দুর্গাপুজোকে বাংলার জাতীয় উৎসব বললে ভুল হবে না। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে দুর্গাপুজোর সময় মহামিলনের এক মহাসাগরে ডুব দেন আট থেকে আশি, সকলেই। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এই দুর্গাপুজোকেই এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজোকমিটিগুলিকে অনুদান থেকে শুরু করে পুজোর কার্নিভাল, শারদোৎসবকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব রূপে তুলে ধরতে কোনও কসুর করেননি তিনি। এবং তাতে সফলও হলেন। কারণ বাংলার দুর্গাপুজোকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিতে আগামী বছর রেড রোড কার্নিভালে অংশ নেবে ইউনেস্কো। মিলতে পারে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ উৎসবের স্বীকৃতিও।
বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাগৃহে বিশ্ববাংলা সেরা পুজো পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে নিজেই এই খুশির খবর শোনান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আগামী বছর ইউনেস্কো পুজো কার্নিভালে যোগ দিচ্ছে। ইউনেস্কো দুর্গাপুজোকে শ্রেষ্ঠ উৎসব হিসেবে নিচ্ছে। বিশ্ববাংলা কার্নিভালের কোনও জবাব হবে না। আমি এটা শুনলে খুশি হব, যেদিন সারা পৃথিবীতে সবাই বলবে, বাংলার দুর্গাপুজোই বিশ্বের সেরা উৎসব। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনেকগুলো কার্নিভাল হয়। কিন্তু আমরা চার বছরে তাক লাগিয়ে দিয়েছি। এ কথা বলতে গেলে আমার গায়ে কাঁটা দেয়। আমি বাংলাকে বিশ্বের সেরা হিসেবে দেখতে চাই।’
পাশাপাশি, গতকালের অনুষ্ঠানে নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ টেনে এনে বাংলা তথা বাঙালির গৌরবের কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। সে কথা বলতে গিয়ে নাম না-করে বিজেপিকে খোঁচা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অভিজিৎকেও অভিনন্দন জানাচ্ছি। তাঁর স্ত্রী-ও নোবেল পেয়েছেন একসঙ্গে। এ তো ডাবল সেঞ্চুরি। এর আগেও অমর্ত্য সেন নোবেল পেয়েছেন। মাদার টেরিজা পেয়েছেন। অথচ বলা হয়, কলকাতা নাকি একজনও বিজ্ঞানীকে তৈরি করতে পারে না!’
সমালোচকদের একহাত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যখন দেখি বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে উচ্ছেদ করে কেউ কোনও অবগুণ্ঠনের মধ্য দিয়ে নিজেদের গুঞ্জন গাইতে শুরু করেন, তখন খুব খারাপ লাগে। আমাদের বাংলা এরকম নয়। আমি এখনও বলি নাসা থেকে ভাষা, বাংলা ইজ দি টপ অফ দি টপ। যত বিজ্ঞানী বের করুন, আইটি কিংবা নাসাই বলুন, সব জায়গায় রয়েছে বাংলার ছেলেমেয়েরা। কিন্তু সেটাকে দেখে হিংসা করলে হবে না। হিংসা হিংসাকে আরও বর্ধিত করে। আর ভালবাসা মানুষকে অনেক বড় করে। আগামী দিনে আমি দেখতে চাই, আমাদের ছেলেমেয়েরা সারা বিশ্বের সবটাই জয় করে আনবে।’
গতকাল মুখ্যন্ত্রীর উপস্থিতিতে উদ্যোক্তাদের হাতে বিশ্ববাংলা সেরা পুজো পুরষ্কার তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী এবং সংষ্কৃতি জগতের বহু বিশিষ্ট মানুষজন। সেরার সেরা পুরষ্কারের তালিকায় জায়গা পেয়েছে নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ, বড়িশা ক্লাব, চেতলা অগ্রণী, সুরুচি সঙ্ঘ, কালীঘাট মিলন সংঘ, একডালিয়া এভারগ্রিন, শ্রীভূমি স্পোটিং, চক্রবেড়িয়া সর্বজনীন, ত্রিধারা অকালবোধন, বেহাল নতুন দল, হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীন, টালা পার্ক প্রত্যয়, আহিরিটোলা সর্বজনীন, দমদম তরুণ দল-সহ শহরের একাধিক পুজো কমিটি।
এছাড়া সেরা থিম সঙের পুরস্কার পেয়েছে নিউ আলিপুর সুরুচি সংঘ। সেরা ব্র্যান্ডিং আলিপুর সর্বজনীন। সেরা ঢাকেশ্রী বাগবাজার সর্বজনীন। সেরা পরিবেশবান্ধব পুজো সন্তোষপুর লেকপল্লি, পূর্বাঞ্চল শক্তিসংঘ। সেরা ভাবনা নলিনী সরকার স্ট্রিট। রেড রোড কার্নিভালে সেরা ট্যাবলোর জন্য পুরস্কৃত হয়েছে কলকাতা পুলিশ। পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার হাতে তার ট্রফি তুলে দেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। আগামী বছরের পুজোর প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করে দেওয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, ‘সামনের বার আরও ভাল ভাবে কী করে করা যায় ভাবতে শুরু করুন। তবে টেনশন করবেন না। রিল্যাক্স ভাবে করুন।’