ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজর ছিল রাজ্যের পরিবহনে। এবার সেই পরিবহনের খাতেই বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করতে চলেছে বিশ্বব্যাঙ্ক। বৃহত্তর কলকাতাতে যাতে পরিবহন কাঠামো আরও উন্নত হয় তার জন্য বিশ্বব্যাঙ্ক মোট ৩০০ মিলিয়ন ডলার ভারতীয় মুদ্রায় ২১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে। এই বিষয়ে জানিয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাঙ্কের সঙ্গে এই বিষয়ে একাধিক আলোচনা হয়েছে, চলতি সপ্তাহেই চূড়ান্ত হতে পারে বিষয়টি।
পরিকল্পনার রূপরেখা চূড়ান্ত করতে আগামী সপ্তাহেই বৈঠকে বসবে রাজ্য ও বিশ্ব ব্যাঙ্ক। ২১০০ কোটি টাকার এই মাস্টার প্ল্যানে সড়ক, জলপথ, বিমান, রেল সবকিছুরই পরিকাঠামো উন্নয়ন হবে। মাস্টার প্ল্যানে রয়েছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার কথাও। অর্থমন্ত্রী জানান, বিশ্বব্যাঙ্ক এই মাস্টার প্ল্যান বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করেছে।
অমিত জানালেন, রাজ্য সরকার ব্যাপক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ করছে। ইতিমধ্যেই ফ্লিপকার্ট বা অ্যামাজনের মতো সংস্থায় বহু ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান হয়েছে। আগামী দিনে আরও বিনিয়োগ আসছে। সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ। শুধু কলকাতাই নয়, ডানকুনি, দুর্গাপুর, তাজপুর, মালদা, শিলিগুড়িতে গড়ে উঠছে শিল্প পরিকাঠামো। রিলায়েন্সও রাজ্যে ২ লাখ বর্গফুট জমি নিয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছে। অমিত মিত্র এদিন জানান, রাজ্য সরকার ২০১০–১১ সালের তুলনায় পরিকাঠামো উন্নয়নে ৫ গুণ ব্যয়বরাদ্দ বাড়িয়েছে। তাই গোটা দেশের ডিজিপি বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের কাছাকাছি থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের জিডিপি বৃদ্ধির হার ১২.৫ শতাংশ। গোটা দেশে শীর্ষে বাংলা। প্রতিদিনই রাজ্যে বিনিয়োগ আসছে।
অমিতবাবুর দাবি, এটি বাণিজ্যিক ঋণ নয়। বিশ্ব ব্যাঙ্ক রাজ্যকে তা দেবে অতি সহজ ও সুবিধাজনক শর্তে, কম সুদে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, উন্নয়নের তালিকায় আছে সড়ক পরিবহণ, বন্দর ইত্যাদি। তিনি জানান, এর পাশাপাশি রাজ্যে শিল্প তালুক, লজিস্টিক হাব, এসইজেড-সহ শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়নেও আগ্রহ দেখিয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক।
অর্থমন্ত্রীর মতে, পুঁজি জোগানোয় এই উৎসাহের উদ্দেশ্য একাধিক। যার মধ্যে অন্যতম, রাজ্যে কর্মসংস্থান বাড়ানো ও সহজে ব্যবসার মাপকাঠিতে উন্নতির জন্য পরিকাঠামো তৈরিতে কলকাতাকে সাহায্য করা। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭টি রাজ্য ছাড়াও নেপাল, বাংলাদেশ, মায়ানমার ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় রাজ্যের বড় ভূমিকা থাকাও একটি কারণ।
মাস্টার প্ল্যান গৃহীত হলে বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় রাজ্য সরকারই নোডাল সংস্থা হিসাবে পরিকাঠামো গড়ে তুলবে। অমিত মিত্রের দাবি, এই মাস্টার প্ল্যান কার্যকর হলে রাজ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। সঙ্গে আরও বিনিয়োগ আসবে। শিলিগুড়িকে ছুঁয়ে এশিয়ান হাইওয়ে বা সমুদ্র দিয়ে মায়ানমারে পৌঁছানোর সুবিধাও পেতে চলেছে বাংলা। তাই আরও বেশি করে বাংলাতেই বিনিয়োগ করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি। বিনিয়োগকারীদের সবরকম সহায়তারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।