কাশ্মীরের আপেল বাগানে এ বার যেন সত্যিই রক্তের দাগ। ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ হওয়ার পরে ১০০ দিন কেটে গিয়েছে। প্রথমে ছিল কার্ফু। কার্ফু শিথিল হতে জঙ্গিরা পোস্টার সেঁটে হুঁশিয়ারি দিল, এ বছর আপেল ব্যবসা বন্ধ থাকবে। এ দিকে কাশ্মীরের ‘অ্যাপল সিটি’ সোপিয়ানের গাছে গাছে লাল-সবুজ-সোনালি রঙের আপেল আসতে শুরু করেছে। আমির হুসেনের কপালে তখন থেকেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। এ বার আপেল বিক্রি হবে তো? কিন্তু সোপিয়ানের আপেলে যে রক্তের ছিটে লাগবে, তা ভাবেননি খোদ আমিরও।
আপেল চাষি মহম্মদ আশরফ দারের হত্যা দিয়ে শুরু। এর পর শোপিয়ানেই রাজস্থানের ট্রাকচালক মহম্মদ শরিফ খান জঙ্গিদের হাতে খুন হন। তার পর ফের শোপিয়ানেই আপেল ব্যবসায়ীর উপরে হামলায় মারা যান পাঞ্জাবের চরণজিৎ সিংহ। জঙ্গিরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ১৮ জন ভিন্ রাজ্যের শ্রমিককেও বন্দুকের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কাশ্মীর ছেড়ে পালানোর হুঁশিয়ারি দিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কুলগামে মুর্শিদাবাদ থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যাওয়া পাঁচ বাঙালি শ্রমিক রক্ষা পাননি। ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকরাই কাশ্মীরের বাগানে আপেল পাড়ার কাজ করেন। প্রাণের ভয়ে তাঁরা কাশ্মীর ছাড়তে শুরু করায় আপেল পাড়ারই লোক নেই। তাই বউ-ছেলেকে নিয়ে আমির নিজেই হাত লাগিয়েছেন।
মান্ডির সামনের দোকানে কাশ্মীরিদের প্রিয় নুন-চায়ে রুটি ভেজাচ্ছিলেন নাজির আহমেদ। আপেলের ব্যবসা করেন। গত বছরও কলকাতায় ‘এ-গ্রেড’ আপেল পাঠিয়েছেন। তাঁর আফসোস, ‘‘কাশ্মীরে জঙ্গি আন্দোলন তো চলছে নব্বইয়ের দশক থেকে। ২০০৮, ২০১০-এও অশান্তি হয়েছে। ২০১৬-য় বুরহান ওয়ানি মারা যাওয়ার পরেও সব বন্ধ ছিল। কিন্তু তখনও আপেল ব্যবসায় ধাক্কা লাগেনি।’’
তবে এবার শুধু আপেল নয়। ৩৭০ রদের ধাক্কা লেগেছে পর্যটন থেকে হস্তশিল্প, ফলের রস থেকে তথ্যপ্রযুক্তি— কাশ্মীরের অর্থনীতির সব ক্ষেত্রেই। কাশ্মীর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের সভাপতি শেখ আশিকের হিসেবে, গত ১০০ দিনে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। যার ফলে ভূস্বর্গে সৃষ্টি হয়েছে নৈরাজ্য।