তাঁর বিরুদ্ধে অপহরণ, যৌন কেলেঙ্কারি-সহ একাধিক অভিযোগ উঠতেই বিদেশ মন্ত্রকের চোখে ধুলো দিয়ে দেশ ছেড়ে পগার পার হয়েছেন তিনি। এখনও হন্যে হয়ে পুলিশ খুঁজছে তাঁকে। কিন্তু এবার সামনে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, আশ্রম চালিয়েই একটি আস্ত দ্বীপ কিনে ফেলেছেন পলাতক ধর্মগুরু স্বামী নিত্যানন্দ। ইকুয়েডরের কাছে অবস্থিত সেই দ্বীপের নাম হয়েছে ‘কৈলাশ’। সেটাকেই নিজের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছেন তিনি।
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে সেই দ্বীপের পতাকা, পাসপোর্ট, এমব্লেম সবই নাকি তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেখানে তিনি একজন প্রধানমন্ত্রীও নিয়োগ করবেন বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর। নিজের দেশে নাকি যোগা, বিজ্ঞানচর্চা, বিনামূল্যে শিক্ষা, চাকরি, খাবার–সবই তিনি রাখবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। ওই দ্বীপে নাকি একাধিক মন্দির তৈরি হচ্ছে। থাকবে গুরুকুল আশ্রম। সেই দেশই নাকি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিন্দুরাষ্ট্র।
হ্যাঁ, ‘নতুন দেশ’, নিজের সাম্রাজ্যকে এভাবে ব্যাখ্যা করে একটি ওয়েবসাইটও নাকি খুলে ফেলেছেন নিত্যানন্দ। স্বঘোষিত ধর্মগুরুর ভাষায়, তাঁর নতুন ডেরা থুরি ‘দেশ’ নাকি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ । কী কী রয়েছে তাঁর সাম্রাজ্যে? সূত্রের খবর, গোটা দ্বীপে নাকি একাধিক মন্দির তৈরি করাচ্ছেন নিত্যানন্দ। গাছপালা ঘেরা আশ্রমে যোগচর্চার বন্দোবন্দও আছে। আর আছে গুরুকুল আশ্রম। শিষ্যদের জন্য বিনামূল্যে থাকা, খাওয়া, চিকিৎসার ব্যবস্থাও আছে সেখানে।
উল্লেখ্য, নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ একাধিক। ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে হিমাচল প্রদেশের সিমলার ৫০ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রাম থেকে যৌন কেলেঙ্কারির দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল নিত্যানন্দকে। গত বছর জুন মাসেও কর্ণাটকের এই ‘গডম্যান’-এর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে চার্জ গঠিত হয়েছিল। অপহরণ ও আহমেদাবাদের শিশুদের বেআইনি ভাবে আটকে রাখার অভিযোগও উঠেছে তাঁর ও তাঁর কয়েক জন অনুগামীর বিরুদ্ধে।
এরপর জনার্দন শর্মা নামে এক ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রী গুজরাত হাইকোর্টে অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালে তাঁদের চার মেয়েকে ভর্তি করেছিলেন নিত্যানন্দর বেঙ্গালুরুর শিক্ষায়তনে। তখন তাদের বয়স ছিল সাত থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। পরে তাঁরা শুনতে পান, মেয়েদের বেঙ্গালুরু থেকে সরিয়ে আহমেদাবাদে যোগিনী সর্বজ্ঞপীঠম নামে এক শিক্ষায়তনে রাখা হয়েছে। তাই সেখানে মেয়েদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওই শিক্ষায়তনের কর্মকর্তারা দেখা করতে দেননি।
পরে পুলিশের সাহায্যে তাঁরা দুই নাবালিকা কন্যাকে ফেরত পান। কিন্তু বড় দুই মেয়ে তাঁদের সঙ্গে আসেনি। তাদের এক জনের নাম লোপামুদ্রা (২১), অপর জনের নাম নন্দিতা (১৮)। গুজরাত হাইকোর্টে ওই দম্পতির অভিযোগ, লোপামুদ্রা ও নন্দিতাকে আশ্রম কর্তৃপক্ষ দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আটকে রেখেছে। এমনকি তাঁদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগও ওঠে। তদন্ত শুরুর পরেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান নিত্যানন্দ।
গুজরাত পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে নাকি লুকিয়ে আছেন তিনি। এখন শোনা যাচ্ছে, দেশ ছেড়ে পালিয়ে একটা গোটা দেশই তৈরি করে ফেলেছেন নিত্যানন্দ। তবে তাদের কাছে এই বিষয়ে কোনও সরকারি রিপোর্ট নেই বলেই জানিয়েছে বিদেশমন্ত্রক।