিত সময়ের দু’ঘণ্টা আগে আসতে বলা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এদিনের বৈঠকেও তার অন্যথা হল না।’ সময়জ্ঞান নিয়ে বাবুলের এমন নির্বুদ্ধিতায় রীতিমতো চটেছেন বিজেপির রাজ্যনেতারা, তা একপ্রকার পরিষ্কার।