সেই বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল রাজনৈতিক তরজা। অবশেষে মাসখানেক ধরে চলতে থাকা মহাজট কেটে মহাজোটের পথে মহারাষ্ট্র। রাজ্যের সরকার গঠন নিয়ে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে আজই বৈঠকে বসছেন শরদ পাওয়ার। রবিবার পুনেতে এনসিপি কোর কমিটির বৈঠকের কারণে দিল্লীতে নির্ধারিত বৈঠক পিছিয়ে দেওয়া হয়। তবে গতকাল রাতেই দিল্লী পৌঁছন পাওয়ার। কংগ্রেস সূত্রের খবর, আজ, সোমবার মুখোমুখি বসবেন কংগ্রেস ও এনসিপি সুপ্রিমো। আশা করা হচ্ছে, সরকার গড়ার বিষয়টি অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে এই বৈঠকেই। বৈঠকের ফল কী হয়, তা দেখে সোনিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে।
প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্রে কোনও পক্ষই সরকার গড়তে না পারায় এই মুহূর্তে সে রাজ্যে জারি রয়েছে রাষ্ট্রপতির শাসন। তবে অচলাবস্থা কাটাতে জোট গড়ে সরকার গঠনে তৎপর হয়েছে শিবসেনা, কংগ্রেস এবং এনসিপি। যদিও হিন্দুত্ববাদী শিবসেনার সঙ্গে জোট তৈরি নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। কিন্তু সেই জট মোটামুটি কাটিয়ে উঠেছে কংগ্রেস। তবে, সোনিয়া গান্ধী লক্ষ রাখছেন শিবসেনার এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসার বিষয়টির দিকে। এনডির বৈঠকে না যাওয়া, বিরোধী আসনে বসা— এগুলি শিবসেনার সদর্থক বার্তা। যে কারণে ইতিমধ্যেই আহমেদ প্যাটেল মারফত জোটের ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী।
তবে, শিবসেনার গতিবিধি আরও খানিক যাচাই করে এগোতে চাইছেন সোনিয়া। রয়েছে শিক্ষায় মুসলিমদের ৫ শতাংশ সংরক্ষণের ইস্যুটিও। আর এনসিপি সূত্রের খবর, গতকাল পুনেতে দলের কোর কমিটির সদস্যদের সামনে বিজেপির বিরুদ্ধে ৩ দলের জোটের বাধ্যবাধকতা ব্যাখ্যা করেছেন শরদ পাওয়ার। এর পাশাপাশি, ৩ দলের তৈরি ‘অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচী’র খসড়াও তুলে ধরেছেন তিনি।
অন্যদিকে, রবিবার ছিল শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। মুম্বইয়ের শিবাজি পার্কে প্রয়াত বালাসাহেবকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিরছিলেন ফডনবিশ-সহ বিজেপি নেতারা। এর আগে বালাসাহেবের বক্তৃতার ভিডিও টুইট করে তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। ভাবা হচ্ছিল, শিবসেনার সঙ্গে মিটমাটের চেষ্টাতেই এই বার্তা। তবে তাতে বিশেষ সুবিধে হয়নি। শিবাজি পার্ক থেকে ফেরার সময় ফডনবিশের কনভয়ের সামনে কয়েকজন শিবসৈনিক মারাঠিতে এই বিদ্রুপাত্মক স্লোগান দিতে থাকেন যে, ‘আমিই ফিরব মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে’।
আসলে, মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটের আগে এমনই দাবি করেছিলেন ফডনবিশ। কোনও প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে চলে যান দেবেন্দ্র ও তাঁর সঙ্গীরা। শুধু তাই নয়। ফড়নবিশ যখন শ্রদ্ধা জানাতে যান, তখন বালাসাহেবের স্মারকের কাছে ছিলেন না শিবসেনার কোনও শীর্ষনেতাই। ছিলেন শুধু উদ্ধবের পিএ মিলিন্দ নাভরেকার। তাছাড়া গতকালও শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘সরকার আমরা গড়বই। উদ্ধব বালাসাহেবকে কথা দিয়েছিলেন, শিবসেনারই কেউ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হবেন। খুব শিগগিরই লোকে সেটা দেখতে পাবে।’
স্পষ্টতই বিজেপিকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন সঞ্জয়। সংসদে বিরোধী বেঞ্চেই বসবেন, একথা জানিয়ে শিবসেনা নেতা বলেন, ‘এনডিএ এককভাবে কোনও দলের আধিপত্যের জায়গা নয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দল এই জোটে যোগ দিয়েছে। সবার মতাদর্শ এক নয়। তবে এখন তো এনডিএর অস্তিত্বই সঙ্কটে।’ তাঁর মতে, এনডিএ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বালাসাহেব, বাজপেয়ী, আদবানি ও প্রকাশ সিং বাদল। সঞ্জয়ের প্রশ্ন, ‘এখন এনডিএর আহ্বায়ক কে? এনডিএর রূপকারদের অন্যতম আদবানিজি হয় জোট ছেড়েছেন, নয়তো তিনি নিষ্ক্রিয়।’
উল্লেখ্য, সংসদের অধিবেশনের আগে এনডিএ বৈঠকেও যোগ দেয়নি সেনা। সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি জানিয়েছেন, সংসদের দুই কক্ষেই সেনা সাংসদদের বিরোধী বেঞ্চে জায়গা দেওয়া হয়েছে। কারণ এনডিএ ছেড়ে তারা কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে জোট গড়ছে। বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে শিবসেনার তরফে এই অভিযোগও করা হয়েছে যে, ফ্যাসাদে পড়ে বিজেপি এখন রাজনৈতিক স্বার্থে শিবাজির নাম ব্যবহার করছে। দলের মুখপত্র সামনাতেও এ নিয়ে কড়া সমালোচনা করা হয়েছে বিজেপির।