রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সময় ছিল সরকার গঠনের। এই সময়ের মধ্যেই সরকার গঠনের দাবি জানাতে হত এনসিপিকে। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক বাকি থাকতেই মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়ে গেল। সব পক্ষকে সুযোগ না দিয়ে সাত তাড়াতাড়ি এই সিদ্ধান্তের জন্য এ বার কেন্দ্রীয় সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাল বিরোধীরা। তাঁদের মতে, কোনও নিয়ম-নীতি না মেনে সরাসরি ভারতীয় গণতন্ত্রের উপর আঘাত হেনেছে মোদী সরকার।
এ দিন রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার পরই মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস এবং এনসিপি-র মধ্যে বৈঠক হয়। তার পর আহমেদ পটেল, শরদ পাওয়ার এবং মল্লিকার্জুন খারগে-সহ দুই দলের নেতারা যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করছি। গত পাঁচ বছরে এই সরকার গণতান্ত্রিক শাসনব্যস্থার কোনও নিয়ম-কানুন মানেনি। এ ভাবে রাষ্ট্রপতি শাসনের জারি করে গণতন্ত্রকে পরিহাস করা হয়েছে। বিজেপি, শিবসেনা, এনসিপির পর কংগ্রেসকে সরকার গঠনের জন্য ডাকাই হয়নি।’’
সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার পরই এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন কংগ্রেস নেতা তথা বর্ষীয়ান আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপালের আরও সময় দেওয়া উচিত ছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্য সাধন করতেই রাজ্যপাল এই তাড়াহুড়ো করেছেন।’’
সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘এনসিপির শরদ পাওয়ারকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল। তা অতিক্রম হওয়ার আগেই কীভাবে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করলেন তিনি? এটা সংবিধানের হত্যা ব্যতীত আর কিছুই নয়। ভারতীয় গণতন্ত্রের উপর তীব্র আঘাত হেনেছে মোদী সরকার। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার নীতি, নিয়ম মানছে না তারা। এর আগে জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, মণিপুর এবং আরও অনেক রাজ্যে বার বার একই ঘটনা ঘটতে দেখেছি আমরা।’’
মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা সঞ্জয় নিরপম টুইটারে লেখেন, ‘রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সিদ্ধান্ত আগেই নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতেন রাজ্যপাল। উনি নিজেই তো এনসিপিকে এই সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। তাই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অসাংবিধানিক।’
নির্বাচনী ফলাফলের পর ২০ দিন কাটতে চললেও, এখনও পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের দাবি জানাতে পারেনি কোনও রাজনৈতিক দল। তার জন্য এ দিন রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশ করেন রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি। এর পরেই বিদেশ সফর বিলম্বিত করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে বৈঠকে রাষ্ট্রপতি শাসনের পক্ষে সায় দিয়ে এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করার জন্য রাষ্ট্রপতি ভবনকে সুপারিশ করা হয়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাতে সই করে দেন সেই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। যা নিয়ে তীব্র নিন্দা শুরু হয়েছে বিরোধী দলগুলিতে।