সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দিল্লীর মসনদে বসার পর থেকেই সারা দেশে এনআরসি চালু করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে বিজেপি। ইতিমধ্যেই আসামে নাগরিকপঞ্জীর চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ১৯ লক্ষ ‘দেশবাসী’র নাম। আর এভাবেই সারাদেশে কাটাছেঁড়া করতে বসেছেন গেরুয়া শিবির। তবে বাংলার মানুষের গলায় এই খাঁড়া পড়তে দেবে না বলে দৃঢ় সংকল্প নিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই থেকেই এনআরসিকে কেন্দ্র করে তৃণমূল বনাম অমিত শাহ তথা বিজেপির লড়াই ক্রমশ তুঙ্গে উঠছে৷
রাজ্যসভায় অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, সারা দেশে এ বার এনআরসি চালু করা হবে৷ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডুকে চিঠি লিখে তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করেছে, অমিত শাহ সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল নিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন, সংসদকে বিভ্রান্ত করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে সংসদে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হোক৷ তাদের চিঠি পেয়ে বেঙ্কাইয়া কী ব্যবস্থা নেন, সেদিকেই তাকিয়ে গোটা তৃণমূল শিবির৷
বিতর্কের সূত্রপাত বুধবার। রাজ্যসভায় এনআরসি নিয়ে তোলা প্রশ্নের জবাবে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল যখন এর আগে সিলেক্ট কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছিল তখন সব কটি রাজনৈতিক দল তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল৷ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই দাবিটি নিয়েই বেঙ্কাইয়া নাইডুকে চিঠি লিখে তাদের আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ একইসঙ্গে তৃণমূলের সংযোজন, সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল-২০১৪- যখন যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছিল, তখন তাদের দলের তরফে সুস্পষ্ট ভাবে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়েছিল৷ এই ক্ষেত্রে যৌথ সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট দেখে নেওয়ার জন্য রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে লেখা চিঠিতে অনুরোধ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷
সূত্রের খবর, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর আয়োজিত যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেস আপত্তি জানিয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্ব নির্ধারণের নীতি নিয়ে৷ তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়ান ও লোকসভার সাংসদ সৌগত রায় তাঁদের বিরোধিতা লিপিবদ্ধও করিয়েছিলেন৷ পরবর্তী কালে তা সিলেক্ট কমিটির রিপোর্টে উল্লিখিতও হয়েছিল৷ নাগরিকত্ব একটি সাংবিধানিক বিষয়, কোনওভাবেই তার সঙ্গে ধর্মকে মেলানো কাঙ্খিত নয়, তৃণমূলের এই যুক্তিকে তখন সমর্থন জানিয়েছিল কংগ্রেস-সহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দল৷ ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশে সনাতন ঐতিহ্য বজায় রাখার কথা ভাবা উচিত বলেও দাবি জানায় তারা৷