তিনি রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি। এমনকি আসন্ন বিধানসভা উপনির্বাচনে নদিয়ার করিমপুরের বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন। আর তাঁর বিরুদ্ধেই কিনা উঠল অমানবিক ব্যবহার এবং চরম হেনস্থার অভিযোগ। তাও নিজের দাদা-বৌদিকেই। জানা গেছে, বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের বিরুদ্ধে এমনই তুলে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন তার নিজের বৃদ্ধ দাদা ও বৌদি।
ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়ির পাম্প থেকে তাঁদের পরিবারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে, চরম জলকষ্টে রাখার অভিযোগ তুললেন জয়প্রকাশ মজুমদারের দাদা জ্যোতিপ্রকাশ মজুমদার। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভাই জয়প্রকাশ তাঁদের হেনস্থা করছেন বলে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। এই মর্মে বৃহস্পতিবার বিধান নগর (উত্তর) থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জ্যোতিপ্রকাশ মজুমদার। হেভিওয়েট বিজেপি নেতা তথা ভাই জয়প্রকাশ মজুমদারের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে এখন বিচার চাইতে হচ্ছে প্রাক্তন অধ্যাপক জ্যোতিপ্রকাশ বাবুকে।
জয়প্রকাশের দাদা জ্যোতিপ্রকাশ মজুমদার স্ত্রীকে নিয়ে সল্টলেকের ৩১নং নম্বর ওয়ার্ডে থাকেন নিজস্ব বাড়িতেই। কয়েক দশক পূর্বে নিজের টাকাতেই ওই বাড়ি করেছিলেন বলে দাবি জ্যোতিপ্রকাশ বাবুর। এদিন তিনি জানান, তার কয়েক বছর পর থেকে সল্টলেকের বাড়িতে এসে সপরিবার থাকতে শুরু করেন ভাই জয়প্রকাশ মজুমদার। দাদা জ্যোতিপ্রকাশবাবুর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই নানাভাবে হেভিওয়েট ভাইয়ের একাধিক হেনস্থার শিকার হয়েছেন তিনি এবং তাঁর স্ত্রী রত্না মজুমদার। পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে প্রথমদিকে মানসিক অত্যাচার সহ্য করে নিয়ে তিনি মুখ খোলেননি বলে জানান তিনি। কিন্তু ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গে সম্প্রতি তাঁর জলের পাম্পের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায়।
বিধাননগর (উত্তর) থানায় লিখিত অভিযোগে জ্যোতিপ্রকাশ বাবু জানিয়েছেন, “সল্টলেকের ওই দোতলা বাড়ির উপর তলায় জ্যোতিপ্রকাশ বাবু থাকেন এবং নিচের তলায় সপরিবারে থাকেন ভাই জয়প্রকাশ মজুমদার। বাড়ির নিচে একটি রিজার্ভার এবং ছাদে একটি জলের ট্যাঙ্ক থেকেই তাঁদের দুই পরিবারের ঘরেই জলের সংযোগ রয়েছে। দুই পরিবারেরই সুবিধার্থে পাম্পটি চালানোর জন্য দুটি সুইচ তৈরি করা হয়। যার একটি রয়েছে দোতলায় জ্যোতিপ্রকাশ বাবুর ঘরের কাছে, অপরটি আছে একতলায় সিঁড়ির কাছে যেটি ব্যবহার করতেন জয়প্রকাশ বাবুর পরিবার।”
অভিযোগকারীর দাবি, দীর্ঘ পাঁচ মাস বাইরে থাকার পর সম্প্রতি বাড়ি ফিরে তিনি দেখেন, সুইচ দিলে পাম্পটি কাজ করছে না। এরপরেই সুইচটি পরীক্ষা করতে গিয়ে তিনি দেখেন, পাম্পের থেকে দোতলায় থাকা সুইচটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। অথচ বহাল তবিয়তে কাজ করছে একতলায় জয়প্রকাশ মজুমদারের নিয়ন্ত্রণে থাকা পাম্পের সুইচটি। তাঁর আরও অভিযোগ, দীর্ঘ দিন বাড়িতে না থাকার সময়, জয়প্রকাশবাবু বিনা অনুমতিতে পাম্পটি বাক্সের মধ্যে কভার করে তাতে তালা মেরে দিয়েছেন। পাশাপাশি একতলায় সিঁড়ির কাছে থাকা সুইচটি নিয়ে গিয়েছেন তাঁর নিজস্ব প্রিমিসেসের ভেতরে। যার ফলস্বরূপ এখন দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজন হলেও পাম্প চালাতে পারছেন না দাদার পরিবার। ফলে অত্যাচারে দিনের পর দিন জল কষ্টে রয়েছেন বলে অভিযোগ জ্যোতিপ্রকাশ বাবুর।
রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের বিরুদ্ধে এদিন একাধিক ক্ষোভ উগরে দেন দাদা জ্যোতিপ্রকাশ মজুমদার। তিনি জানান, এই অভিযোগ হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এই ধরনের বেআইনি ও চরম অমানবিক মানসিক নির্যাতন পূর্বেও অসংখ্যবার তাঁর পরিবারের উপর করা হয়েছে বলে দাবি জ্যোতিপ্রকাশ বাবুর। সব ক্ষেত্রেই সরাসরি অভিযোগের তীর ভাই জয়প্রকাশ মজুমদারের বিরুদ্ধে।
মহানগরকে ফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জ্যোতিপ্রকাশ বাবুর আরও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, সল্টলেকের এই দোতলা বাড়িটি তিনি নিজস্ব খরচে যখন তৈরি করেছিলেন, তখন বাড়িটির মালিকানা ছিল তার এবং তার মায়ের নামে। অথচ কয়েক বছর আগে ট্যাক্সের নথিপত্র ঘাটতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, তাঁদের মায়ের নামের বদলে মালিকানায় আচমকা নাম ঢুকে গিয়েছে জয়প্রকাশ মজুমদারের। নিজস্ব রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে, জালিয়াতির মাধ্যমে ভাই বাড়ির মালিকানায় নিজের নাম ঢুকিয়েছেন বলেও অভিযোগ জ্যোতিপ্রকাশ বাবুর। বিজেপি নেতার দাদা এদিন জানান, দিনের পর দিন এভাবে জলকষ্ট থাকায় চরম অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন তিনি এবং তার স্ত্রী। স্নান বা দৈনন্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজকর্মে জলের প্রয়োজন হলে ইচ্ছে মতো পাম্প চালাতে পারছেন না তাঁরা। ফলে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এই বৃদ্ধ দম্পতিকে।