বুধবার সকালেই মন্ত্রীসভার বৈঠক ডেকে তড়িঘড়ি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল(ক্যাব)-এ অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার। আর তারপর থেকেই জল্পনা ছিল সরকার কবে বিলটি সংসদে পেশ করে তা নিয়ে। বৃহস্পতিবার বিলটি নিয়ে আলোচনার দিন স্থির করতে বৈঠকে বসে লোকসভার বিষয় উপদেষ্টা কমিটি। বৈঠকে ঠিক হয়, বিলটি আগামী সোমবার লোকসভায় পেশ করবে সরকার। বিষয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় পরে বলেন, ‘আলোচনা শুরু হবে মঙ্গলবার থেকে। আলোচনার জন্য সময় ধার্য করা হয়েছে চার ঘণ্টা।’
স্বাভাবিকভাবেই এই মুহূর্তে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আটকাতে কোমড় বাঁধছে বিরোধীরা। যদিও এ কাজে তারা কতটা সফল হবেন, তা নিয়ে সংশয়ে তারা। বিরোধী শিবির মনে করছে, এবার রাজ্যসভাতেও ক্যাব পাশ করিয়ে নিতে পারবে সরকার। কারণ, এক্ষেত্রে সরকারের পাশেই থাকবে শিবসেনা, টিআরএস, বিজেডির মতো দলগুলি। মনোনীত সদস্যদের সমর্থনও পাবে বিজেপি। রাজ্যসভায় মোট আসন ২৪৫। ৭টি আসন ফাঁকা রয়েছে। বাকি ২৩৮টির মধ্যে এনডিএ-র হাতে রয়েছে ১০২টি, আর কোনও দিকেই নেই এমন সংখ্যা ৩৯। ফলে ১২০ জনের সমর্থন পাওয়া কঠিন নয়।
এ সব ভেবেই আগেভাগেই বিলের বিরোধিতায় দেশজুড়ে প্রচারে নামছে বিরোধী দলগুলি। গতকাল সংসদে কংগ্রেসের রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদের কক্ষে বিরোধীদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সোমবার বিল পেশের আগে হাতে যে কটা দিন সময় পাওয়া যাচ্ছে তা কাজে লাগাবে বলে ঠিক করেছে কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, সিপিএম, সিপিআই, সমাজবাদী পার্টি, আম আদমি পার্টি, আরজেডি, এনসিপি’র মতো প্রায় ১৬ টি বিরোধী দল।
ঠিক হয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি যে যার নির্বাচনী কেন্দ্রে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিপক্ষে মানুষের সমর্থনে ঝাঁপাবে। মোদী সরকার তথা বিজেপি সম্পর্কে মানুষের মনে আক্রোশ তৈরি করতে প্রচার বাড়ানো হবে। সোশাল মিডিয়া, বৈদ্যুতিন মাধ্যম, সভার মাধ্যমে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ইস্যুতে কেন্দ্র বিরোধী জনমত তৈরির চেষ্টা হবে। মোদি বিরোধী স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে বিরোধীদের সমন্বয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা, তৃণমূলের সৌগত রায়, ডেরেক ও’ব্রায়ান, এনসিপির প্রফুল্ল প্যাটেলের মতো সাংসদরা।
বৈঠকের পর ডেরেক জানান, দেশবাসীকে মোদী সরকার ভাঁওতা দিয়ে চলেছে। আসামে নাগরিকপঞ্জী ব্যর্থ হয়েছে। যে ১৯ লক্ষের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের মধ্যে ১২ লক্ষই হিন্দু। স্পষ্টতই বিজেপি হিন্দু-বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এখন ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে নাগরিকত্ব বিল এনে ধর্মের ভিত্তিতে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার কৌশল নেওয়া হচ্ছে। যা আসলে আদিবাসী-বিরোধী।’ ডেরেক স্পষ্ট বলেন, মোদী সরকার যেখানে আসামের মতো একটি মাত্র রাজ্যেই এনআরসিতে ব্যর্থ, সেখানে গোটা দেশেই সেই ফেল মডেলকে কার্যকর করতে চাইছে। আমরা কোনও ভাবেই বাংলায় এনআরসি হতে দেব না।
একইসঙ্গে বিরোধীদের প্রশ্ন, কাশ্মীরের বিশেষ স্ট্যাটাস প্রত্যাহার করতে যখন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল হল, এক দেশ এক নিশান বলে স্লোগান তুলল বিজেপি, সেখানে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে কেন বাদ থাকবে উত্তর-পূর্বের কয়েকটি রাজ্য সহ সংবিধানের ষষ্ঠ শিডিউলের আওতাভুক্ত এলাকা? মোদী সরকারই তো একই দেশে দু’রকম আইন কার্যকর করতে চাইছে। তাই এই বিল দেশবিরোধী বিল। মন্তব্য করেন ডেরেক।