জিরো আওয়ারে দেশের বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অস্বস্তিকর প্রশ্ন এড়াতেই মুলতুবি করা হচ্ছে অধিবেশন, সংসদ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সরকার পক্ষ। এবার এই অভিযোগে সরব হলেন বিরোধীরা।
সোমবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিন বিরোধীরা রণং দেহি মেজাজে থাকলেও মঙ্গলবার রাজ্যসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর জন্য বিরোধী সাংসদদের পর পর চারটি প্রশ্ন তালিকাভুক্ত ছিল। কিন্তু অধিবেশন শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে হইহল্লার কারণ দেখিয়ে অধিবেশন মুলতুবি করে দেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু।
ঘটনা হল, প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতে নিজেদের আসন থেকেই কাশ্মীর পরিস্থিতি, জেএনইউ ও চেন্নাই আইআইটিতে ছাত্রী আত্মহত্যার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করেন বিরোধী সাংসদেরা। সেই সময় না ওয়েলে নেমেছে কেউ, আর না-ই বা কোনও বড় রকমের হল্লাও হয়েছে। অর্থাৎ এমন কোনও পরিস্থিতিই তৈরি হয়নি, যাতে অধিবেশন মুলতুবি করে দিতে হয়। ফলে চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বাভাবিক উঠছে প্রশ্ন।
কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ সকল বিরোধীদের অভিযোগ, অর্থনীতি সংক্রান্ত প্রশ্নগুলিকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্যই বামেদের ওই প্রশ্নগুলিকে কাজে লাগিয়ে তড়িঘড়ি সভা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সকালে। প্রশ্নোত্তর পর্বের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে ফের অধিবেশন চালু করা হয়েছে। সরকারের আনা জালিয়ানওয়ালাবাগ বিল পাশ সংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, অর্থনীতি সংক্রান্ত যে চারটি বিষয় নিয়ে মোদী সরকারের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছিল, সেগুলি হল—১) দু’হাজার টাকার নোট বেআইনি ভাবে মজুত করা নিয়ে সরকার কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা ২) পিএমসি ব্যাঙ্কের কেলেঙ্কারি ৩) ১৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি ও প্রতারণা এবং ৪) সরকারের কাছে বিভিন্ন ছোট ও মাঝারি শিল্পের পড়ে থাকা কয়েক হাজার কোটি টাকা বকেয়া মেটানো নিয়ে।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এক বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘একজনও বিরোধী সাংসদ ওয়েলে যাননি। তা সত্ত্বেও দুপুর দু’টো পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হল। জিরো আওয়ারে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি উত্থাপন করা থেকে এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো থেকে বিরোধীদের বঞ্চিত করা হল। যখন তাদের হাতে কোনও উত্তর নেই, সরকার পালিয়ে যাচ্ছে।’
বিরোধীরা যে সরকারপক্ষের সঙ্গে বিল নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছেন, সে কথা স্পষ্ট করে দিতে বিকেলে ডেরেক টুইট করে বলেন, ‘সরকারের সংসদীয় কার্য প্রণালী আজ বিকেল থেকে মসৃণ ভাবে চলেছে, কারণ আমরা ১০০ শতাংশ সহযোগিতা করেছি। আশা করি, এই একই মনোভাব সরকারও প্রত্যেক সকালে দেখাবে, যাতে বিরোধীরা প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং জিরো আওয়ারে তাদের বিষয়গুলি তুলতে পারে।’
সংসদ মুলতুবি হয়ে যাওয়ার পরে বিরোধী নেতারা দেখা করেন বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সঙ্গে। সেখানে ছিলেন রেল এবং বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলও। ওই বৈঠকে কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা, গুলাম নবি আজাদ, তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায়, এনসিপি-র শরদ পাওয়ারের মতো নেতারা বলেন, যে হেতু কেউই ওয়েলে নেমে হল্লা করেননি, তাই এই অত্যন্ত জরুরি প্রশ্নগুলি করতে দেওয়া উচিত ছিল। চেয়ারম্যানের কাছে তাঁদের বক্তব্য, এত লম্বা সময় অধিবেশন মুলতুবি রাখলে জিরো আওয়ার বলে আর কিছু থাকে না।