১৮৩০ সালের মে মাস। গ্রীষ্মের দুপুর যেন আরও তপ্ত হয়ে উঠল গোলদিঘি চত্বরে। সংস্কৃত কলেজে আন্দোলন শুরু করেছেন আয়ুর্বেদের ছাত্ররা। এক সহপাঠীকে শিক্ষক নিযুক্ত করার প্রতিবাদে আন্দোলন। সে কালের ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ এই আন্দোলনের কথা জানাচ্ছে,
‘শ্রীযুত খুদিরাম বিশারদ কর্ম্মে রহিদ হইলে তৎপদে তাঁহার এক ছাত্র শ্রীযুত মধুসূদন গুপ্ত নিযুক্ত হওয়াতে অন্য ছাত্রেরা সমাধ্যায়ির নিকট পাঠ স্বীকার না করাতে কালেজাধ্যক্ষ মহাশয়েরা তাঁহারদিগের প্রার্থনা পূর্ণ না করাতে সকলে কালেজ ত্যাগ করিয়াছেন…।’
আয়ুর্বেদ বিশারদ খুদিরামবাবু ১৮৩০ সালের ৩০শে এপ্রিল শিক্ষকতার কাজে অব্যাহতি নেন এবং মেধাবী ছাত্র মধুসূদন গুপ্তকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করার সুপারিশ করেন। কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তে অটল থাকায় আন্দোলন নতজানু হল। আর যাঁকে শিক্ষকের আসন এগিয়ে দিয়েছিলেন খুদিরাম, সেই মধুসূদন গুপ্ত বছর তিনেকের মধ্যেই হয়ে উঠলেন শারীরসংস্থানবিদ্যা বা অ্যানাটমির খ্যাতিমান শিক্ষক। যে সহপাঠীরা আন্দোলনে নেমেছিলেন, তাঁরাই হলেন তাঁর বন্ধু-ছাত্র।
কুসংস্কার কিংবা গোঁড়ামি অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক ও বৌদ্ধিক উন্নতির পথে অন্তরায় হিসেবে আবির্ভূত হয়। তবে সব যুগেই কিছু ব্যক্তি থাকেন যারা সমাজ সংস্কারের মাধ্যমে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি পালন করেন। এরকমই একজন মানুষ হলেন মধুসূদন গুপ্ত।
১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে হুগলির বৈদ্যবাটীর কবিরাজ বংশে জন্ম মধুসূদনের। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় তাঁর পরিবারের খুব প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল বলে জানা যায়। পিতামহ ছিলেন হুগলির নবাব পরিবারের গৃহ চিকিৎসক। ছেলেবেলায় তিনি অবশ্য একদম পড়াশোনা করতে চাইতেন না। ছেলেবেলায় বড্ড অবাধ্য, একগুঁয়ে ছিলেন, কৈশোরে পালিয়ে যান বাড়ি ছেড়ে। খোঁজ মেলে ১৮২৪ সালে, সংস্কৃত কলেজের ছাত্র তখন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি ভর্তি হন সংস্কৃত কলেজের আয়ুর্বেদ বিভাগে। আয়ুর্বেদে অসাধারণ দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি সংস্কৃত, ন্যায়শাস্ত্র, অলংকার প্রভৃতি বিষয় পাঠে যথেষ্ট বৈদগ্ধ্যের পরিচয় দেন।
সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে তিনি কেবলরাম কবিরাজ নামে এক আয়ুর্বেদিক বৈদ্যের কাছে দেশজ পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয় ও ওষুধ দেওয়ার বিধি-বিধান সম্বন্ধে হাতে কলমে শিক্ষা নেন। সে সময় তিনি বিভিন্ন বৈদ্যের সাথে গ্রামে গ্রামে রোগী দেখতে যেতেন। এ অভিজ্ঞতা তাঁকে চিকিৎসা শাস্ত্র সম্বন্ধে ব্যুৎপত্তি অর্জনে পরবর্তীতে সাহায্য করেছিল।
যখন তিনি সংস্কৃত কলেজে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র পড়তেন তখন থেকেই শারীরতত্ত্ব সম্বন্ধে তাঁর আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তিনি কাঠ বা মোম দিয়ে তৈরি বিভিন্ন অস্থি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতেন। মাঝে মধ্যে নিজ থেকেই বিভিন্ন জীবজন্তুর দেহ ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে তিনি ব্যবচ্ছেদ কার্যে আস্তে আস্তে পটু হয়ে ওঠেন।
১৮২৪ সালে তখন বৌবাজার এলাকায় একটি ভাড়াবাড়িতে শুরু হয়েছে ‘কলিকাতা সংস্কৃত কলেজ’-এর পঠনপাঠন। ১৮২৬ সালে সংস্কৃত কলেজ বর্তমান ভবনে স্থায়ী ঠিকানা পেল। ১৮২৭ সালে চালু হল বৈদ্যক (আয়ুর্বেদ) বিভাগ— ‘মেডিক্যাল ক্লাস ইন দ্য সংস্কৃত কলেজ’— সাত জন ছাত্র নিয়ে, মধুসূদন যার অন্যতম। তাঁদের শিক্ষক ছিলেন খুদিরাম বিশারদ।
স্থানীয়দের চিকিৎসাদানের জন্য ১৮৩২ সালের প্রথমে সংস্কৃত কলেজের পাশে একটি একতলা বাড়িতে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। সংস্কৃত কলেজের শিক্ষকেরা এসে এখানে ক্লাস নিতেন এবং চিকিৎসা বিষয়ে বক্তৃতা দিতেন। মধুসূদন গুপ্ত সেসব বক্তৃতা শুনতেন যথেষ্ট মনোযোগ সহকারে। ফলে বিভিন্ন সহপাঠির চেয়ে তাঁর জ্ঞান ছিল অনেক বেশি প্রখর ও ঋদ্ধ।
১৮৩৫ সালের জানুয়ারি মাসে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ স্থাপিত হলে সংস্কৃত কলেজের বৈদ্যক শ্রেণির বিলুপ্তি ঘটল। কিন্তু মধুসূদন থেকে গেলেন স্বমহিমায়। সাহেব চিকিৎসকরা অ্যানাটমিতে তাঁর গভীর মেধার স্বীকৃতি স্বরূপ ডা. ব্রামলি, ডা. গুডিভ-এর মতো সাহেবের সঙ্গে তাঁকে সহ-শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করলেন। অ্যালোপ্যাথির চিকিৎসক হিসেবে প্রথাগত ডিগ্রি তখন তাঁর ছিল না। শিক্ষকতা করতে করতেই ১৮৪০ সালে পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে এই ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
১৮৩৫ সালের ১৭ই মার্চ মধুসূদন শারীরবিদ্যা ও শল্যবিদ্যা বিভাগের ডেমনস্ট্রেটর হিসেবে যোগ দিলেন মেডিক্যাল কলেজে। এ দেশের চিকিৎসকদের সামনে তখন সবচেয়ে বড় সমস্যা শব ব্যবচ্ছেদ। মানুষের চিকিৎসা করতে হয় তাঁদের, অথচ মানুষের শব ব্যবচ্ছেদ করতে পারেন না তাঁরা। পশুর দেহ ব্যবচ্ছেদ করে কোনও রকমে চিনতে হয় শরীরের অভ্যন্তর। কুসংস্কার-আচ্ছন্ন সমাজ ছুঁতে দেয় না মৃত মানবদেহ। ডাক্তারি-ছাত্ররাও মেনে নেন এ সব। তখনকার দিনে গোঁড়া হিন্দু সমাজে শব ব্যবচ্ছেদ নিষিদ্ধ ছিল। তাই ১৮৩৬ সালের আগে ইউরোপিয়ান এলোপ্যাথি উপায়ে চিকিৎসা করার কোনও চিকিৎসক ছিল না উপমহাদেশে। কারণ এলোপ্যাথিক উপায়ে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করতে হলে শব ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে শারীরতত্ত্ব পড়তে হবে। হিন্দু সমাজে এ ধরনের কাজকে গর্হিত এবং ধর্মহীনতার লক্ষণ বলে বিবেচনা করা হতো। মধুসূদন এর বিরোধিতা করলেন। শিক্ষাদানে অসুবিধাও হচ্ছিল সাহেব শিক্ষকদের। এক দিন ডা. গুডিভ পড়ানোর টেবিলে একটি শবদেহ রেখে দীর্ঘ ক্ষণ ছাত্রদের বোঝালেন শব ব্যবচ্ছেদের গুরুত্ব। তবু জড়তা কাটে না ছাত্রদের। একজন আয়ুর্বেদী শল্য চিকিৎসক হিসেবে মধুসূদন গুপ্ত সর্বপ্রথম এ কাজে এগিয়ে আসেন। ১৮৩৬ সালের ১০ই জানুয়ারি ছুরি হাতে মধুসূদন ব্যবচ্ছেদ করলেন শবদেহ। এ দেশে প্রথম। তৈরি হল ইতিহাস। কিন্তু উচ্চবর্ণের হিন্দুরা খেপে উঠলেন। শিবনাথ শাস্ত্রী লিখেছেন,
‘সেকালের লোকের মুখে শুনিয়াছি এই মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ লইয়া সে সময়ে তুমুল আন্দোলন উপস্থিত হইয়াছিল।’
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে সেই প্রাচীনকালের চিকিৎসাবিজ্ঞানী সুশ্রুতের পর এই প্রথম মধুসূদন গুপ্তের মাধ্যমে শব ব্যবচ্ছেদ সম্পন্ন হয়। মধুসূদন গুপ্ত রক্ষণশীল এবং প্রাচীনপন্থী সকল হিন্দু মোড়লদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এ কাজে অংশ নেন। নিষেধের সকল বাধা পেরিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের চিকিৎসাবিজ্ঞান এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছিল তাঁর হাত ধরেই।
জাতধর্ম না জেনে মৃতদেহ ছোঁয়া এবং কাটাকুটির জন্য জাতিচ্যুত করা হল মধুসূদনকে। কিন্তু দমানো গেল না। নব্যবঙ্গের নেতৃবৃন্দ পাশে দাঁড়ালেন। ওই বছরই ২৮শে অক্টোবর মধুসূদনের অনুপ্রেরণায় চার জন ছাত্র— রাজকৃষ্ণ দে, দ্বারিকানাথ গুপ্ত, উমাচরণ শেঠ এবং নবীনচন্দ্র মিত্র এগিয়ে এলেন শব ব্যবচ্ছেদে। ক্রমে পিছু হঠল সমাজপতিরা। তথ্য বলছে, ১৮৩৭ সালে ৬০টি মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ হয় এখানে।
১৮৩৫ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ খোলার পর সংস্কৃত কলেজের আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রের বিভাগটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি মেডিকেল কলেজের ডেমোনস্ট্রেটরের কাজে নিযুক্ত হন ও সহকারী অধ্যাপকের কাজ করতে থাকেন। কিন্তু একজন সহপাঠীর কাছ থেকে পাঠ নিতে শিক্ষার্থীরা আপত্তি করে। তাই পাশ করা ডাক্তারের ডিগ্রি নিতে হয় তাঁকে। এজন্য যে পরীক্ষা তাঁকে দিতে হয় তাতে তিনি সসম্মানে উত্তীর্ণও হন। এরপর ১৮৩৬ সালের ১০ই জানুয়ারি সৃষ্টি হয় সেই ইতিহাসের। যে ঘটনার মাধ্যমে এক নতুন যুগ আসে ভারতীয় উপমহাদেশের চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাসে। সে দিনের রোমাঞ্চকর স্মৃতিচারণা-
“… মেডিকেল কলেজের সব ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, পাছে এই বিধর্মী কাজ বন্ধ করার জন্য প্রাচীনপন্থীরা কলেজে আক্রমণ চালায়! মেডিকেল কলেজের মর্গে তিল ধারণের ঠাই নেই, সেখানে উপস্থিত মেডিকেল কলেজের সব ইংরেজ অধ্যাপক, ছাত্রেরা ভিড় করে দাঁড়িয়েছে ঘরের বাইরের দরজায়, জানালার ফাঁকে ফাঁকে চোখ রেখে অপেক্ষা করছে অনেকে। সারা ক্যাম্পাস ফাঁকা। নির্দিষ্ট সময়ে ডাক্তার গুডিভের সঙ্গে দৃপ্তপদে ঘরে ঢুকলেন একদা সংস্কৃত কলেজের আয়ুর্বেদ বিভাগের ছাত্র পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত। বর্তমানে পণ্ডিত গুপ্ত একই সঙ্গে মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ও ছাত্র। ডাক্তারী শাস্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ সার্জারি, যা ভারতে এখনও করানো সম্ভব হয়নি, শব ব্যবচ্ছেদ নিয়ে বর্ণহিন্দুদের গোঁড়া কুসংস্কারের জন্য, সেই কাজটিই আজ করতে এসেছেন পণ্ডিত মধুসূদন, হাতে তাঁর একটি শব ব্যবচ্ছেদ করার তীক্ষ্ণ ছুরি। তাঁর সঙ্গে যোগ দেবার জন্য দলে নাম ছিল উমাচরণ শেঠ, রাজকৃষ্ণ দে, দ্বারকানাথ গুপ্ত ও নবীন চন্দ্র মিত্রের। কিন্তু তাঁরা দরজার বাইরেই ভিড় করে দাঁড়িয়ে রইলেন।
ঘরে ঢুকে মধুসূদন বিনাদ্বিধায় এগিয়ে গেলেন শবের দিকে। শবদেহের নির্ভুল জায়গায় ছুরিটি প্রবেশ করালেন তিনি। মুখে কোনও আড়ষ্টতা বা অস্থিরতার চিহ্ন নেই। খুব নিখুঁতভাবে আর সুন্দরভাবে বিনাদ্বিধায় সম্পন্ন করলেন ব্যবচ্ছেদের কাজ। ভারতবর্ষের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে বিজ্ঞানী শুশ্রূতের পরে এই প্রথম হলো শবব্যবচ্ছেদ। দীর্ঘকালের কুসংস্কারের আর গোঁড়া পন্ডিতদের বিধি-নিষেধের বেড়া ভেঙে দিলেন তিনি এই একটি কাজের মাধ্যমে। নিষেধের জগদ্দল ভার সরিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ভারত এক নতুন যুগে প্রবেশ করল।”
১৮৪৭ এ চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটের সম্পাদকে একটি চিঠিতে ডাক্তার গুডিভ এ সময়টাকে স্মরণ করে লিখেছিলেন-
“The most important blow which has yet been struck at the root of native prejudices and superstition, was accomplished by the establishment of the Medical College of Calcutta, and the introduction of practical anatomy as a part of the professional education of Brahmins and Rajpoots, who may now be seen dissecting with an avidity and industry which was little anticipated by those who know their strong religious prejudices upon this point twenty years since.”
শুধু কি শব ব্যবচ্ছেদ? ধীরে ধীরে তাঁর জ্ঞানের প্রতি তৃষ্ণাও বৃদ্ধি পেয়েছিল। বুদ্ধি ও চারিত্রিক দৃঢ়তায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন স্থির ও সাবলীল। কলেজে অনেক ইংরেজি ভাষায় রচিত চিকিৎসা শাস্ত্রীয় বই ছিল। ইংরেজি ভালো মতো রপ্ত করে সেগুলো পড়ে ফেলেন। মধুসূদন ১৮৪৯ সালে ‘লন্ডন ফার্মাকোপিয়া’ এবং ‘অ্যানাটমিস্ট’স ভাদি মেকাম’-এর বাংলা অনুবাদ করে ১,০০০ টাকা পুরস্কার অর্জন করেন। ১৮৫২ সালে মেডিক্যাল কলেজে বাংলা শ্রেণি খোলা হলে তার সুপারিনটেন্ডেন্ট হন তিনি। ১৮৫৩ সালে প্রকাশিত হয় ‘অ্যানাটমি’ নামে তাঁর অমূল্য গ্রন্থ। ‘সুশ্রুত’-ও সম্পাদনা করেন বলে জানা যায়।
ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান থেকে আহত ভারতীয় সৈন্যদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য ১৮৩৯ সালে কলকাতা মেডিকেলের সাথে একটি হিন্দুস্থানী শ্রেণী খোলা হয়। ১৮৪২-৪৩ এর দিকে এই বিভাগটি যখন ঢেলে সাজানো হয় তখন এর অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হন মধুসূদন গুপ্ত। এই বিভাগ পরিচালনা এবং বিশেষত তৎকালীন প্রাচীনপন্থী হিন্দুদের অস্ত্রোপচারের জন্যে রাজী করানোর ক্ষেত্রে তিনি অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৮৪৫ সালেই তিনি লন্ডন ফার্মাকোপিয়ার অনুবাদ শেষ করেন, যা ছাপা হয় ১৮৪৯ সালে। বইটির পুরো নাম দেওয়া হয় ‘লণ্ডন ফার্ম্মাকোপিয়া’ অর্থাৎ ‘ইংলন্ডীয় ঔষধ কল্পাবলী’।
বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা বাংলা ভাষায় চিকিৎসাশাস্ত্রীয় বই দেখতে পাই- এর শুরুটা কিন্তু হয়েছিল তাঁর হাত দিয়ে। ১৮৫২ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজের একটি অনুষঙ্গ রূপে বাংলা বিভাগ খোলা হয়। এই বিভাগে চিকিৎসা বিষয়ক যাবতীয় বিষয় বাংলার মাধ্যমেই শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। এই বিভাগে অধ্যক্ষ হিসেবে মধুসূদন যথেষ্ট প্রজ্ঞার পরিচয় দেন। তখন বিভিন্ন জেলা শহর ও গ্রামগুলোতে চিকিৎসকের প্রয়োজন ছিল প্রচুর আর চিকিৎসা সংক্রান্ত সবকিছু ইংরেজি ভাষায় হওয়ায় সকল ছাত্র ভর্তি হয়ে পুরোপুরি পড়া শেষ করতে পারতো না। তার উপর ইংরেজি ভাষা শিক্ষা ছিল এখনকার তুলনায় অপ্রতুল। এজন্য মধুসূদন তাঁর সহপাঠীদের নিয়ে বিভিন্ন ইংরেজি বই অনুবাদের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৮৫৩ সালে মধুসূদন প্রকাশ করলেন ‘এনাটমি’। আজ আমরা এনাটমির বাংলা প্রতিশব্দ ব্যবহার করি ‘শারীরবিদ্যা’। এই শারীরবিদ্যা শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন মধুসূদন গুপ্ত।
তিনি শুধু একজন দক্ষ শল্য চিকিৎসকই ছিলেন না, বরং ছিলেন একজন সমাজ সচেতন ব্যক্তিত্বও। দেশের জনস্বাস্থ্য, পানীয় জলের স্বচ্ছতা ও জীবাণুমুক্তকরণ, পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা ও দূষণমুক্ত করা ইত্যাদি নানা জনহিতকর কাজে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ডায়াবেটিকের রোগী ছিলেন। কিন্তু বারণ না শুনে সংক্রমণের ঝুকি নিয়েও তিনি অনবরত শবব্যবচ্ছেদ করতেন এবং অন্যদের সাহস যোগাতেন। ফলে জীবাণুর সংক্রমণে ডায়াবেটিক সেপ্টিমিয়াতে আক্রান্ত হয়ে এই শল্যচিকিৎসকের মৃত্যু হয়। ১৮৫৬ সালের ১৫ই নভেম্বর মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সেই প্রয়াত হন মধুসূদন গুপ্ত।
কলকাতার মেডিকেল কলেজের শোকবার্তায় তৎকালীন অধ্যক্ষ উইলসন লেখেন –
“To him a debt of gratitude is due by his countrymen. He was the pioneer who cleared a space in the jungle of prejudice, into which others have successfully pressed, and it is hoped that his countrymen appreciating his example will erect some monument to perpetuate the memory of the victory gained by Muddoosoodun Gooptu over public prejudice, and from which so many of his countrymen now reap the advantage.”
তবে প্রথম ভারতীয় শব ব্যবচ্ছেদকারী মধুসূদন গুপ্তই কিনা তা নিয়ে দুই গবেষকের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয় সাম্প্রতিক অতীতে। গবেষক জয়ন্ত ভট্টাচার্য এবং ডা. শঙ্করকুমার নাথের মধ্যে বিতর্কের উল্লেখ না করলে এই লেখাটি অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে।
শ্রী জয়ন্ত ভট্টাচার্য (রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর) ৯ই মে ২০১৮ সালে, আনন্দবাজার পত্রিকায় সম্পাদকীয় কলমে এক পত্রে জানান –
“দীপঙ্কর ভট্টাচার্যর লেখা ‘ভারতে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ তাঁর হাতে’ (রবিবাসরীয়, ২৯-৪) প্রতিবেদনটিতে কিছু ঐতিহাসিক তথ্যের প্রমাদ ঘটেছে বলে মনে করছি। প্রথমত, প্রতিবেদন অনুযায়ী মেডিক্যাল কলেজে শব ব্যবচ্ছেদ দু’বার হয়েছিল— প্রথম বার ১০ই জানুয়ারি, ১৮৩৬, ডেমনস্ট্রেশন হিসেবে; দ্বিতীয় বার, আনুষ্ঠানিক ভাবে ২৮শে অক্টোবর ১৮৩৬। এ রকম কোনও তথ্য ঐতিহাসিক ভাবে পাওয়া যায় না। একমাত্র ডা. শঙ্করকুমার নাথের লেখা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের গোড়ার কথা ও পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত (২০১৪) গ্রন্থটি ছাড়া আর কোথাও কখনও এ তথ্য উল্লেখিত হয়নি, এবং সে বইয়ে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই ঘটনার উপস্থাপনা করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মধুসূদন গুপ্তই প্রথম শব ব্যবচ্ছেদকারী— এ ধারণাটি স্বাভাবিক ভাবে ধরে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমার বিকল্প গবেষণাপত্র ‘দ্য ফার্স্ট ডিসেকশন কনট্রোভার্সিজ’ ২০১১-র ১০ই নভেম্বর ‘কারেন্ট সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
মেডিক্যাল কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল ব্রামলি মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বছরের রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন। তাঁর অকালমৃত্যুর জন্য (জানুয়ারি ১৮৩৭) নিজে রিপোর্ট পেশ করতে পারেননি। কিন্তু তাঁর সহকর্মী ডা. গুডিভ এবং ডা. ও’শনেসি এ রিপোর্ট দেখে থাকবেন। ফলে রিপোর্টের গন্ডগোল থাকলে তাঁরা শুধরে দিতেন বলে ধরে নেওয়া যায়। ব্রামলি জানাচ্ছেন: ৩১শে মার্চ ১৮৩৬ পর্যন্ত অস্থি, মস্তিষ্ক, নার্ভ, লিগামেন্ট, রক্তনালীর গঠন ইত্যাদি ভাল করে শেখানো হয়। ইউরোপে ব্যবহৃত বিভিন্ন অ্যানাটমিক্যাল প্লেট এবং মোমের তৈরি মডেল দিয়ে শিক্ষা চলে। ছাত্ররা ‘স্টারনোক্লিডোম্যাসটয়ডিয়াস’-এর মতো শক্ত শব্দ আয়ত্ত করতে শুরু করে। দ্বিতীয় পর্যায়ের অ্যানাটমি ক্লাস অক্টোবরে শুরু হয়। ব্রামলি জানাচ্ছেন, “on the 28th October … four of the most intelligent and respectable pupils, at their own solicitation, undertook the dissection of the human subject.” এখানে at their own solicitation শব্দবন্ধটি লক্ষণীয়। কোনও গাইড বা শিক্ষকের, যেমন মধুসূদনের পথপ্রদর্শনের কোনও রকম উল্লেখ নেই। ব্রামলি আরও বলছেন যে, সামাজিক বিবমিষার ভয়ে তাঁর রিপোর্টে ছাত্রদের নাম প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকছেন। এ বিষয়ে বিস্তৃত যুক্তিনির্ভর আলোচনার জন্য মহেন্দ্রলাল সরকারের (১৮৬৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমডি) ‘ক্যালকাটা জার্নাল অব মেডিসিন’-এর জুন, ১৮৭৩ সংখ্যায় ‘দ্য ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ, তৃতীয় অংশ’ দ্রষ্টব্য।
ডেভিড আর্নল্ডের মতো গবেষকও জানান যে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদের পরে ফোর্ট উইলিয়াম থেকে ৫০টি তোপধ্বনি করা হয়েছিল। তাঁর সূত্র ব্রহ্মানন্দ গুপ্তের প্রবন্ধ। কিন্তু ব্রহ্মানন্দ কোনও তথ্যসূত্র উল্লেখ করেননি। বিপরীতে, প্রমথনাথ বসু তাঁর আ হিস্ট্রি অব হিন্দু সিভিলাইজেশন ডিউরিং ব্রিটিশ রুল (২য় খণ্ড, ১৮৯৪)-এ জানান যে কলেজের গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল “to prevent forcible interruption of that awful act” (পৃ ৩২)। ১৮৯৯ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধান হ্যাভেলক চার্লস তীব্র ভাবে জানান, “yet the Pundit is remembered; his predecessors (ছাত্ররা) are forgotten. Vixere fortes ante Agamemnona.” মধুসূদন গুপ্ত নিজে ‘জেনারেল কমিটি অন ফিভার হসপিটাল অ্যান্ড মিউনিসিপাল ইম্প্রুভমেন্টস’-এর দ্বিতীয় সাব-কমিটির সামনে ২৭শে ফেব্রুয়ারি, ১৮৩৭-এ সাক্ষ্য দেওয়ার সময় নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন যে তিনি মেডিক্যাল কলেজের এক জন পণ্ডিত এবং ডা. গুডিভ এবং ডা. ও’শনেশি-র লেকচার বাংলায় ব্যাখ্যা করে সাহায্য করে থাকেন ইত্যাদি। কিন্তু এটা আশ্চর্যের, এক বছর আগে ঘটে যাওয়া সেই ঐতিহাসিক ঘটনার কোনও উল্লেখ তাঁর বক্তব্যে নেই। কারণ, এ কাহিনির জন্ম হয়েছিল আরও পরে, ১৮৪৮-১৮৫০-এর সময় বেথুনের অলঙ্কারবহুল, অনৈতিহাসিক বিবরণের মধ্য দিয়ে। মধুসূদনের প্রথম জীবনীকার যোগেশচন্দ্র বাগল লিখছেন (হয়তো স্বজাতিপ্রেম থেকে): “মধুসূদন বাদে বেথুনের অপেক্ষা ব্রামলির অন্য সব কথাই অধিকতর প্রামাণ্য বলিয়া মনে করি। একটি কথা উঠিতে পারে, দুই তারিখে দুইটি কার্য সম্পন্ন হইয়াছে কিনা। কিন্তু এরূপ ধারণা করিবার কারণ দেখি না। দুই দিনে দুইটি কার্য সম্পাদিত হইলে— এবং ইহা যুগান্তকারী বলিয়া ব্রামলি ও বেথুন দুইজনেই উল্লেখ করিয়াছেন— ব্রামলি প্রদত্ত বিবরণে নিশ্চয়ই উহার উল্লেখ থাকিত।’’ (সাহিত্যসাধক চরিতমালা, ৯৬)।”
এই পত্রের উত্তরে ডা. শঙ্করকুমার নাথ (কলকাতা-১৪), ২রা জুন ২০১৮ সালে সম্পাদকীয় কলমে পত্র লিখে জানান –
“জয়ন্ত ভট্টাচার্যের (‘প্রথম ব্যবচ্ছেদ’, সম্পাদক সমীপেষু, ৯-৫) কথা অনুযায়ী আধুনিক ভারতে প্রথম শবব্যবচ্ছেদকারী মধুসূদন গুপ্ত নন, মেডিক্যাল কলেজের প্রথম চার ছাত্রের এক জন। এই নিয়ে যে বিতর্ক, তা আসলে তুলেছিলেন ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার সম্পাদিত ‘দ্য ক্যালকাটা জার্নাল অব মেডিসিন’-এর নিবন্ধকার ১৮৭৩ সালে। জয়ন্তবাবু সেই পুরনো বিতর্কটিকেই প্রায় হুবহু তুলে ধরেছেন চিঠিতে। কবেই সেই বিতর্ক শেষ হয়ে গিয়েছে; তবুও এই বিষয়ের উপর আমার লেখা পুস্তকের নাম উল্লেখ করেছেন বলে আমাকে কিছু লিখতে হচ্ছে।
১৮৪৯ সালের ১৫ই জুন। মেডিক্যাল কলেজে তৎকালীন কাউন্সিল অব এডুকেশনের সভাপতি ড্রিংকওয়াটার বেথুন একটি অসাধারণ বক্তৃতা দেন, যা সবিস্তার নথিভুক্ত রয়েছে ১৮৫১ সালের জেনারেল রিপোর্ট অন পাবলিক ইনস্ট্রাকশনের ১২২ থেকে ১২৬ পৃষ্ঠায়। তাতেই তিনি প্রথম শবব্যবচ্ছেদকারী হিসেবে মধুসূদন গুপ্তর নাম সম্মানসহকারে উল্লেখ করেন এবং বলেন ব্যবচ্ছেদের দিনটি ছিল ১০ই জানুয়ারি ১৮৩৬।
তিনি বলেন, আগের বছর (১৮৪৮) মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক ডা. হেনরি হ্যারি গুডিভের (যিনি ওই ১০ই জানুয়ারি প্রথম শবব্যবচ্ছেদের সময় উপস্থিত ছিলেন) দেওয়া এক বক্তৃতা থেকে এই তথ্যগুলি তিনি পেয়েছেন।
বেথুন সাহেবের দেওয়া এই বক্তব্যকে প্রথম শবব্যবচ্ছেদকারী হিসাবে মধুসূদন-বিরোধী গবেষকরা মানতে চাইছেন না। কারণ অজানা। মনে রাখতে হবে, বেথুন সাহেবের এই স্মরণীয় বক্তৃতাটি অবশ্যই চিকিৎসাশিক্ষা-বিজ্ঞান-ইতিহাসের একটি জোরালো উপকরণ।
সে দিন মেডিক্যাল কলেজের অনুষ্ঠানে যখন বেথুন সাহেব মধুসূদনকে প্রথম শবব্যবচ্ছেদকারী আখ্যা দিয়ে মাদাম বেলনস অঙ্কিত মধুসূদন গুপ্তের (সঙ্গের ছবিতে) একটি তৈলচিত্র কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দিয়ে বলছেন, দেখুন আপনারা, ছবিটির ফ্রেমে আমি লিখে দিয়েছি ‘The first Hindu Anatomist of British India’, এবং ‘The 10th day of January’ ইত্যাদি, তখন কিন্তু উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারা কেউই প্রতিবাদ করেননি।
আর ছাত্ররা যদি প্রথম শবব্যবচ্ছেদ করতেন, তা হলে খামোকা মধুসূদনের ওই প্রমাণ সাইজের তৈলচিত্রই বা অঙ্কন করা হল কেন? পরিবর্তে চার ছাত্রের যিনি প্রথম শবব্যবচ্ছেদ করেছিলেন (এ ক্ষেত্রে ছাত্র রাজকৃষ্ণ দে), তাঁরই তৈলচিত্র অঙ্কিত হতে পারত।
তাই বেথুন সাহেবকে উপেক্ষা করার অর্থ হল, যিনি প্রথম শবব্যবচ্ছেদের দিন উপস্থিত থেকে মধুসূদনকে ব্যবচ্ছেদে উৎসাহিত করেছিলেন, সেই ডা. গুডিভকেই অস্বীকার করা। চিঠিতে ১৮৪৮ সালের ডা. গুডিভের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ১৮৪৯ সালে বেথুন সাহেবের বক্তব্যগুলিকে অনৈতিহাসিক বলা হয়েছে। বেশ, এ বার দেখুন, এরও তিন বছর আগে, ১৮৪৬ সালে মেডিক্যাল কলেজের তৎকালীন সচিব/অধ্যক্ষ ডা. ফ্রেডরিক জন মোয়াট কী বলেছিলেন মধুসূদন গুপ্ত সম্পর্কে (১৮৪৬ সালে দ্য ক্যালকাটা রিভিউ পত্রিকার পঞ্চম খণ্ডে প্রকাশিত): “…and the first Hindu of high caste who ever wielded the scalpel, and thus at one stroke severed the deepest rooted prejudices of his race and religion, is at the present moment a distinguished ornament of the Institution, with the records of which his name must for ever be associated, as the forerunner on the career of science and honour. I allude to pandit Madusuden Gupta, the native demonstrator of Anatomy in the Medical College…”
একেবারে পরিষ্কার, ডা. মোয়াট মধুসূদন গুপ্তকেই প্রথম হিন্দু শবব্যবচ্ছেদকারী বলেছেন এবং এও বলেছেন তিনিই এ বিষয়ে পথিকৃৎ। অন্য দিকে, মেডিক্যাল কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ডা. ব্রামলি সাহেব ১৮৩৬ সালের রিপোর্টে লিখেছেন, ২৮শে অক্টোবর, ১৮৩৬ চার জন ছাত্র শবব্যবচ্ছেদ করলেন। এই ঘটনাকে তিনি মেডিক্যাল কলেজের ইতিহাসে এক ‘eventful era’ বলেছেন, কিন্তু এক বারের জন্যও বলেননি, এটিই প্রথম শবব্যবচ্ছেদের ঘটনা।
আসলে দু’দিনই শবব্যবচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছিল। প্রথম দিন শুধুমাত্র মধুসূদন গুপ্ত শবব্যবচ্ছেদ করেছিলেন, ছাত্ররা দেখেছিলেন (১০ই জানুয়ারি, ১৮৩৬)। আর পরে ২৮শে অক্টোবর, ১৮৩৬ তারিখে চার ছাত্র শবব্যবচ্ছেদ করেছিলেন: রাজকৃষ্ণ দে, উমাচরণ শেঠ, দ্বারকানাথ গুপ্ত এবং নবীনচন্দ্র মিত্র। এটাই তো স্বাভাবিক, আগে শিক্ষকমশাই (মধুসূদন গুপ্ত) শবব্যবচ্ছেদ করে ছাত্রদের ভয়ভীতি ভাঙাবেন, উৎসাহ দেবেন, তার পর ছাত্ররা এমন শবব্যবচ্ছেদ করবার সাহস পাবেন। ঐতিহাসিক ভাবে তাই ছাত্রদের মধ্যে রাজকৃষ্ণ দে-ই আধুনিক ভারতে প্রথম শবব্যবচ্ছেদকারী ছাত্র।
আমার লেখা এই বিষয়ে পুস্তকটির উল্লেখ করে জয়ন্তবাবু লিখেছেন, প্রথম শবব্যবচ্ছেদকারী হিসেবে মধুসূদনের পক্ষে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ এই বইয়ে নেই। যা লিখলাম এই চিঠিতে, সবই আমার বইয়ে রয়েছে। আরও প্রমাণ বইতে আছে, যা এই স্বল্পপরিসর চিঠিতে দেওয়া সম্ভব নয় এবং সবগুলিই সুনির্দিষ্ট, অকাট্য এবং ইতিহাসসিদ্ধ।”
(তথ্যসূত্র:
১- কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের গোড়ার কথা ও পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত – ডা. শংকরকুমার নাথ।
২- বাংলা অনুবাদ সাহিত্য ১৮০১-১৮৬০ শ্রী যোগেশচন্দ্র বাগল – নির্বাচিত এক্ষণ (প্রবন্ধ সংকলন প্রথম খণ্ড) সম্পাদনাঃ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অশ্রুকুমার সিকদার।
৩- আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৯শে এপ্রিল ২০১৮ সাল।
৪- আনন্দবাজার পত্রিকা, ৯ই মে ২০১৮ সাল।
৫- আনন্দবাজার পত্রিকা, ২রা জুন ২০১৮ সাল।
৬- উইকিপিডিয়া।)
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত