হিসেব মতো বাকি আর মাত্র বছর দেড়েক। ২০২১-এর মাঝামাঝিতেই রাজ্যে হবে বিধানসভা ভোট। কিন্তু গত মাসে হওয়া তিন আসনের উপনির্বাচন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে একুশের লড়াই। রাজনৈতিক মহলের মতে, আদতে ওই ৩ কেন্দ্রের উপনির্বাচন ছিল ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের কোয়ার্টার ফাইনাল। যাতে বিজেপিকে গোহারা হারিয়ে কার্যত হ্যাটট্রিক করেছিল তৃণমূল। এবার পরের ধাপ কলকাতা, বিধাননগর-সহ শতাধিক পুরসভার নির্বাচন। যা হতে পারে ২০২০-র মার্চ-এপ্রিল নাগাদ। স্বাভাবিকভাবেই পুরভোটকে বিধানসভা নির্বাচনের সেমিফাইনাল ধরে নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে সব দল। কিন্তু ২০১৯ পার করার সময় কোন দল কোথায় দাঁড়িয়ে? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, অতীতে একাধিক বারের মতো ২০১৯-এও খানিক ধাক্কা খেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক ভাবে শুধু ঘুরেই দাঁড়াননি। ফিটনেসের অঙ্গে মাপলে বলা চলে, বাংলায় তাঁর দলের ধারেকাছে নেই কোনও রাজনৈতিক দল।
জানা গেছে, মিশন একুশের মহড়া শুরু হবে ‘২০-এর গোড়া থেকেই। এ বছর লোকসভা ভোটে বড় ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েও উপনির্বাচনে খড়গপুর, কালিয়াগঞ্জের মতো আসন প্রথমবার দখল করে রাজ্যে বিজেপির জয়রথ থামিয়েছেন মমতা। এর পর পিঠোপিঠি মহারাষ্ট্র-ঝাড়খন্ড খুইয়ে জাতীয় স্তরেও বিজেপির গ্রাফ নিম্নমুখী। দেশের আম আদমিরা যখন হেঁসেল নিয়ে চিন্তিত, ঠিক সেই সময় নাগরিকত্ব আইনের সংস্কার করতে গিয়ে নাগরিকদেরই ‘ক্ষুব্ধ এবং বিভ্রান্ত’ করে তুলেছে কেন্দ্র। আর সেই ক্ষোভকে পরিপূর্ণ নাগরিক আন্দোলনের রূপ দিয়ে মমতা বাংলায় বিজেপির বাড়বাড়ন্তে বাঁধ সাধতে পেরেছেন বলে ওয়াকিবহাল মহলের ব্যাখ্যা। তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের যৌথ লড়াইয়ের নয়া প্রচেষ্টা শুধু ব্যর্থই হয়নি, এইজন্য আরও ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে তারা। তবে এর ফলে লড়াইটা দ্বিমুখী হলে গেলেও বিজেপির মোকাবিলায় তৃণমূল অনেকটাই ভালো অবস্থায় ২০২১-এর লড়াই শুরু করতে চলেছে, মানছেন বিরোধীরাও।
আগামী বছরের প্রথম অর্ধে কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির জনভিত্তি যাচাইয়ের সব থেকে বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠতে চলেছে। চলতি বছরের শেষ মাসে কলকাতায় মমতার লাগাতার মিছিল ছুঁয়ে গিয়েছে বহু ওয়ার্ডকেই। দলনেত্রীর এই লাগাতার পদযাত্রাও তাঁদের কাছে প্রাপ্তি বলে মনে করছেন কলকাতার ওয়ার্ড সভাপতিরা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, শুধু ভোটে জেতার নিরিখে এগিয়ে থাকাই নয়, দলকে আবার আন্দোলনমুখী মেজাজে ফেরানোর কাজেও মমতা সফল। দেশের অন্য বিরোধী নেতারা যে সময় লোকসভা ভোটের ধাক্কা সামাল দিতে ব্যস্ত ছিলেন, মমতা ততদিনে ঘুরে দাঁড়িয়ে ফের গোটা দেশের বিরোধীপক্ষকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টায় নেমে পড়েছেন। সিএএ কার্যকর করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সামনে দেওয়াল গড়ে তিনি অন্য বেশ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের একই পথে হাঁটতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
অন্যদিকে, লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর ব্যারাকপুর কেন্দ্রের অন্তর্গত নৈহাটি, ভাটপাড়া, হালিসহর, কাঁচড়াপাড়া, গারুলিয়া পুরসভাগুলির দখল নিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু বিজেপিকে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে ফেলে হাতছাড়া হওয়া পুরসভাগুলি একে একে ফিরিয়ে আনে শাসকদল। ভাটপাড়া পুরসভা আনুষ্ঠানিকভাবে পুনর্দখল করা শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি। শুধু পুরসভা হারানোই নয়, বিজেপি বালুরঘাট জেলা পরিষদে দলবদলের খেলা চালিয়ে শেষপর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি। সভাধিপতি লিপিকা রায়ও বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলেই ফিরে এসেছেন। ফলে সেখানেও মনোবল ফিরেছে তৃণমূল কর্মীদের। আবার লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে তৃণমূল ৮টি আসনের সব কটিতে হারলেও মাত্র ছ’মাসের মধ্যে প্রায় ৫৮ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকা উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ কেন্দ্রে জয় ছিনিয়ে এনেছে তারা। সবমিলিয়ে একুশের লড়াইয়ে মমতা ও তাঁর দলকেই এগিয়ে রাখছেন রাজনীতিবিদরা।