শিক্ষার মধ্যে ধর্মের বেড়াজাল এনে যখন বিজেপি শাসিত রাজ্যেগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভেদাভেদ তৈরি হচ্ছে, সেখানেই বাংলার রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির এক নজিরবিহীন উদাহরণ তৈরি করছে। শিক্ষক কোন ধর্মের বা কোন বর্ণের, সেটা কখনওই সেখানে বিবেচ্য নয় বলেই জানিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, মুসলিম শিক্ষকের কাছে সংস্কৃত পড়বেন না বলে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা যখন বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন, সেই সময়েই বেলুড়ের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রমজান আলির কাছে সংস্কৃতের পাঠ নিচ্ছেন পড়ুয়ারা। কয়েক দিন আগে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে সংস্কৃত বিভাগে সহকারী শিক্ষকের পদে যোগ দিয়েছেন রমজান। তাঁরই সঙ্গে যোগ দিয়েছেন গণেশ টুডু নামের আরও এক শিক্ষক। কলেজ সার্ভিস কমিশন (সিএসসি) থেকেই তাঁদের নাম সুপারিশ করা হয়েছিল।
বেলুড়ের ওই কলেজ সূত্রের খবর, দর্শন, রসায়ন, পরিসংখ্যান-সহ আরও কয়েকটি বিভাগ মিলিয়ে ৭-৮ জন মুসলিম শিক্ষক আগে থেকেই সেখানে পড়াচ্ছেন। তাই রমজানের যোগ দেওয়াটা নতুন কিছু নয় বলেই মনে করেন ওই কলেজের অধ্যক্ষ স্বামী শাস্ত্রজ্ঞানন্দ। তিনি বলেন, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন, ‘প্রত্যেক মানুষের ভিতরেই সেই অনন্ত দেবত্ব রয়েছে। তাকে বিকশিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’ তাই কোন শিক্ষক কোন ধর্মের বা কোন বর্ণের, সেটা তো দেখার কথাই নয়।’’ ওই কলেজেই দীর্ঘদিন ধরে বেদান্ত পড়াচ্ছেন দর্শন বিভাগের প্রধান শামিম আহমেদ। তাঁর কথায়, ‘‘বিদ্যামন্দিরের ছাত্রদের কাছে উনি (রমজান) এক জন মাস্টারমশাই। তিনি কেমন পড়াচ্ছেন, শুধু সেটাই দেখছেন পড়ুয়ারা। এবং এটাই রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বৈশিষ্ট্য।’’ এইভাবেই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মের বেড়াজাল ছাড়িয়ে শিক্ষাকে আত্মজ করছে শিক্ষার্থীরা।