বিপুল জনমত নিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেই দেশের ইতিহাস বদলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে মোদী সরকার। মাস খানেক আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল, নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এ ইতিহাসের দ্বিতীয় বর্ষের পাঠ্যসূচীতে জায়গা নিতে চলেছে জাতি গড়তে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের ভূমিকা! আর এবার ভারতের ইতিহাসের গৈরিকিকরণ করতে উদ্যোগী হলেন স্বয়ং বিজেপি সভাপতি তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিনায়ক দামোদর সাভারকরের অবদান স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভারতের ইতিহাস নতুন করে লেখার কথা বলেছেন তিনি।
‘নতুন’ ইতিহাসের চরিত্র কী রকম হওয়া উচিত, তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন শাহ। তাঁর কথায়, ‘ভারতের ইতিহাস ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে লিখতে হবে, কিন্তু কাউকে দোষারোপ করার দরকার নেই। বিতর্কে না জড়িয়ে কালজয়ী সত্যকে তুলে ধরতে হবে।’ প্রতি পদে নেহেরু-গান্ধী পরিবারকে দোষারোপ করে আসার পরে ইতিহাসচর্চায় কার প্রতি দোষারোপ এড়াতে বলা হচ্ছে? শাহ খোলসা করে বলেছেন, ‘কত দিন আর ব্রিটিশকে দোষ দেওয়া হবে?’ গতকাল বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে গুপ্ত সম্রাট স্কন্দগুপ্ত বিষয়ক দু’দিনের আলোচনাচক্র আজ উদ্বোধন করেন শাহ। সেখানেই তিনি এই নয়া ইতিহাসচর্চার কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মহারাষ্ট্র বিজেপির তরফে সাভারকরকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি উঠেছে। এ নিয়ে গতকাল শাহ বললেন, “সাভারকর না থাকলে ভারতের ছেলেমেয়েরা ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহকে ‘ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম’ বলে জানত না। বরং ব্রিটিশদের চোখ দিয়ে স্রেফ বিদ্রোহ বলেই পড়ত।” সাভারকর যে ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের আখ্যা দিয়েছিলেন, এ তথ্য ইতিহাসে অস্বীকৃত নয়। ফলে অমিত নতুন কী বললেন আর কেনই বা নতুন ইতিহাস লেখার ডাক দিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক শিবিরে, শিক্ষা জগতেও।
প্রশ্ন উঠছে, মহাবিদ্রোহকে যদি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে পড়তে হয়, তা হলে ব্রিটিশকে দোষ না দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে কেন? সে কি সাভারকর পরে ব্রিটিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি আদায় করেছিলেন বলে? এমনও প্রশ্ন উঠেছে যে, এত দিন পরে ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইতিহাস লেখার কথা বলার অর্থ কী? এত দিন কি ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইতিহাস লেখা হয়নি? এ প্রসঙ্গে ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘বোঝাই যাচ্ছে সাভারকরকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভারসাম্য তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। এক দিকে বলা হচ্ছে ব্রিটিশদের বেশি কটূক্তি না করলেও চলবে। অন্য দিকে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে।’