মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই কেন্দ্রীয় নীতির জেরে দেশের অর্থনীতিতে গভীর মন্দা ও নীতি-পঙ্গুত্ব দেখা দিয়েছে। শিল্পে খরা। নগদ টাকার জোগান নেই। জিডিপি মুখ থুবড়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তো বটেই, আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন নামজাদা রেটিং সংস্থাও। এই পরিস্থিতিতে সরকারের রাজস্ব আদায় কমবে, এটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই।
আয়কর দফতরের অন্দরের হিসেবই বলছে, চলতি আর্থিক বছরে ইনকাম ট্যাক্স আদায় একপ্রকার ধরাশায়ী হয়ে পড়েছে। বড় অঙ্কের আয়কর আসে, এমন তাবড় রাজ্যগুলি থেকে কর আদায় কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। তার জেরে গোটা দেশের মোট আদায়ও একেবারেই আশানুরূপ নয়।
কিন্তু সেই সঙ্কটের সময়েও একেবারে উল্টোদিকে বইছে এ রাজ্যের হাওয়া। দেশে বড় শহরগুলির আয়কর আদায় বৃদ্ধির নিরিখে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে বাংলা। বহু রাজ্যে যেখানে বৃদ্ধির বদলে আদায় ঋঋণাত্মক অঙ্কে পৌঁছে গিয়েছে, সেখানে রাজ্যের এই সাফল্যে খুশি রাজস্ব দফতর।
গত আর্থিক বছরে আয়কর আদায়ের নিরিখে দেশে ৯ নম্বর জায়গায় ছিল কলকাতা সার্কেল। এই সার্কেলের আওতায় আওতায় আছে বাংলার পাশাপাশি সিকিম এবং আন্দামান ও নিকোবর। সার্বিকভাবে এই সার্কেলে মোট আদায় হয়েছিল ৪৩ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। তার আগের বছরের তুলনায় আয়কর বৃদ্ধির হার ছিল ৮.২ শতাংশ। আর গত বছর দেশে মোট আয়কর আদায় হয় ১০ লক্ষ ৯৪ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। তার আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধির হার ১৬.৯ শতাংশ।
কিন্তু এবার? দফতরের অন্দরের হিসেব বলছে, জাতীয় ক্ষেত্রে আয়কর আদায়ে বৃদ্ধির হার ছিল ১৬.৯ শতাংশ, এবার তা প্রথম আট মাসে নেমে এসেছে ০.৭ শতাংশে। অর্থাৎ বাস্তবে আদায় বৃদ্ধি প্রায় হয়নি বললেই চলে। নভেম্বর পর্যন্ত আদায় হয়েছে মোট ৫ লক্ষ ৪৯ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা। সেখানে বাংলা থেকেই নভেম্বর পর্যন্ত মোট আয়কর আদায় হয় ২২ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। বৃদ্ধির নিরিখে সেই হার ৬.৬ শতাংশ।
কেন এতটা সফল হল মমতার রাজ্য? দফতরের কর্তারা বলছেন, এখানে যে অঙ্কের আয়কর আদায় হয়েছে, তার মধ্যে সিংহভাগ দখল করে রয়েছে কর্পোরেট ট্যাক্স। সেই আদায়ের অঙ্ক ১৪ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। বাকিটা সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত কর।